বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ পরিচিত একটি নাম শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। স্বাধীন বাংলার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে ১৯৯৫ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন শাহজাহান কবির। ১৯৯৬ সালের পাইওনিয়ার লিগের মাধ্যমে পেশাদার ফুটবলে প্রবেশ করে ক্লাবটি। এরপর ২০০২ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবলে (তৎকালীন বাংলাদেশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর) রানার্স আপ হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হয় শেখ রাসেল। এরপর থেকে নিয়মিত ভাবেই বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে খেলে যাচ্ছে ক্লাবটি।
নিয়মিত বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে খেললেও তেমনভাবে সাফল্যের দেখা পায়নি শেখ রাসেল। তবে শেখ রাসেলের ক্লাব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বছর বা মৌসুম হয়ে থাকবে ২০১২-১৩ ফুটবল মৌসুম। এই মৌসুমে প্রথম কোনো বাংলাদেশী ক্লাব হিসেবে একটি নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার ইয়ারে তিনটি শিরোপা অর্থাৎ ‘ট্রেবল’ জেতার রেকর্ড করে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। ঘরোয়া ফুটবলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে ক্লাবটি। ২০১৪ দলে শ্রীলঙ্কায় এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপে অংশ নিয়ে গ্রুপ পর্ব পেড়িয়ে নক আউট পর্বে গেলেও, নক আউট পর্ব থেকে বিদায় নেয় শেখ রাসেল। এছাড়াও ২০১৫ ও ২০১৭ সালের এএফসি কাপের বাছাইপর্বে খেললেও, বাছাইপর্ব উতরে গ্রুপ পর্বে খেলা হয়ে ওঠেনি শেখ রাসেলের।
তারপরও গত কয়েকটা মৌসুম কেনো যেনো ভালো কাটছে না শেখ রাসেলের। সবশেষ প্রিমিয়ার লিগেও ১৩ দলের মধ্যে ৭ম স্থানে থেকে শেষ করেছে লিগ। ভালো করতে পারেনি গত মৌসুমের ফেডারেশন কাপেও। তাইতো এই মৌসুমে দলবদলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ক্লাবটি। গত মৌসুমে শেখ রাসেলে খেলা চার বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে কাউকেই এই মৌসুমে দলে রাখেনি ক্লাবটি। নতুন মৌসুমের জন্য দুই ব্রাজিলিয়ান থিয়াগো আমারাল ও এইলটন ম্যাকাদোর সাথে গিনি বিসাউয়ের ঈসমাইল রুটি এবং কিরগিজ ফুটবলার আয়জার আখমাতভকে দলে ভিড়িয়েছে শেখ রাসেল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এদের পাশপাশি বাংলাদেশ জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারও এই মৌসুমে যোগ দিয়েছেন শেখ রাসেলের ডেরায়। ঢাকা আবাহনী থেকে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর সাথে দুই তরুণ সাদ উদ্দিন এবং দীপক রায় এবার খেলবেন শেখ রাসেলে। এছাড়াও চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে মানিক মোল্লা ও মান্নাফ রাব্বী, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব থেকে রহমত মিয়া, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকে হাবিবুর রহমান সোহাগ, পুলিশ এফসি থেকে মোহাম্মদ জুয়েল, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি থেকে রাসেল মাহমুদ লিটন এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র থেকে মোঃ ইমন এবারের মৌসুমে যুক্ত হয়েছেন শেখ রাসেলে। এদের পাশাপাশি বাংলাদেশ চাম্পিয়নশিপ লীগে আলো ছড়ানো আরো কয়েকজন তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারকে দলে নিয়েছে শেখ রাসেল। সেই সাথে সাইফুল বারী টিটুর সহকারী হিসেবে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব থেকে শেখ রাসেলে যুক্ত হয়েছেন জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু
সবকিছু মিলিয়ে গত কয়েক মৌসুমের ব্যার্থতা ঘুচাতে বদ্ধ পরিকর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। তবে মৌসুম শুরুর দুই টুর্নামেন্টেই হতাশ করেছে শেখ রাসেল। স্বাধীনতা কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পুলিশ এফসির বিপক্ষে হেরে এবং ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছিল সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা। কাগজে কলমে একটা শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়েও সাফল্যের মুখ না দেখার পেছনে শেখ রাসেলের হেড কোচ সাইফুল বারী টিটুর দায়টা কোনো অংশেই অস্বীকার করা যায় না। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে অতি পরিচিত এই কোচ যেনো কোন ফুটবলারকে কোন জায়গায় ব্যাবহার করবেন সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাইতো মৌসুমের দুটি টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেলেও, নির্দিষ্ট কোনো কম্বিনেশন গড়ে তুলতে পারেননি টিটু। গত মৌসুমেও একই অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন শেখ রাসেলের হেড কোচ। তারপরও নতুন মৌসুমে টিটুর ওপর আস্থা রাখছে শেখ রাসেল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। দেখা যাক কাগজে কলমে থাকা নিজেদের শক্তিশালী একটা স্কোয়াড নিয়ে মাঠে কতোটা সফল হতে পারেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কোচ সাইফুল বারী টিটু।