নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আশ্রয় দিতে গিয়ে পড়তে হয়েছে বিপদে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কার্যক্রমে। তবে এরই মধ্যে এলো এক চমকপ্রদ খবর। ফুটবলকে ভীষণ ভালোবাসে মিয়ানমারের সংখ্যালঘুরা। হঠাৎ করেই এই খেলার সাথে নিজেদের যুক্ত করেছে তারা।
নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই যাদের প্রশ্ন, নেই নিজের দেশ, অন্যদের আশ্রয়ে কোনরকম বেঁচে থাকা তাদের জন্য নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাস বলে ঝড় আসে, খড়-কুটো ধরে মানুষ আবার ঘুরেও দাঁড়ায় অসামান্যভাবে। খারাপ সময় ভুলে যেতে দরকার হয় কোন না কোন উপলক্ষের, সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা বেছে নিয়েছে ফুটবলকে।
কুতুপালং কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সব চাইতে বড় শরনার্থী ক্যাম্পের একটা। পাঁচ লক্ষেরও বেশী রোহিঙ্গাদের বসবাস এখানে। বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগে। তবে এখনো এদিক ওদিক খুঁজে পাওয়া যায় ব্রাজিল আর্জেন্টিনার পতাকা। নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিকূলতার পাহাড়ের মাঝেও রোহিঙ্গাদের আধুনিক ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা মাঝে মাঝে আলোচনার খোরাক হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও। এই আন্তরিকতা নজরে এসেছে ‘কনিফা’র।
কনিফা হলো ফুটবলে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফার সদস্য নয় তাদের সংগঠন। সহজ কথায় নিপীড়িত সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতাকামী অঞ্চল বা জাতিদের নিয়ে যে সংগঠন তাই ‘কনিফা’। কনিফা’র প্রধান ওয়াটসন উদ্যোগ নিয়েছেন রোহিঙ্গা এফএ কাপ আয়োজনের। কুতুপালংয়ে ষোলটি দল নিয়ে আগামী বছর থেকে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা এফএ কাপ। খেলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বল,জার্সি,বুট এর জন্য ফাউন্ডিংয়ের আহবান করা হয়েছিলো। তিন হাজার পাউন্ডের বেশী ইতিমধ্যে উঠেও গেছে। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কোচ তৈরি,আগামী দিনের ফুটবলারের সাথে তরুণ প্রজন্মের ফুটবলারদের সাথে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়াসহ নানানমুখী পরিকল্পনা আছে কনিফা প্রধানের।
ওয়াটসন জানান, ‘কথা আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট। নতুন প্রজন্মকে অপরাধ প্রবনতা থেকে সরিয়ে রাখতে পারে খেলা। মালেশিয়া ও ভারতের রহিঙ্গাদের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ক্লাব আছে। অন্তর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভালো ফুটবলার পাওয়া যাবে। আমার মনে হয়, কনিফা বিশ্বকাপে ওরা নিয়মিত খেলবে।’
সাদা-কালো, লম্বা-খাটো, প্রত্যেকটা মানুষই সর্বশক্তিমানের সৃষ্টি। আর সীমান্ত জাতের পার্থক্য মানুষের সৃষ্টি। ফুটবল রহিঙ্গাদের জটিল সমস্যা সমাধান করবে না, তবে হয়ত সমস্যাগুলো নতুন করে দেখার রসদ যোগাবে।