বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। তবে এই মৌসুমে যেন সে বিতর্ক আরো বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে যেমন চলেছে তুমুল সমালোচনা তেমনি ফুটবলার এবং কর্মকর্তাদের মন্তব্য ও আচরণে রেফারিরাও হয়েছেন ক্ষুব্ধ। এর সমাধান করতে গিয়ে দেখা যায় রেফারিদেরই অভিযোগের পাহাড় জমে আছে। তাঁদের অনেক টাকা বকেয়া, যে সম্মানী পান তা যথেষ্ট সম্মানজনক নয়। এছাড়াও রেফারিরা তুলে ধরেছিলেন আরো বেশ কিছু অব্যবস্থাপনা। বাফুফে তাৎক্ষণিক বকেয়ার একটা বড় অংশ পরিশোধ করে, কিন্তু রেফারিদের সম্মানী বাড়ানোর বিষয়টি ঝুলেই ছিল। অবশেষে সিদ্ধান্ত আসতে চলেছে বাফুফে থেকে।
গত ৫ জুন ১০ কর্মদিবসের মধ্যে রেফারিদের সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার করেছিল বাফুফে। এর প্রেক্ষিতে অষ্টম কর্ম দিবসে বাফুফের রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও বাংলাদেশ রেফারিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি বীর বাহাদুর এক বৈঠক করেন। সেখানে রেফারিদের আন্দোলনের মধ্যেই ম্যাচ ফি সহ যাবতীয় সুবিধাদি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রেফারিদের ২৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫০০, সহকারী রেফারিদের ২২০০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা, চতুর্থ রেফারিদের ১৮০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে সেই হার আরো একটু কম। রেফারি ৭০০, সহকারি ৫০০ ও চতুর্থ রেফারি ৩০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। সম্মানী বাড়ানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যাতায়াত ভাতা ১০% বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। দৈনিক ভাতা ঢাকার মধ্যে বাড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগে ১৪০০ থেকে ১৫০০ , চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকার প্রস্তাব হয়েছে। ঢাকার রেফারিরা ঢাকার বাইরে গিয়ে এবং ঢাকার বাইরের রেফারিরা ঢাকায় এসে রেফারিং করলে দৈনিক ভাতা বাড়িয়ে ১৫০০ করা হচ্ছে। যা আগে ছিল ৫০০ টাকা।
মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে রেফারিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে বাফুফের রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এমপি, বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ, রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান হাজী ইব্রাহিম নেসার, বাংলাদেশ ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি এবং বাফুফে হেড অব রেফারি আজাদ রহমান। সভা শেষে পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান, রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘তাদের ছোট-বড় যা দাবি ছিল, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাইনি। অনানুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য অনেকে যোগাযোগ করেছে। তাদের দাবিগুলো অতি শিগগিরিই পূরণ করা হবে।’
ফুটবল পরিচালনায় স্বচ্ছ থাকতে চান রেফারিরাও। ভাল খেলোয়াড় তৈরিতেও প্রয়োজন ভাল রেফারিং। শিগগিরই তাদের পাওনা ও তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছতে চায় বাফুফে।