চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম নিয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বিতর্কিত ও স্ববিরোধী। একদিকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) ২৫ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে, যা ফিফার বিনিয়োগ পাওয়ার শর্ত পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, এই একই স্টেডিয়াম অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠন, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ব্যবহারের জন্যও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এই দ্বৈত সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ফুটবলের নয়, সামগ্রিক ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে তুলে ধরছে।
প্রশ্ন হলো, যদি বাফুফে ২৫ বছরের জন্য লিজ পেয়ে থাকে, তবে অন্য সংগঠন কীভাবে এই মাঠ ব্যবহার করবে? ফুটবলের জন্য ফিফার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আনতে হলে মাঠের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বাফুফের হাতে থাকা জরুরি। কিন্তু যখন বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা একই মাঠ ভাগাভাগি করবে, তখন ফুটবলের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন কতটা সম্ভব? ফুটবলের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যেমন বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ সুবিধা, উন্নত গ্রাস, আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই কঠিন হয়ে পড়বে।
আজ এক ফেসবুক পোস্টে ক্রীড়া উপদেষ্টা লেখেন,
চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা নেই।বাফুফের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট যে কোন ফেডারেশন, ক্রীড়া সংগঠন, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা মাঠ ব্যবহার করতে পারবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ফুটবলের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। মাঠের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হবে না, কারণ একাধিক ক্রীড়া সংস্থা এটিকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে। ফুটবল ম্যাচ ও প্রশিক্ষণের জন্য মাঠের অবস্থা অবনতি হতে পারে, যা খেলোয়াড়দের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ফিফার বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সেটিও হুমকির মুখে পড়তে পারে, কারণ তারা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় যেখানে নির্দিষ্ট সংস্থা বা ফেডারেশনের একক নিয়ন্ত্রণ থাকে।
অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নীতির অস্পষ্টতাও স্পষ্ট হয়েছে। যদি স্টেডিয়ামটি সব ক্রীড়া সংস্থার জন্য উন্মুক্ত রাখার পরিকল্পনা থাকে, তবে এটি ২৫ বছরের জন্য বাফুফেকে দেওয়ার দরকার কী? এটি না ফুটবলের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, না অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠনের জন্য কার্যকর কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। বরং ভবিষ্যতে ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতা ও দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, যা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।
ফুটবলের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে স্পষ্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে। যদি সত্যিই ফুটবলকে এগিয়ে নিতে হয়, তবে বাফুফেকে মাঠের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিতে হবে এবং অন্যান্য খেলাধুলার জন্য বিকল্প অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায়, ফুটবলের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে, এবং এই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত দেশের ক্রীড়া ব্যবস্থার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।