কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে বাঁচিয়া ছিল’—কথাটা বহুল ব্যবহৃত বলে এর আবেদন আর এখন নেই খুব একটা। তবুও বাংলাদেশের ফুটবলে অন্যতম প্রাচীন ও সফল ক্লাব মোহামেডানের জন্য এই পুরনো উপমাটাই সবচেয়ে বেশি সত্য। না, মোহামেডান হারিয়ে যায়নি। এখনো বাংলাদেশের ফুটবলের শীর্ষ স্তরে খেলে যাচ্ছে মোহামেডান। তবে ধীরে ধীরে হারাচ্ছে সাদা-কালোদের আগের সেই জৌলুস। মোহামেডানের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ১৯২৭ সালে, মুসলিম স্পোর্টস ক্লাব নামে। প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পর কলকাতা মোহামেডানের অনুসরণে নাম হয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। নামেই বোঝা যাচ্ছে মুসলমানদের সঙ্গে এর একটা সংযোগ আছে। অতি প্রগতিশীল রূপধারী কেউ কেউ আবার অপরাধে মোহামেডানকে অভিযুক্ত করে বসতেন; কিন্তু বিষয়টা দেখতে হবে তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে। সেই অবিভক্ত ভারত বা বাংলায় যাকে সাম্প্রদায়িকতা নয়, বলা উচিৎ পিছিয়ে থাকাদের সম্পৃক্ত করার জন্য ক্রীড়া আন্দোলন।

ফুটবলে মোহামেডানের রয়েছে একটি রঙিন ইতিহাস। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশাদার লিগের যাত্রা শুরু হলেও এর আগে ঢাকা লিগই ছিলো দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর। আর সেই ঢাকা লিগের ১৯ বারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মোহামেডান। এছাড়াও ফেডারেশন কাপের ১০টি, স্বাধীনতা কাপের ৩টি এবং সুপার কাপের ২টি শিরোপা রয়েছে সাদা-কালোদের ট্রফি ক্যাবিনেটে। শুধুমাত্র দেশেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সাফল্য অর্জন করে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে মোহামেডান। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ১৯৮২ সালে আশিষ-জব্বার শিল্ড এবং ১৯৯৯ সালে অল এয়ারলাইনস গোল্ড কাপের শিরোপা জেতে মোহামেডান। ১৯৯৫ সালে ভারতের ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট আইএফএ শিল্ডে হয়েছিল রানার্স আপ। এছাড়াও এশিয়ার মঞ্চেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে সাদা-কালোরা। এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে ৬ বার, এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপে ৩ বার এবং ২০০৬ সালে একবার এএফসি কাপে অংশ নেয় মোহামেডান।

তবে দেশের ফুটবলে সাদা-কালোদের এতসব রঙিন ইতিহাস যেনো আস্তে আস্তে ধূসর হতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে শিরোপা তো দূরে থাক সেরা চারেই থাকতে পারছে না মোহামেডান। মাঝে ২০১৯ সালে ক্যাসিনো কাণ্ডে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ক্লাবটি। ২০০২ সালে সর্বশেষ লিগ শিরোপা জয়ের পরেই এই পতনের সূচনা। ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত শিরোপাশূন্য মৌসুম কাটায় তারা। এরপর ২০০৮ ও ২০০৯ সালে পরপর দুটি ফেডারেশন কাপ জিতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় মোহামেডান। কিন্তু সেটা ইঙ্গিতই থেকে যায়। সবশেষ প্রিমিয়ার লিগেও ১৩ দলের মধ্যে ৬ষ্ঠ হয়ে শেষ করেছে মোহামেডান। নতুন মৌসুম শুরুর আগে দলে বড়সর পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলেন মোহামেডান কর্তারা। তবে মুখের কথা মুখেই রয়ে গেছে। উল্টো গত মৌসুমে মোহামেডানে দুর্দান্ত পারফর্ম করে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া হাবিবুর রহমান সোহাগ, আতিকুজ্জামানরা দল ছেড়েছেন। আগের মৌসুমে খেলা চার বিদেশির মধ্যে শুধু মাত্র মালির ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতে এবারও রয়েছেন মোহামেডানে। পাশপাশি ক্লাবের নেতৃত্বের দায়িত্ব তার কাঁধে। বাকি তিন বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড অবি মনেকে ও নর্থ মেসিডোনিয়ান ডিফেন্ডার জেসমিন মেসিনোভিচ এবং এশিয়ান কোটায় অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার অ্যারন রিয়ার্ডনকে দলে ভিড়িয়েছে মোহামেডান। আর স্থানীয় ফুটবলার হিসেবে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম, তকলিস আহমেদকে দলে নিয়েছে সাদা-কালোরা। মোহামেডানেই থেকে গেছেন আরেক ফরোয়ার্ড জাফর ইকবাল। এছাড়া আছেন আহসান হাবিব, মাসুদ রানা, রাজীব হাসান, ইমন খান, হাফিজুর রহমান অনীক হাসান, রাকিব খান ইভান, শ্যামল বাপ্পি, শাহেদ হোসেন ফরহাদ মনা, আমির হাকিম বাপ্পীরা।

মাঝারি মানের এই দল নিয়েই মোহামেডানের ঐতিহ্য রক্ষার লড়াইয়ে নামবেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ শন লেন। দেখা যাক নতুন মৌসুমে কতোটা সফল পারেন এই অস্ট্রেলিয়ান। পাশাপাশি নিজেদের ঐতিহ্য কতটা টিকিয়ে রাখতে পারে সাদা-কালোরা সেটাও দেখার বিষয়। তবে দলবদল ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই খুব একটা আশার সঞ্চার করবে না মোহামেডান ফ্যানদের!

Previous article১,৪৭,০০০ টাকা অনুদান পাবে ঢাকা আবাহনী
Next articleকিংসের এএফসি কাপের লড়াই ১৮ মে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here