অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে ফাইনাল খেলার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে গিয়েছিল যুবারা। সেই লক্ষ্য পূরণের স্বস্তি নিয়ে দেশে ফিরলেও, ট্রফি নিয়ে ফেরা হচ্ছেনা পল স্মলির শিষ্যদের। ভারতের ওড়িশা রাজ্যের কালিঙ্গা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের কাছে ৫-২ গোলে হেরেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ভারত নয়, এক গুরকিরাত সিংয়ের কাছেই উড়ে গিয়েছে যুব টাইগারদের শিরোপার স্বপ্ন। ভারতীয় এই ফরোয়ার্ড একাই করেছেন ৪ গোল। বাংলাদেশের হয়ে রাজন তালুকদার ও শাহিন মিয়া গোল করে দলকে ম্যাচে রাখার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত সময়ে আর স্বাগতিকদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। ফলে বড় হারে যুব সাফের এই আসর থেকে রানার্স আপ হয়েই ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
লিগ পর্বে অপরাজিত থাকা বাংলাদেশ ফাইনালে এসেই পথ হারায়। ম্যাচের সময় তখন মাত্র ২ মিনিট, ভারতীয় ফরোয়ার্ড হিমাংশু ঝাংড়ার দূরপাল্লার শট বাংলাদেশ গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফ ঠেকিয়ে দিলেও গ্লাভসে জমাতে পারেন নি। বক্সের ভেতর থাকা বলের দিকে ছুটে আসেন আরেক ফরোয়ার্ড গুরকিরাত সিং। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভারতীয় ফরোয়ার্ডকে বক্সের ভেতরই ফাউল করে বসেন আসিফ। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে ভারতকে এগিয়ে নেন গুরকিরাত সিং। গোল হজম করার পর জেগে ওঠে বাংলাদেশ। ২৬তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে রফিকুলের নিচু ক্রস বক্সে পিয়াস আহমেদ নোভার পায়ে যাওয়ার আগেই স্লাইডিং ট্যাকেলে প্রতিহত করেন ভারতীয় অধিনায়ক হ্যালেন। এরপর ৩৪তম মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে সতীর্থের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন গুরকিরাত। তবে গোলরক্ষককে একা পেয়েও তার নেওয়া কোনাকুনি শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। ৪৫তম মিনিটে রফিকুলের বাড়ানো বল ভারতীয় ডিফেন্ডারদের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে খুঁজে নেয় রাজনকে। আর বক্সের সামান্য ভেতরে বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন রাজন।
বিরতি থেকে ফিরে ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। ৪৮তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে ইমরানের বাড়ানো বল গিয়ে পড়ে ভারতের বক্সে, স্বাগতিকদের এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করার চেষ্টা করলে ফরোয়ার্ড পিয়াস আহমেদ নোভার করেন ব্যাক হেড। আর তার ব্যাক হেড থেকে পাওয়া বলে বা পায়ের জোরালো শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ডিফেন্ডার শাহিন মিয়া। অবশ্য লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ৬০তম মিনিটে সমতায় ফেরে ভারত। ডি বক্সের সামনে থেকে গুরকিরাত সিংয়ের বুলেট গতির শট বাংলাদেশের জালে জড়ায়। ৬৭তম মিনিটে হিমাংশুর শট মোহাম্মদ আসিফ ফিরিয়ে দেওয়ার পরও জালের দিকেই যাচ্ছিল, কিন্তু ডিফেন্ডার অনন্তর গোললাইন ক্লিয়ারেন্সে বেচেঁ যায় বাংলাদেশ। এরপর নির্ধারিত নব্বই মিনিট ২-২ সমতায় শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে।
আর এই ৩০ মিনিটই যেনো বাংলাদেশের জন্য এই আসরের সবচেয়ে বাজে সময়। অতিরিক্ত সময়ের ২ মিনিটের মাথায় হিমাংশুর গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। পরের মিনিটেই হ্যাটট্রিক পূরণ করে ব্যবধান ৪-২ করে ফেলেন গুরকিরাত সিং। এরপর আরও বিধ্বংসী ভারত। ৯৯ মিনিটে বক্সের প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ের শটে চোখ ধাঁধানো গোল করেন গুরকিরাত। এই ম্যাচে চার গোলসহ টুর্নামেন্টে মোট আট গোল ভারতীয় এই ফরোয়ার্ডের। ম্যাচের বাকি সময়ে আর গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের কাছে ফাইনাল হারের পর সেই ভারতের কাছেই আরো একটি ফাইনাল হারের হতাশা সঙ্গী হয় নোভা-মিরাজুলদের।