Photo : RHS Photography

ক্লাব ফুটবলে অলিখিত একটা প্রবাদ আছে রিয়াল মাদ্রিদকে যদি আপনি থামিয়ে না দেন, তাহলে রিয়াল মাদ্রিদ আপনাকে শেষ করে দিবে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের ক্ষেত্রেও একই কথাটা বলা যেতে পারে। অবশেষে এএফসি চ্যালেঞ্জ লীগের তিক্ত স্মৃতিটা চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে ভুলার চেষ্টা করতে পারবে বসুন্ধরা কিংস। নিজেদের দুর্গ কিংস অ্যারেনাতে মোহামেডানের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ কাপে মাঠে নেমেছিলো গত মৌসুমের ঘরোয়া ট্রেবল জয়ীরা। ম্যাচের পিছিয়ে পড়েও আশা হারায় নি কিংস, ঠিক ম্যাচ বের করে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয় কিংসের খেলোয়াড়েরা। মিগুয়েল দামাসেনার একক নৈপুণ্য এবং তপু-ফাহিমের ব্রেকথ্রু থেকে ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে তিতার দল।

ম্যাচের শুরুতে কিংস থেকে এগিয়ে থাকে মোহামেডান। এএফসি চ্যালেঞ্জ লীগের পরাজয়ের রেশ যেনো কাটাতেই পারছিলো না বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। প্রতিপক্ষের মধ্যে থাকা এই ঘাটতিটারই সুযোগ নেয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। কিংস যখন নিজেদের ছন্দ পেতে ভুগছিলো, বিপরীতে মোহামেডান মধ্যমাঠে নিজেদের দখল টিকিয়ে রেখে ম্যাচে আধিপত্য টিকিয়ে রাখছিলো।

কিংস একাদশে সবচেয়ে নিষ্প্রভ ছিলো তপু বর্মন। জাতীয় দল কিংবা বসুন্ধরা কিংস কোনো জায়গায় যেনো পুরোনো নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না এই ডিফেন্ডার। এই তপুর ভুলেই ম্যাচে গোল পেতে বেশী সময় খরচ করেনি মোহামেডান। ম্যাচের মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় তপু বর্মনের ক্লিয়ারেন্স ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে মাঠে ডানদিক থেকে দারুন এক ক্রস করেন মোহামেডানের ইমানুয়েল সানডে, সানডের ক্রস থেকে হেডে বল জালে পাঠিয়ে মোহামেডানের প্রাণভোমরা সোলেমান দিয়াবাতে।

২৪ মিনিটে লিড বাড়াতে পারতো মোহামেডান। তবে রহিমউদ্দিনের ক্রস থেকে আরিফ হেডে বল কানেক্ট করতে না পারায় গোল মোহামেডানের গোল প্রাপ্তি ঘটে নি। গোল হজমের পর থেকে নিজেদের গুছিয়ে নিতে চেষ্টা চালায় বসুন্ধরা কিংস। তবে মাঠে নিজেদের প্রতিটা ভাগে খেই ধরতে পারছিলো না তারা। মাঝেমধ্যে মোহামেডানের রক্ষণে হানা দেওয়াই ছিলো কিংসের সাফল্য। তবে তা ওই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলো, গোল পাওয়া হয়ে উঠে নি ভ্যালেরিও তিতার শিষ্যরা। ফলে ১-০ ব্যবধানে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

গোল শোধের প্রত্যয় নিয়ে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামে বসুন্ধরা কিংস। তবে প্রথমার্ধের মতো ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ ছিলো কিংসের আক্রমণ। বারকয়েক গোলবারকে টার্গেট করে শট নিলেও বল পোস্টের আশেপাশেও ছিলো না। এরই মাঝে ম্যাচের ৬০ মিনিটের পরই গ্যালারি থেকে অতর্কিত ভাবে মাঠের মধ্যে ফ্লেয়ার নিক্ষেপ করা হয়। এতে করে বেশ অনেকক্ষণ খেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেফারি বীরেন্দ্র রাই। ফ্লেয়ারের রেশ কেটে গেলে ম্যাচ আবারো মাঠে গড়ায়।

৭৪ মিনিটে নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন তপু বর্মন। তপুর ভুলেই গোল হজম করেছিলো কিংস এবং তার গোলেই সমতায় ফিরে তার দল। কিংসের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল দামাসেনার কর্ণার কিক একেবারে ফাঁকায় থাকা তপু বর্মন পায়ের আলতো টাকায় গোল আদায় করে নেন।

৮১ মিনিটে ম্যাচে মোহামেডানকে পুরোপুরি চুপ করিয়ে দেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। মাঠের ডানপ্রান্ত থেকে মিগুয়েল দামাসেনা ফাহিমকে উদ্দেশ্য করে ক্রস করেন। পুরো ম্যাচ জুড়ে রিয়াদুল হাসান রাফি ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে আটকে রাখতে পারলেও এবার আর তা করতে পারেননি। রাফির বাধা ভেঙ্গে বেরিয়ে মিগুয়েলের ক্রস থেকে সোজা বলকে জালে প্রবেশ করিয়ে ছাড়েন তিনি। ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় কিংস।

এরপরের গল্পটা শুধু মিগুয়েল দামাসেনার। ম্যাচের যোগ করা সময়ের ৭ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ব্যবধান বাড়ান এই ব্রাজিলিয়ান। বল পেয়ে মোহামেডানের ডিফেন্ডার দীপুকে কাটিয়ে নিজেই বক্সের ভিতরে ঢুকে জায়গা বের করে বামপায়ে শটে লক্ষ্যভেদ করতে সফল হন মিগুয়েল।

ব্যবধান আরো বাড়াতে পারতো কিংস। ইঞ্জুরির টাইমের শেষ মিনিটে মিগুয়েল দামাসেনা দৃষ্টিনন্দন গোলমুখে শট যদি ক্রসবারে বাধা না পড়তো, তাহলে হয়তো চতুর্থ গোলের দেখাটাও পেয়ে যেতে পারতো বসুন্ধরা কিংস। তবে তাতে কিংসের জয়ে তেমন একটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে জয় দিয়ে মৌসুমের শুরুটা করে বসুন্ধরা কিংস।

Previous articleচ্যালেঞ্জ কাপে তিন বিদেশী রেফারি!
Next articleকবে শেষ হবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here