আসলেন,দেখলেন এবং জয় করলেন। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের সাথে এই কয়েকটি শব্দ বেশ মানিয়ে যায়। কোনো ডামাডোল বাজিয়ে নয়, খুব নিরবে নিভৃতে নারী দলকে সাফ জিতিয়েছেন। আবার সাফ জয়ের পর দলের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণাও দেন বাটলার,এ ঘটনা যেনো এক চ্যাম্পিয়নের নিরব প্রস্থানকে চিত্রপটে ফুটিয়ে তুলে। তবে তিনি ছেড়ে যেতে চাইলেও দল তাকেই চায়। তাকে ছেড়ে যেতে দিতে নারাজ বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের শুরুটা বাংলাদেশ জন্য মোটেও সুখকর ছিলো না। তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল পাকিস্তানের সাথে ড্র দিয়ে সাফ জয়ের মিশনের সূচনা করে সাবিনারা। তবে এরপরের ম্যাচেই বদলে যায় পুরো বাংলাদেশ দল। প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দিতে বদ্ধপরিকর সাফ চ্যাম্পিয়নরা। শুরু করে ভারতকে দিয়ে, সেমিফাইনাল নির্ধারণী ম্যাচে ৩-১ গোলে হারায়। এরপর ভুটানকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করে দলকে নিয়ে ফাইনালে পৌঁছান বাটলার। ফাইনালে কঠিন স্বাগতিকদের চ্যালেঞ্জের মুখেও পিছুপা হয় নি তার শিষ্যরা, অবশেষে নেপালকে ২-১ গোলে পরাজিত করে আরো একবার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
দলকে চ্যাম্পিয়ন করে দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন পিটার বাটলার। মূলত সাফে পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্রয়ের পর খেলোয়াড় ও কোচের মধ্যে কিছুটা জল ঘোলা হয়। তবে সেই সমস্যা সামলে নেন বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন,
বাটলার চেয়েছিলেন জুনিয়র কয়েকজন ভালো করছে, তাদের খেলাতে। সিনিয়ররা যেটা পছন্দ করেনি, তারা খেলতে চেয়েছিল। এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। টুর্নামেন্ট চলাকালীন মেয়েরা যে অভিযোগ করেছে কোচের বিরুদ্ধে, সেটা আমি তখনি সামলে নিয়েছি। আসলে মেয়েদেরটাও কাউন্ট কর ঠিক না, কোচেরটাও নয়।
বাটলার দল ছাড়তে চাইলেও তাকে ছাড়তে দিতে চায় না মাহফুজা আক্তার কিরণ। তার মতে বাটলার সেরা কোচ, তাই তাকে দলের সাথে রাখতে চান তিনি,
কোচকে আমি বলেছি, আমার সাথে বসে তোমার যে সিদ্ধান্ত সেটা জানাবে। আমার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে। অবশ্যই আমরা তাকে রাখতে চাই। অনেক ভালো কোচ। বাংলাদেশে এ যাবৎ যত কোচ এসেছে, তার মধ্যে সে সেরা কোচ।
খেলোয়াড়ী জীবণে পিটার বাটলার ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলছেন। হাডার্সফিল্ড ইউনাইটেড, গ্রিমসবাই টাউন, ওয়েস্ট ব্রমউইচ ছাড়াও ইংল্যান্ডের প্রথম সারির দল ওয়েস্ট হামের হয়ে প্রায় ৭০ টি ম্যাচ খেলেছেন। আর এটিই তাকে বিগত কোচদের থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। কিরণের মতে অন্যরা যেখানে বই পড়ে কোচ হয়েছে, সেখানে বাটলার ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ খেলেছেন। যা তার সাথে অন্যদের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে কিরণ বলেন,
যত কোচ আসছে, অধিকাংশই বই পড়ে কোচ হয়েছে। উনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা কোচ। পার্থক্য এখানেই। আমরা চেষ্টা করব তাকে রাখতে। আমি তাকে মেসেজ দিয়েছি। আমার কথা সে বুঝতে পেরেছে। তবে আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন, আমাদের উন্নতির জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিগত সরকারের কাছেও আমরা আবেদন করেছি, বর্তমান সরকারের কাছেও আমাদের আবেদন থাকবে মেয়েদের ফুটবলের পাশে দাঁড়ানোর।