সাফ অ-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের গত আসরের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল। নিজেদের সেই আধিপত্যের প্রমান দিয়েছে এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশীপেও। এবারের আসরে নেপালের বিপক্ষে ড্র দিয়েই সাফের যাত্রা শুরু করে মারিয়া মান্দারা। নেপালের বিপক্ষে ড্র এর পর দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। তাহুরা খাতুন ও শাহিদা আক্তার রিপার জোড়া গোলসহ আধডজন গোলে ভুটানকে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
টুর্ণামেন্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত। ভারতও তাদের প্রথম দুই ম্যাচে ভুটান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় জয় পায়। তাই কঠিন লড়াইয়ে আগে দুইদলই বেশ ছন্দে ছিলো। তবে শামসুন্নাহারের পেনাল্টি থেকে একমাত্র গোলকে পুঁজি করে ভারতকে পরাজিত করে বাংলার বাঘিনীরা। ভারতের পর গ্রুপে নিজেদের চর্তুথ ও শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ।
দুর্বল প্রতিপক্ষ পেয়ে শ্রীলঙ্কা নারী ফুটবল দলকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। গুনে গুনে একডজন গোলে বিধ্বস্ত করে লঙ্কান নারী দলকে। উক্ত ম্যাচে আফিদা খন্দকার ও শাহিদা আক্তার রিপা নিজেদের হ্যাট্রিক গোল পূরণ করেন। এছাড়া ঋতুপর্ণা চাকমা দুইটি এবং স্বপ্না রাণী,আঁখি খাতুন,আনুচিং মুগিনী,উন্নতি খাতুন একটি করে গোল করে। এ জয়ের সুবাদে ৪ ম্যাচে ৩ জয় ও ১ ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফাইনালে চলে যায় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে ভারত। ভারত গ্রুপে তাদের শেষ ম্যাচে অঘোষিত সেমিফাইনালে নেপালের মুখোমুখি হয়। ম্যাচটি দুইদলের কাছেই ছিলো সমান গুরুত্বপূর্ণ। দুইদলের এই ফাইনাল নিশ্চিতের বাঁচা মরার লড়াইয়ে ম্যাচের ৬৭ মিনিটে প্রিয়াঙ্কা দেবী একমাত্র গোলে জয় পায় ভারত। সেইসাথে নেপালকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখে ভারত।
টুর্ণামেন্টে দুইদলের পারফরম্যান্স বিবেচনা ভারতের থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ দল। যেখানে বাংলাদেশ দল কোনো গোল হজম না করে প্রতিপক্ষের জালে ১৯ বার বল প্রবেশ করিয়েছে,সেখানে ভারত প্রতিপক্ষকে সর্বমোট আট গোল দিয়েছে,বিপরীতে এক গোল হজমও করেছে। মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। পাশাপাশি টপ গোল স্কোরারের লিস্টে টুর্ণামেন্টে ৫ গোল করে সবার উপরে আছে বাংলাদেশের শাহিদা আক্তার রিপা। ভারতের প্রিয়াঙ্কা দেবী ৪ গোল করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে আছে উক্ত টুর্ণামেন্টে প্রথম হ্যাট্রিক পূরণকারী বাংলাদেশের আফিদা খাতুন এবং ঋতুপর্ণা চাকমা। দুইজনেরই গোলসংখ্যা তিন।
আসন্ন ফাইনালকে সামনে রেখে আজ দুপুর ২ঃ৩০ টায় বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় দলের প্রধান প্রশিক্ষক এলেক্স মারিও এমব্রোস ও অধিনায়ক সুমতি কুমারী। এছাড়াও বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাহী গোলাম রাব্বানী ছোটন ও দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন টুর্ণামেন্টে মেয়েদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশংসা করেছেন ও ফাইনালে সেই দ্বারা অব্যহত রাখার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ম্যাচে আমাদের দরকার জয় ও ভালো খেলা। সে ব্যাপারে আমি আমার মেয়েদের শতভাগ ধন্যবাদ দিবো,কারণ তাতে তারা সফল হয়েছে। প্রতিটি ম্যাচ তারা ভালো ফুটবল খেলেছে এবং আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন শুধু ফাইনাল ম্যাচ বাকি আছে। আমি মনে করি তা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ হবে। মেয়েরা তাদের খেলার দ্বারা অব্যহত রাখতে পারবে। ইনশাআল্লাহ আমরা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বো।’
অন্যদিকে ভারতীয় দলের কোচ এলেক্স মারিও এমব্রোম বাংলাদেশকে সমীহ করছেন। বিগত ম্যাচের ভুক ত্রুটি শুধরে নিয়ে ফাইনালে ভালো কিছু করার আশ্বাসও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সকল ফাইনাল ম্যাচই কঠিন। এটা কখনো সহজ নয়,বিশেষ করে যখন আপনি স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলবেন। কারণ স্বাগতিক দল তাদের সমর্থকদের সাপোর্ট পায়। এটি প্রতিপক্ষের খেলায় চাপের সৃষ্টি করে। তবুও আমরা প্রত্যশিত। আমরা অগ্রগতিতে বিশ্বাসী। তাই আমরা বড় টুর্ণামেন্ট বা বড় স্টেজের জন্যে তরুণদের তৈরি করছি।’