বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই যেনো উত্তেজনা। সাম্প্রতিক সময়ে হোক ক্রিকেট কিংবা ফুটবল বা অন্য কোন খেলা, দুই প্রতিবেশী দেশের ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা আর দুপক্ষের সমর্ধ্যকদের কথার লড়াই। যার থেকে বাদ যায়নি দুইদেশের ক্লাবের লড়াইও। এ যেন গঙ্গা ও পদ্মার লড়াই। তাইতো এএফসি কাপের গ্রুপ ‘ডি’ তে বসুন্ধরা কিংস বনাম এটিকে মোহনবাগান ম্যাচ দুই দেশের ফুটবল অঙ্গনে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। দারুন এক উপভোগ্য ম্যাচের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই।
গত ১৯ এপ্রিল কলকাতার এই সল্ট লেক স্টেডিয়ামেই এএফসি কাপের প্লে-অফ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই বাংলার দুই জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব আবাহনী ও মোহনবাগান। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী সে ম্যাচে পেরে ওঠেনি স্বাগতিকদের সঙ্গে। প্রায় ১ মাস পর সেই মাঠেই শনিবার দুই বাংলার আরেকটি ফুটবল লড়াই। এবার ভারতের মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস।
এরই মধ্যে মালদ্বীপের মাজিয়াকে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে বসুন্ধরা কিংস। অপরদিকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে এটিকে মোহনবাগান! এছাড়া ইনজুরি সমস্যা চিন্তার ভাঁজ ফেলছে ফেরান্দোর কপালে। প্রথম ম্যাচে গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে এসিএল ইনজুরিতে পরে দলের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরি মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। ইনজুরিতে এটিকে মোহনবাগানের আরেক নির্ভরযোগ্য ফুটবলার হুগো বুমোসের খেলাও প্রায় অনিশ্চিত। এছাড়াও এটিকে মোহনবাগানের আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ভুগছেন ইনজুরিতে। তাইতো বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে পূর্ণ শক্তির স্কোয়াড পাচ্ছেন না ফেরান্দো।
তারপরও বসুন্ধরার বিপক্ষে এটিকে মোহনবাগানের বড় ভরসার নাম ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার জনি কাউকো। এছাড়া দুই ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামস হতে পারেন বসুন্ধরার রক্ষণের জন্য দুশ্চিন্তার বড় কারণ। ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে তরুণ উইঙ্গার লিস্টন কোলাচোর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আস্থা যোগাবে মোহনবাগান সমর্থকদের। এছাড়া মানবীর সিং, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, অমৃন্দর সিংদের থেকে সেরাটা পাওয়ার প্রত্যাশা এটিকে মোহনবাগান কোচের। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে জুয়ান ফেরান্দো বলেন, “বসুন্ধরা কিংসে বেশ ভালো কয়েকটা ফুটবলার আছে। তবে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে আমাদের জয় ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আমাদের দলে কিছু ইনজুরি সমস্যা আছে, সেটা ভাবনার কারন। তবে যারা খেলবে তাদের উপর আমার আস্থা আছে।”
অপরদিকে বসুন্ধরা কিংস রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। তবে প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও প্রতিপক্ষের ওপর সেই অর্থে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি অস্কার বাহিনী। যার মূল কারণ হতে পারে অধিনায়ক রবসন রবিনহোকে তার চিরচেনা ছন্দে না দেখা না যাওয়া। তাইতো বসুন্ধরার দিক থেকে রবসনের ফর্মে ফেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় রবসন রবিনহোর ফর্মে ফেরা শুধু সময়ের ব্যাপারই বলা যায়। চলতি বিপিএলে ১১ গোল এবং ৯ এসিস্ট করা রবসন তাইতো কেড়ে নিতে পারেন ম্যাচের সব আলো। এছাড়া আরেক ব্রাজিলিয়ান মিগুয়েল দামাসেনাও গত ম্যাচে প্রত্যাশার পুরোটা দিতে পারেননি। তবে ব্রাজিলের টপ টায়ারে খেলা এই ফুটবলারের যে যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের স্পট লাইট টেনে নেওয়ার সক্ষমতা আছে, সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। এছাড়া দুই সেন্টার ব্যাক খালেদ শাফেঈ ও বিশ্বনাথ ঘোষ তাদের গত ম্যাচের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে চাইবেন। তাদের সাথে তারিক, জিকো, ইয়াসিন আরাফাত, সোহেল রানা, মতিন মিয়া, ইব্রাহিম, এলিটা কিংসলে এবং গত ম্যাচে গোল করা গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড নুহা মারঙের ওপর ভরসা অস্কার ব্রুজনের।
এটিকে মোহনবাগানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসের সুর বসুন্ধরা কোচের কণ্ঠে, “এটা ঠিক, আমরা প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও পারফরম্যান্স প্রত্যাশিত ছিলো না। সেসব জায়গায় উন্নতি আনতে হবে। দলের সঙ্গে চিনেদু যুক্ত হয়েছে। আশা করছি এবার মিডফিল্ডের সাথে কম্বিনেশন ভালো হবে।” কোচের সুরে সুর মিলিয়ে অধিনায়ক রবসনও করছেন জয়ের পরিকল্পনা, “মোহনবাগান খুবই শক্তিশালী দল। ওদের সাথে খেলা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। কিন্তু আমরা জানি আমাদের কি করতে হবে। সেটা ঠিকভাবে করতে পারলে জয় তুলে নেওয়া সম্ভব।”
দেখা যাক দুই বাংলার ফুটবল যুদ্ধে কে কাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। বসুন্ধরা কিংস নাকি এটিকে মোহনবাগান? মর্যাদার লড়াইয়ে কে হাসবে শেষ হাসি? উত্তর জানার জন্য আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা।