সময়ের পরিক্রমায় আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে আরো একটি বছর। ২০২৪ কে বিদায় জানিয়ে ২০২৫ কে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় সবাই। ২০২৪ সালটা বাংলাদেশের জন্য বেশ ঘটনাবহুল ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে ফুটবলেও। আজকের ভিডিওতে এই বছর বাংলাদেশ ফুটবলে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো আবারো ফিরে দেখবো।

শুরুতেই আসা যাক বছরজুড়ে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে। এ বছর মোট ৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। অবশ্য এখানে হতাশার পরিমানটাই বেশি। ৮ ম্যাচে মাত্র ২ জয় বাকি ৬ ম্যাচেই হার বাংলাদেশের। যার মধ্যে ফিলিস্তিনের কাছে ৫-০ ও লেবাননের কাছে ৪-০ গোলের বড় হারের স্বাদ পেতে হয়েছে। ভুটান ও মালদ্বীপের কাছেও হারের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অবশ্য সাফল্য এসেছে। নেপাল থেকে যুব সাফ জয় করে দেশে ফিরেছে অ-২০ দল। তবে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভালো করতে পারেনি তারা। অ-১৭ দল সাফের ফাইনালে খেলে শিরোপা জিততে পারেনি। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে তারাও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

২০২৪ সাল নারী ফুটবলে জন্য সাফল্যে বয়ে এনেছে। টানা দ্বিতীয় বারের মত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে মেয়েরা। নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে সেমিতে ভারত এবং ফাইনালে স্বাগতিকদের হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে আসরের সেরা খেলোয়াড় হন ঋতুপর্ণা চাকমা। এরপর দেশে ফিরেও সংবর্ধনায় সিক্ত হয় নারীরা। আর সবশেষ পুরস্কার আসে ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ৭ ধাপ উন্নতি। নারীদের ফিফা র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন ১৩২তম স্থানে।

জুলাই-আগষ্টের অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক সূত্রতায় হামলার শিকার হয় বেশ কয়েকটি ক্লাব। দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনী ও শেখ জামালে হামলার ঘটনা ঘটে। আবাহনীর বেশ কয়েকটি ট্রফিও এসময় ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ফর্টিস এফসিও হামলার শিকার হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও পরবর্তীতে হামলার শিকার হয়ে শেখ জামাল নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এবারের লিগে খেলছে না তারা। শেখ রাসেল ক্লাবে হামলা না হলেও তারাও খেলায় নেই। এছাড়া ঢাকা আবাহনী শেষ মুহূর্তে দল গড়ে লিগে খেলছে। ঐতিহ্যবাহী দলটিতে প্রথমবারের মতো নেই কোন বিদেশি খেলোয়াড়!

বাফুফের সভাপতি পদে দীর্ঘ ১৬ বছর পর নতুন কাউকে দেখা গেল। ২০০৮ থেকে ২০২৪ এই ১৬ বছর বাফুফে সভাপতি ছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। নানান সমালোচনা ও বিতর্ক সঙ্গী করে বাফুফের চেয়ার আঁকড়ে রাখা সালাউদ্দিন এবার আর নির্বাচন করেননি। নির্বাচনে বাফুফের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তাবিথ আওয়াল। বাফুফের সাবেক এই সহ-সভাপতি আগামী ৪ বছর দেশের ফুটবলের শীর্ষ কর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। তার সঙ্গে নতুন কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইমরুল হাসান এবং ভোট শেষে সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন

আন্তর্জাতিক আসরে আবারো ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি বসুন্ধরা কিংস। তবে এবার ব্যর্থতার মাত্রাটা সবচেয়ে বেশি। ভুটানে অনুষ্ঠিত এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্বে ৩টি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। লেবাননের নেজমেহ, ভারতের ইস্টবেঙ্গল ও ভুটানের পারো এফসির কাছে হেরে হতাশার এক আসর শেষ করেছে কিংস।

কিংসের হতাশার মাত্রা বাড়িয়েছে অস্কার ব্রুজন ও রবসন রবিনহোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে। গত মৌসুমের মাঝপথেই সম্পর্কে ভাঙনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মৌসুমের শুরুতে অস্কার ব্রুজনের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানার ঘোষণা দেয় কিংস। শীর্ষ লিগে কিংসের যাত্রার সঙ্গী অস্কার ব্রুজন ঘরোয়া ফুটবলে সাফল্য এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যর্থতা নিয়ে বিদায় নেন।

এরপর কিংসের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ানো রবসন রবিনহোর সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়। দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণ ছিল পারিশ্রমিক ইস্যু। দীর্ঘ চার বছর বাংলাদেশের সমর্থকদের মাতিয়ে রাখেন রবসন। কিংসের জার্সিতে ৯৭ ম্যাচ খেলে করেন ৬৪ গোল এবং ৪৯টি এসিস্ট। বসুন্ধরা কিংসকে নেতৃত্বও দেন রবসন। ৩টি লিগ এবং ১টি ফেড কাপের শিরোপা জয় করেন তিনি। একবার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছেন। জিতেছেন বছরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। নিজেদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে শেষমেশ সম্পর্ক আর টিকেনি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবল নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে গড়ায়নি। এরপর ২২ নভেম্বর চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে মাঠে ফিরে ঘরোয়া ফুটবল। মোহামেডানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে মৌসুমের প্রথম শিরোপা জিতে নেয় বসুন্ধরা কিংস। এরপর লিগ ও ফেড কাপ মাঠে গড়ায়। লিগে কিংসকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয় মোহামেডান। এরপর ঢাকা ডার্বিতে আবাহনীকেও হারায় সাদা-কালোরা। তবে ঘরোয়া ফুটবলের মাঠ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়। কুমিল্লা, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জের মাঠ আদৌ ফুটবলের জন্য উপযোগী কিনা সে প্রশ্ন তুলে সবাই। তারপরও সব বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতা নিয়েই এগিয়ে চলছে ঘরোয়া ফুটবল।

তবে বছরের শেষ দিকে এসে দারুন এক সুখবর মিলেছে। লেস্টার সিটি তারকা হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার অনুমতি পেয়েছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সব জটিলতা কাটিয়ে ফিফা থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন হামজা। এর আগে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও ইংল্যান্ড এফএ থেকে এনওসি পেলেও ফিফায় আটকে ছিলেন তিনি। ১৯ ডিসেম্বর ফিফা থেকে জানানো হামজার বাংলাদেশ দলে খেলতে আর কোন সমস্যা নেই। সব ঠিকঠাক থাকলে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষিক্ত হবেন হামজা।

এই ছিল বছরজুড়ে বাংলাদেশের ফুটবলে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ। নতুন বছরে সব অঙ্গনে সাফল্যমন্ডিত হবে বাংলাদেশ ফুটবল – এমনটাই প্রত্যাশা ফুটবল প্রেমীদের।

Previous articleনতুনত্বের ছোঁয়া পাচ্ছে কমলাপুর স্টেডিয়াম!
Next articleবছরের সেরা রেফারি সায়মন হাসান সানি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here