দুপুর তিনটা! অনেক কিশোর হয়তো ঘুমিয়ে বা মোবাইলে গেমস খেলেই কাটাচ্ছে। তবে ফুটবল প্রেমী বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একই সময়ে কিছু কিশোর বুট-মোজা-জার্সি নিয়ে পথ ধরেছে মাঠে যাওয়ার। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশের দক্ষিণের ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার কিশোররাও। ছাগলনাইয়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে উপস্থিত প্রায় ৬০-৭০ জন ফুটবলার। আজকে একাডেমিনামায় প্রথমপর্বে বলবো ছাগলনাইয়া ফুটবল একাডেমির অগ্রযাত্রার গল্প-
সময়টা ১৯৫৬; তখনও স্বাধীন হয়নি বাংলাদেশ। তবে গোটা উপমহাদেশ জুড়েই ছিলো ফুটবলের প্রতি আবেগ-ভালোবাসা। ঐ বছরই প্রতিষ্ঠিত হয় ছাগলনাইয়া ক্লাব। তখন থেকেই ফেনী জেলার ফুটবলার তৈরির কারখানা হয়ে উঠে ক্লাবটি। এখান থেকে ফুটবলের হাতেখড়ি শিখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খেলা শুরু করে ফেনী জেলা তথা ছাগলনাইয়া’র ফুটবলাররা।
একাডেমি ছেড়ে ক্লাবের কথা কেন বলছি এটা ভাবছেন তো? কারণ ছাগলনাইয়া ফুটবল একাডেমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে ২০১৭ সালে। তার আগ পর্যন্ত ছাগলনাইয়া ক্লাবের অধীনেই প্র্যাকটিস করতো স্থানীয় খেলোয়াড়রা। আগে থেকেই খেলোয়াড় তৈরির কার্যক্রম একই ছিলো তাদের। শুধুমাত্র একাডেমিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতেই একই কর্মকর্তারা আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠানের নাম দেয় ছাগলনাইয়া ফুটবল একাডেমি।
একাডেমি সব দিক দেখাশোনা করেন সভাপতি আফসারুল হাই উজ্জ্বল । খেলোয়াড়দের সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেন তিনি। একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হকের রয়েছে বড় স্বপ্ন, আবাসিক একাডেমি করে খেলোয়াড়দের জাতীয় পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করতে চান তিনি, ‘ছাগলনাইয়া ক্লাব অনেক পুরোনো হলেও একাডেমিকভাবে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা বেশিদিন হয়নি। আমাদের স্বপ্ন রয়েছে আমরা আবাসিকভাবে খেলোয়াড়দের রেখে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার তাদের ফুটবল শেখাবো। এতে করে তারা জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রথম থেকেই প্রস্তুত হতে পারবে।’
বিভাগ
শুরু থেকেই একাডেমি দুটি বিভাগে প্র্যাকটিস করিয়ে আসছে। অনুর্ধ্ব ১২ এবং অনুর্ধ্ব ১৬। একই সময়ে আলাদা কোচের অধীনে ছাগলনাইয়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের দুই প্রান্তে ফুটবলার হওয়ার দীক্ষা নেয় তারা।
খেলোয়াড় সংখ্যা
অনুর্ধ্ব ১২ বিভাগে প্রায় ৩০ জন নিয়মিত অনুশীলনে অংশ নেয়। অনুর্ধ্ব ১৬ বিভাগে নিয়মিত ২০ জন খেলোয়াড় মাঠে আসে নিজেদের ফুটবলার হিসেবে তৈরি করতে।
অনুশীলন প্রক্রিয়া
দুপুর তিনটা থেকে দুই বিভাগের ফুটবলাররা একাডেমিক অনুশীলন শুরু করেন। কোচদের অধীনে ওয়ার্ম আপ, স্কিল ট্রেনিং করে। বিকেল ৫ টায় মাঠে আসে ছাগলনাইয়া ক্লাবের সিনিয়র ফুটবলাররা, যারা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ সহ বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ে খেলে এসেছে। অনুশীলন শেষে সিনিয়দের সাথে দুই ভাগ হয়ে একটি ম্যাচে অংশ নেয় প্রশিক্ষণ নিতে আসা ফুটবলাররা। এতে সিনিয়রদের থেকে তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা এবং জাতীয় পর্যায়ে খেলার মান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারে তারা।
অনুশীলন সেশন
প্রতি সপ্তাহে ৬ দিন অনুশীলন হয় একাডেমির। প্রতিদিন আলাদা আলাদা ড্রিল নিয়ে কাজ করে করেন কোচরা। প্রতি সপ্তাহের জন্য আলাদা অনুশীলন প্রক্রিয়া সাজান তারা, যা সপ্তাহ শেষে আবার পরিবর্তন হয়।
কোচ
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ খেলা সাইদুল হক ও সৈকত ভৌমিকের তত্ত্বাবধানেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ফুটবলাররা। আসন্ন বাফুফে গ্রাসরুট কোচিং সার্টিফিকেটের প্রক্রিয়ায় অংশ নিবে একাডেমির কোচরা।
জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়
ছাগলনাইয়া ক্লাব থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আব্দুল বাতেন কোমল। এছাড়া নিয়মিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে অংশগ্রহন করছেন সাইদুল হক ও সৈকত ভৌমিক। মূলত এই তিনজনই চান তারা যেসকল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে এতোদূর আসতে হয়েছে তা যাতে বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়দের হতে না হয়। এইজন্যই তারা প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে নতুন খেলোয়াড়দের উঠে আসতে সহযোগীতা করছে।
একাডেমির খেলোয়াড়রাও জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের প্রমান করে চলেছে। ইতিমধ্যে ছাগলনাইয়া ফুটবল একাডেমি থেকে দুজন খেলোয়াড় সিলেট বিকেএসপি’তে উন্নত প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য সুযোগ পেয়েছে। ২০১৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অনুর্ধ্ব ১৫ চ্যাম্পিয়নশীপে ফেনী জেলা হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিনিধী হয়ে জাতীয় পর্যায়ে ফাইনাল খেলেছে ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এই দলে ৫ জন খেলোয়াড় ছাগলনাইয়া একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েই ফুটবল খেলছে। সর্বশেষ পাইওনিয়ার লীগে ফেনী স্পোর্টস একাডেমির হয়ে অংশ নেয় ছাগলনাইয়া একাডেমির খেলোয়াড়রা। এতে তারা টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলার কৃতিত্ব অর্জন করে।