আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল সবশেষ খেলেছিল গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর। প্রায় ৯ মাস পর আবারো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরার ম্যাচে আজ বাঘিনীদের প্রতিপক্ষ ছিলো র্যাংকিংয়ে ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়া। এই মালয়েশিয়ার পুরুষ দলের কাছে কয়েকদিন আগেই এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে ৪-১ গোলে বিদ্ধস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মেয়েদের বেলায় গল্পটা সম্পূর্ন আলাদা। কমলাপুরে মালয়েশিয়ার জালে গুনে গুনে আধ ডজন গোল দিয়েছে গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। আর এই জয়ে বাংলাদেশ আবারো প্রমাণ করলো র্যাংকিংয়ে ১৪৫তম স্থানে থাকার মত দল নয় বাংলাদেশ, বরং নিয়মিত খেলার মধ্যে থাকলে হয়তো মালয়েশিয়ারও ওপরে থাকতে পারতো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে মালয়েশিয়াকে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। ম্যাচ শুরুর প্রথম মিনিট থেকেই মালয়েশিয়ার রক্ষণে হানা দেয় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে মনিকা চাকমা বাড়ান সিরাত জাহান স্বপ্নাকে, তবে স্বপ্নার কাট ব্যাক থেকে সানজিদার নেয়া শট আটকে দেন প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। এরপর ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই গোলের সহজ সুযোগ মিস করেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। সানজিদার ক্রসে গোলমুখ থেকেও বারের ওপর দিয়ে বল মারেন সাবিনা। তবে গোলের জন্য ৯ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। মারিয়া মান্দার কর্নার থেকে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের ভুলে বল পেয়ে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। দ্বাদশ মিনিটে থ্রো ইনের পর প্রতিপক্ষের ভুল পাসে বল পেয়ে যায় বক্সে ফাঁকায় থাকা সানজিদা। তাড়াহুড়ো করে ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে ব্যবধান দ্বিগুণের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। ছয় মিনিট পর সতীর্থের পাসে সানজিদার কোনাকুনি শট আটকান গোলরক্ষক, তার ফিরতি শটও যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে।
২৬তম মিনিটে সাবিনার দারুণ গোলে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। ডান প্রান্ত থেকে স্বপ্নার পাস ধরে গোলরক্ষককে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নেন সাবিনা খাতুন। এর কিছুক্ষণ পরেই আবারো স্কোর শিটে নাম তুলেন আঁখি। সাবিনার লম্ব পাসে দুর্দান্ত প্লেসিং শটে গোল করেন এই ডিফেন্ডার। ৪২তম মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে সাবিনার শট ক্রসবারে না লাগলে ব্যবধান বাড়াতে পারত বাংলাদেশ। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগেই মালয়েশিয়ার জালে চতুর্থ বার বল পাঠায় বাংলাদেশ। মাসুরার লম্বা বল অফসাইড ফাঁদ ভেঙে অপর প্রান্তে থাকা স্বপ্নার দিকে ঠেলে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফাঁকায় থাকা সিরাত জাহান স্বপ্না আলতো টোকায় বল জালে পাঠান। ফলে ৪-০ এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
বিরতি থেকে ফিরেও আধিপত্য বজায় রাখে মেয়েরা। আক্রমণের ধারা বজায় রেখে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে বাংলাদেশ। সে তুলনায় মালয়েশিয়া পারেনি তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে। ৬৬তম মিনিটে পাঁচ নাম্বার গোলের দেখা পায় গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। বক্সের ভিতরে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার টানা দুবারের শট ব্লক হয়। তারপরও তৃতীয় চেষ্টায় ঠিকই নিশানা খুঁজে মনিকা। এরপর ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে দলের হয়ে আধ ডজন পূরণ করেন পুরো ম্যাচে দারুন খেলতে থাকা ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রাণী সরকার। ঋতুপর্ণা চাকমার ক্রসে হেডে গোল করে মালয়েশিয়াকে বড় হারের স্বাদ নিশ্চিত করেন কৃষ্ণা।
প্রথম প্রীতি ম্যাচ বড় জয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তন করা বাংলাদেশ নিশ্চয়ই দ্বিতীয় ম্যাচে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামবে। ফলে আগামী ২৬শে জুন আরো একটা দুর্বিষহ দিন যে অপেক্ষা করছে মালয়েশিয়ার মেয়েদের জন্য সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।