অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীরা যে অপেক্ষায় ক্ষণ গণনা করে আসছিলেন সেটারই অবসান ঘটেছে আজ। লেস্টার সিটি তারকা হামজা চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নামার অনুমতি পেয়েছেন। ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার আবেদন অ্যাপ্রুভ করেছে।
হামজা চৌধুরী ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও বেড়ে উঠেছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জল বায়ু অবগাহন করে তার শৈশব কেটেছে। তাই নিজের শিকড়ে ফেরার সুযোগ পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা তার কাছে গর্বের বিষয়,
“ইংল্যান্ড অবশ্যই আমার বাড়ি কিন্তু বাংলাদেশও তাই। আমি আমার শিকড়ে ফিরে যেতে এবং আমি যাদের সাথে বড় হয়েছি তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি, এটি আমার কাছে সবকিছুর অর্থ – এটি আমাকে অনেক আনন্দিত এবং গর্বিত করেছে।”
লাল-সবুজের জার্সি গায়ে যেকোনো বাংলাদেশী ফুটবলারের জন্য গর্বের বিষয়। হামজা চৌধুরীও তার ব্যতিক্রম নন। তার মতে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অনুভূতি অতুলনীয়, যার সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না-
“শিকড়ের অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকম, এবং আপনি যখন আপনার শিকড়ের প্রতিনিধিত্ব করেন তখন এটি একটি সত্যিকারের বিশুদ্ধ অনুভূতি। এর সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না।”
হামজা আরো বলেন,
“বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সিদ্ধান্ত নিতে আমি দীর্ঘ সময় চিন্তা করেছি। বাড়িতে ফিরে আমার পরিবার বছরের পর বছর ধরে আমাকে একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তাই এটি সর্বদা আমার মনের মধ্যে থেকেছে। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দল পরিবর্তন করতে ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশে আমার আত্মীয়দের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। এটি এমন একটি পছন্দ যার জন্য আমি সত্যিই গর্বিত এবং আমি ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছি।”
প্রিমিয়ার লিগে খেলা এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশী হলেন হামজা চৌধুরী। তিনি আশা করেন তার এই অগ্রযাত্রার মধ্য দেশের অন্য খেলোয়াড়েরাও এমন লিগে খেলার জন্য উজ্জীবিত হবে। নিজের ভাবনা নিয়ে হামজা বলেন,
“প্রিমিয়ার লিগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খেলতে পেরে আমি সত্যিই গর্ববোধ করছি কিন্তু আশা করি এটি এমন লিগে অন্যান্য খেলোয়াড়দের (বাংলাদেশের) জন্য রাস্তা খুলে দেবে। প্রথম হওয়াটা দারুণ কিন্তু আমি শেষ হব না জেনে আরও ভালো লাগছে।”
নিজের শৈশবের করতে ভুলেন নি হামজা। যুক্তরাজ্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশের ছোঁয়া বাংলাদেশেই পেয়েছিলো হামজা, যার তাকে আজকের হামজাতে পরিণত করেছে। নিজের শৈশবের স্মৃতি থেকে কিছুটা স্মৃতিচারণ করে হামজা বলেন,
“সিলেটের হবিগঞ্জে পরিবারের সঙ্গে আমি মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতাম, যেখানে আমি খেলার জন্য লম্বা সময় বাইরে কাটাতাম। এটি যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। এলাকার সমস্ত পরিবার একে অপরকে চিনত তাই তারা সত্যিই ঘনিষ্ঠ ছিল এবং একে অপরের খোঁজ নিত। এটা আশ্চর্যজনক ছিল, সেই পরিবেশই আজকের আমিকে গঠন করেছে।”
বহুল প্রতিক্ষার পর বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াতে যাচ্ছে হামজা। বাংলাদেশের লাখোকোটি ফুটবল ভক্তের আশা পূরণ হয়েছে। অবশেষে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন পিছনে ফেলে আবর উপদ্বীপ ছুঁয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের হয়ে জার্সি গায়ে জড়াতে যাচ্ছে হামজা চৌধুরী।