বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। তবে এই মৌসুমে যেন সে বিতর্ক আরো বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে যেমন তুমুল সমালোচনা তেমনি ফুটবলার এবং কর্মকর্তাদের মন্তব্য ও আচরণে রেফারিরাও ক্ষুব্ধ। সব মিলিয়ে দেশের ফুটবল পরিচালনা নিয়েই যেন মহা সংকটে পড়েছে বাফুফে।
মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় রাউন্ডের খেলায় শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের বিপক্ষে ১–০ গোলে হারে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচটির মীমাংসা করে দেওয়া একমাত্র গোলটি এসেছিল একটি বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে। সেই ম্যাচে ম্যাচ চলাকালে পেনাল্টির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সাইফের খেলোয়াড়েরা। ম্যাচ শেষে পেনাল্টির নিন্দা জানিয়ে রেফারিকে ঘিরে ধরেছিলেন ক্লাবটির বেশ কিছু খেলোয়াড়। সেখানে অন্যান্য ফুটবলারদের মতোই বেশ উত্তেজিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দল ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। পরে ম্যাচ শেষে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া রেফারিকে লাথি মেরেছেন কিন্তু রেফারি সরে যাওয়ায় সেটা সহকারী রেফারির গায়ে লাগে, এ অভিযোগ ম্যাচের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে জমা দেন রেফারি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাইফকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় বাফুফে।
লাথি মারার অভিযোগের ভিত্তিতে জামাল বলেন, ‘রেফারিকে লাথি মারিনি। স্পর্শও করিনি তাঁকে। আমি যদি সেটা করতাম, তাহলে তো তিনি আমাকে কার্ড দেখাতেন। এমন কিছু হয়নি বলেই তো সে আমাকে কার্ড দেখায়নি।’ জামাল ভূঁইয়ার সহকারী রেফারিকে শারীরিক আঘাত করার অভিযোগটি এখন ফরেনসিক বিভাগে তদন্তাধীন। এর মধ্যে কয়েকজন রেফারি এক হয়ে দাবি তুলেছেন জামাল ভূঁইয়া এক সাক্ষাতকারে রেফারিকে মিথ্যেবাদী বলে মন্তব্য করেছে; এজন্য জামাল ভূঁইয়া দুঃখ প্রকাশ না করলে রেফারিরা জামাল ভূঁইয়ার দলের ম্যাচে বাঁশি বাজাবেন না।
মঙ্গলবার রাজশাহীতে সাইফ স্পোর্টিং ও স্বাধীনতা সংঘের মধ্যে ম্যাচ। রাজশাহী ভেন্যু দূরত্ব হওয়ায় দুই দিন আগে রেফারি নির্বাচন হয় ও এক দিন আগে রেফারি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হন৷ আগামীকাল ম্যাচের জন্য নির্বাচিত সবাই রাজশাহীর ম্যাচ পরিচালনা করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। ফলে এখন অন্য রেফারি খুঁজতে হচ্ছে বাফুফেকে। শীর্ষ পর্যায়ের রেফারিরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে নিচের স্তরের রেফারি দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা ছাড়া উপায় থাকবে না বাফুফের। গতকাল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের রেফারিদের নিয়ে এক জুম সভা হয়। সেই সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পর জামাল ভূঁইয়ার বিষয়টিও উত্থাপিত হয়। রেফারিরা এই বিষয়ে অনড় থাকায় পরবর্তীতে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক কিছুক্ষণ পর পৃথক জুম সভায় যোগ দেন।সেখানে রেফারিরা জামাল ভূঁইয়ার আচরণ ছাড়াও বাফুফে সভাপতির রেফারিদের নিয়ে করা মন্তব্যের ব্যাপারেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক, রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান, হেড অফ রেফারিজ সভাপতির বক্তব্যের ব্যাপারে তাদেরকে ব্যাখ্যা দেন। সেই ব্যাখ্যা অবশ্য রেফারিরা সন্তোষ হতে পারেননি।
পরে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বিদেশি রেফারি এনে লিগ পরিচালনা করার কথা জানালে সে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান রেফারিরা। কিন্তু তার আগে সকল বকেয়া পরিশোধ করে তারপর বিদেশি রেফারি আনার কথা বলেন। সব মিলিয়ে যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ পরিচালনা নিয়েই বেশ ঝামেলার মধ্যে আছে বাফুফে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। যার ফলে ম্যাচের ২৬ ঘন্টা আগে রেফারি ঠিক করা নিয়ে আবার আলোচনায় বসতে হচ্ছে ফেডারেশনকে। আগামীকাল রাজশাহীতে জামালদের ম্যাচ শীর্ষ রেফারিরাই করবেন নাকি নিচের স্তরের রেফারিরা সেটাই দেখার বিষয়। আর দেশের সর্বোচ্চ স্তরের লিগ নিচের স্তরের রেফারিদের দিয়ে পরিচালনা করলে সেটা কতোটা সমীচীন হবে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।