বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সাফ জয়ের পর সকলের প্রত্যাশা ছিলো দেশের নারী ফুটবলের উন্নয়ন হবে, বাড়বে সুযোগ সুবিধা। কিন্তু হিতে যেনো বিপরীত ঘটনা ঘটলো। নারী ফুটবল যেখানে সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কথা ছিলো, সেই নারী ফুটবলেই সুযোগের অপ্রতুলতার জন্য সংগঠকরা আগ্রহ হারাচ্ছে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবল লীগে শীর্ষ ক্লাব তো দূরের বিষয়, বসুন্ধরা কিংস ব্যতীত নেই কোনো প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব। এবারের মৌসুমে সেই বসুন্ধরা কিংসও আবেদন করে নি। নারী লীগের আসন্ন মৌসুমের জন্য গত ১৪ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দলগুলোকে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হলেও বসুন্ধরা কিংস লিগে অংশ নেওয়ার জন্য কোনো আবেদন পেশ করে নি। এছাড়া গত ২২-২৩ মৌসুমে অংশ নেওয়া আরো তিন ক্লাব কুমিল্লা ইউনাইটেড, বরিশাল ফুটবল একাডেমি এবং এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়াও এবারের লীগে অংশ নিতে আবেদন করে নি।
বসুন্ধরা কিংস লীগে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ তুলে না ধরলেও বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে দুইটি কারণ উঠে এসেছে। প্রথম কারণটি হলো খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত। গত মৌসুমেও কিংস যেসব প্লেয়ারদের ৩-৪ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দিয়েছিলো, সেসব প্লেয়ারদের অনেকই এবার পারিশ্রমিক হিসেবে ১৫-২০ লাখ টাকা দাবি জানিয়েছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। এছাড়া দ্বিতীয় কারণ হিসেবে ধারণা করা যায়, বাফুফের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ক্লাব নারী লীগ খেলছে যারা লিগ চলাকালীন বাফুফের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। ফেডারেশন ভবনে আবাসিক ক্যাম্প ও প্র্যাকটিস মাঠের বিশেষ সুবিধা ছাড়াও জাতীয় দলের বাইরে থাকা উঠতি সব খেলোয়াড়ই তারা পেয়ে যায়। তাই অনেকটা অভিমানের সুরেই নারী লীগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা কিংস।
গত সিজনের চারটি দল এবার আবেদন না করলেও নারী অংশ নিতে মোট দশটি দল আবেদন করেছে। এই মৌসুমে নতুনভাবে দুইটি দল নারী লীগ খেলার জন্য আবেদন জানিয়েছে। উক্ত দুই দল হলো-আর্মি ক্লাব ফুটবল লিমিটেড এবং রাঙটুঙ্গি উইমেন্স ফুটবল ক্লাব। এই দুই দল ছাড়াও আবেদন করা বাকি আট দল হলো আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব, কাচারি পাড়া একাদশ, নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি, সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোর্টিং, ঢাকা রেঞ্জার্স ফুটবল ক্লাব, সিরাজ স্মৃতি সংসদ, উত্তরা ফুটবল ক্লাব এবং ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। দশটি ক্লাব প্রাথমিকভাবে আবেদন করলেও বাফুফের বিচার বিবেচনায় কমে আসতে পারে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা, যা সামগ্রিকভাবে নারী উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।