স্মৃতির পাতায় এখন ২০২১। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন আরেকটি সাল ‘২০২২‘। তবে ২০২১ সালেও বলার মতো তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বাংলাদেশের ফুটবলে। হাতে গোনা কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সাফল্য ছাড়া পুরো বছর ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে দেশের ফুটবল।

পরিকল্পনাহীনভাবে কোচ নিয়োগ ও বদলের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জাতীয় দলের ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে। ফিফা র‍্যাঙ্কিং একটি দেশের ফুটবল আয়না। সাম্প্রতিক কালে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান মানেই ১৮০-র নিচে ঘোরাঘুরি। কিন্তু বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ফুটবল যত নাকানিচুবানিই খেয়ে থাকুক না কেন, বছরের শেষে এসে সাফল্যের দেখা মিলেছে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলের সুবাদে।

ঘরের মাঠে দাপট দেখিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে বয়সভিত্তিক পর্যায়ের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলার মেয়েরা। তবে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে নিয়মিত সাফল্য এলেও মেয়েদের জাতীয় দল যে ধারাবাহিকভাবে ভুগছে সাফল্যের খরায়! গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় নারী ফুটবল দল আড়াই বছর পর মাঠে নেমেছিল। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ৩ ম্যাচে ১৫ গোল খেয়ে বাংলাদেশের ফেরাটা হয়েছে বড্ড হতাশার।

এতো গেলো নারী ফুটবলের অবস্থা। ছেলেদের ফুটবলে বছরটা আরো বাজে গিয়েছে বাংলাদেশের। ২০২১ সালে এসে জাতীয় দল সর্বাধিক ম্যাচ খেলেছে, এই কৃতিত্ব অবশ্য বাফুফেকে দেওয়াই যায়। ২০১৫ সালে জাতীয় দলের ১৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছাপিয়ে এ বছর বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ১৬টি (ফিফা প্রথম ও দ্বিতীয় স্তর মিলিয়ে)। বিদেশের মাটিতে ১৬ ম্যাচে ৫ ড্র আর ৮ হারের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৩টি। সেগুলোও কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ (ফিফা দ্বিতীয় স্তর), শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিপক্ষে।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নির্বাচনী ইশতেহারে সাফের শিরোপা পুনরুদ্ধারের ঘোষণা ছিল। বাফুফের ভাগ্য ভালো, এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে পাঁচ দল নিয়ে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। আগের চার আসরের মতো তাই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়নি বাংলাদেশকে। পাঁচ দলের মধ্যে চতুর্থ হয়েছে ২০০৩ সালের সাফজয়ীরা। ৩৯ দলের বাছাইপর্বে ৩৫ তম হয়ে সরাসরি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। এই জন্য অবশ্য বাফুফে ধন্যবাদ দিতেই পারে উত্তর কোরিয়াকে। করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব থেকে নাম প্রত্যাহার করায় সুযোগ চলে আসে বাংলাদেশের সামনে। নভেম্বরে শ্রীলঙ্কায় চার জাতি টুর্নামেন্টে তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী মালদ্বীপকে ১৮ বছর পর হারের স্বাদ দিলেও র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০৪-এ থাকা শ্রীলঙ্কার কাছে হারের আগে ১৯৯-এ থাকা সেশেলসের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। জাতীয় দল ছাড়াও গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে শতভাগ হার নিয়ে দেশে ফেরে যুবারা। তিন ম্যাচে কোনো গোল না করলেও খেয়েছে ১০টি।

নির্বাচিত হওয়ার পর বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১০-১২ বছরের বালকদের নিয়ে এ বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি কখনো আলোচনাতেই আসেনি। মাঠে গড়ায়নি খেলোয়াড় উঠে আসার সিঁড়ি হিসেবে পরিচিত পাইওনিয়ার, দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ। খেলোয়াড় ঘাটতি পূরণের জন্য ২০২১ সালে দুবার তৃতীয় বিভাগ হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে একবার। খেলোয়াড় তৈরির পরিকল্পনা না থাকার খেসারত দিয়েছে যুব দল। এর পাশাপাশি জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা’টা যে কত এলোমেলো, সেটি বোঝা যায় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে। জাতীয় দলের নিয়মিত কোচ জেমি ডে’কে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সাফের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দেওয়া হয় বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে। সাফের পর শ্রীলঙ্কার টুর্নামেন্টে আবার দায়িত্ব দেওয়া হয় আবাহনী লিমিটেডের পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসকে।

তবে এই বছরে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকলেও মাঠে ছিলো ঘরোয়া ফুটবল। ফুটবল মাঠে রাখতে পারলেও বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির অপেশাদারী আচরণও দিবালোকের মতো স্পষ্ট ছিল সবার সামনে। ফিকশ্চার ও মাঠ সংক্রান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেডারেশন কাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় বসুন্ধরা কিংস, উত্তর বারিধারা এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। অবশ্য এর জন্যে শাস্তিও পেয়েছে ক্লাবগুলো। পরবর্তী ফেডারেশন কাপে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তিন ক্লাবকেই ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এর আগে অবশ্য বছর জুড়েই ঘরোয়া ফুটবলে নিজেদের আধিপত্যের প্রমাণ রেখেছে বসুন্ধরা কিংস। বছরের শেষ দিকে এসে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী ক্লাবও জানান দিয়েছে নতুন মৌসুমে নিজেদের নতুন ভাবে প্রত্যাবর্তনের বার্তা। এএফসি কাপে নিজেদের হোম ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজন করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্লে অফ না খেলেই বাদ পরতে হয় ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে। আর বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র ক্লাব বসুন্ধরা কিংস কোনো ম্যাচ না হেরেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।

সবমিলিয়ে এ বছরটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য মোটেই সুখকর ছিলো না। কিছু বিচ্ছিন্ন সাফল্য এলেও ব্যার্থতার পরিমাণই ছিলো বেশি। নতুন বছরে নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে দেশের ফুটবল এটাই সকল ফুটবল প্রেমীদের আশা। আর ফুটবলে অন্তপ্রাণ এই জাতির দেশের ফুটবল নিয়ে সকল আশা পূরণে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বাফুফেকেই।

Previous articleদেখে নিন ফেডারেশন কাপের শেষ আটে কে কার মুখোমুখি!
Next articleপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে  দেখা করতে চায় মারিয়ারা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here