এহসান ফারুকী: আবাহনীর ইরানিয়ান ডিফেন্ডার মিলাদ শেখের হেড থেকে ডি-বক্সের ভিতরে থাকা ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ডরিয়েল্টনের জন্য বানানো সেট-আপ। সেখান থেকে ডরিয়েল্টন সেকেন্ড টাচেই ডান-দিকে নিয়ে নিলেন শট, সামনে থাকা বসুন্ধরা কিংসের ৩ ডিফেন্ডার এবং গোলকিপার জিকোর যেনো আর কিছুই করার ছিলো না। আর সেই গোলেই ৩-০ গোলে লিড নিয়ে নেয় আকাশী-নীলরা। ডাগআউটের সীমানা ছাড়িয়ে আবাহনী কোচ মারিও লেমোসকে মাঠেই সেলিব্রেশন করতে দেখা যায়।
শেষবার কবে মারিও লেমোসকে এত খুশী দেখা গিয়েছিলো? মনেহয় এএফসি কাপের সেই যাত্রার সময় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এমন খুশী দেখা গিয়েছিলো তাকে৷ মাঝে ৩৭ মাস ট্রফি বিহীন ছিলো দেশের ফুটবলের সবচেয়ে সফলতম ক্লাবটি। মারিও লেমোসের তত্ত্বাবধানে ট্রফি না আসলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষ ঠিকই তার উপর আরও এক মৌসুমের জন্য আস্থা রেখে খেলোয়াড় বাছাই শুরু করে নতুন মৌসুমের জন্য। আবাহনীর ঘরের চিরচেনা ওয়ালী ফয়সাল, মামুনুল, রায়হান, নাসিরদেরকে বিদায়ের পাশাপাশি সানডে- বেলফোর্টকেও বিদায় জানায় ক্লাব। সেই সাথে হারায় দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই ফুটবলার সাদ উদ্দিন ও সোহেল রানা এবং তরুনদের মাঝে দীপক রায়কে। তবু ও চেয়ারম্যান, ডিরেক্টর ইন চার্জ, ম্যানেজার, কোচের সমন্বয়ে গত ২-৩ মৌসুমের সবচেয়ে গোছানো এবং পরিপূর্ণ দল করেছে আবাহনী; সমর্থকেরা এটাই দাবী করেছে।
চিরচেনা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা হলে যেনো আবাহনী গ্যালারি থেকে শোনা যেতো ‘আবাহনী- আবাহনী’ চিৎকার। ভেন্যুর সংস্কার কাজ হওয়ায় তা বদলালেও সমর্থকেরা তো আর বদলায় না! কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের একপাশের গ্যালারি থেকে ম্যাচের শুরু থেকেই ভেসে আসছিলো ‘আবাহনী – আবাহনী’ নামটা। ম্যাচের শুরু থেকেই বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে অন্যরকম এক বার্তা দিচ্ছিলো আবাহনী; যদি ও প্রথম হাফে ছিলো গোলশূন্য। তবে বিরতির পরই মারিও লেমোসের পাঠশালার ছেলেদের বাজিমাত। বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়কে প্রেস করে ডুয়েল লড়াইয়ে মাঝমাঠে ইমন বাবু জয়ী; সেখান থেকে আগুস্তোর পায়ে বল আর তার ডিফেন্সচেরা পাস থেকে ভুল করেননি রাকিব হোসেন। ফার্স্ট টাচে বল কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা এবং সেকেন্ড টাচে আলতো করে ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং। রাকিবের জন্য যে শুধু ফাইনালেই গোল এটা তাও নয়, আবাহনীর জার্সিতে রাকিবের প্রথম গোলও বটে। এবং রাকিবের প্রথম শিরোপাও এই স্বাধীনতা কাপের ট্রফিখানা। ১-০ গোলের লিড নেয়া আবাহনী আরও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে, সেখান থেকেই বসুন্ধরা কিংসের সাবেক ফুটবলার কলিন্ড্রেস আদায় করে নেয় পেনাল্টি। সেই পেনাল্টি থেকে ভুল করেননি ডরিয়েল্টন, যিনি ম্যাচে জোড়া গোল করে মাত্র ২ ম্যাচে ৪ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরষ্কারও জিতে নেন।
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে শিরোপা উৎসবে মেতে উঠে আবাহনীর কোচিং স্টাফ, খেলোয়াড়েরা এবং সমর্থকেরা। হাতে আবাহনীর পতাকা নিয়ে কোচ মারিও লেমোসতো দর্শকদের কাছেই ছুটে যান, ফুটবলাররা তাকে কাঁধে তুলে নেন, গ্যালারির কাটা তাড় বেয়ে দর্শকের আরো কাছে চলে যায় মারিও লেমোস নিজেই। সেখানে দর্শকদের সেলফি তোলার আবদারও মিটাতে হয় তাকে৷
আর যাই হোক, এবারের দল নিয়ে আবাহনী সমর্থকেরা অন্ততপক্ষে খুশী। এবার ফলাফল যাই আসুক৷ মারিও লেমোস তো নিশ্চিত করেই খুশী হবেন প্রথম শিরোপার স্বাদ বলে কথা।