এএফসি কাপের গ্রুপ ‘ডি‘ তে সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবে ধরা হয়েছিল এটিকে মোহনবাগান-বসুন্ধরা কিংস ম্যাচকে। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ম্যাচের আগে হচ্ছিলো বেশ কথার লড়াই। তাইতো জমজমাট এক ম্যাচের অপেক্ষায় ছিল ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের বিপক্ষে লজ্জার হারে সমর্থকদের হতাশ করল বসুন্ধরা কিংস। তবে ম্যাচের শুরুতে ভালো কিছুর আশাই দেখাচ্ছিলো কিংস। কিন্তু ক্রস বার বাধা আর গোলের সুযোগ নষ্ট আর ডিফেন্ডারদের অমার্জনীয় ভুলে ৪ গোলের লজ্জার হার সঙ্গী হলো বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের।
সল্ট লেকে শুরু থেকেই দাপট দেখানোর আভাস দেয় কিংস। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েও নষ্ট করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফিগেইরা। এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্ডার প্রীতম কোটালের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে মিগুয়েলকে বাড়িয়ে দেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড চিনেদু ম্যাথিউ। কিন্তু বা পায়ের শট পোস্টে রাখতে পারেননি মিগুয়েল। ম্যাচের শুরু থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ১২দশ মিনিটে রূপ নেয় বজ্রসহ বৃষ্টিতে। সেই সাথে সল্ট লেক স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে বয়ে যায় তুমুল ঝড়। ফলে খেলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন রেফারি। প্রায় ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয় ম্যাচ।
বৃষ্টির বিরতি থেকে ফিরেও নিজেদের আক্রমনের চাপ বজায় রাখার চেষ্টা করে বসুন্ধরা। ১৮তম মিনিটে অধিনায়ক রবসন রবিনহোর ফ্রিকিক সাইডবারে লেগে ফিরে আসে। দুই মিনিট বাদেই আবারও এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় কিংস। প্রায় ৩০ গজ দুর থেকে রিমন হোসেনের নেওয়া বুলেট গতির শট পোস্টের উপরের দিকে লেগে ফিরে আসে। এটিকে মোহনবাগানকে একের পর এক আক্রমনে চেপে ধরায় যখন সবাই ক্ষণ গুনছে বসুন্ধরার গোল উদযাপন করার, তখন উল্টো এটিকে মোহনবাগান সমর্থকদের উল্লাসে ভাসান তরুণ উইঙ্গার লিষ্টন কোলাচো! তবে এই গোলে লিষ্টনের চাইতে বিশ্বনাথ ঘোষের অবদানই বেশি। বক্সের ভেতর জটলা থেকে বল ক্লিয়ার করার সহজ সুযোগ মিস করে বিশ্বনাথ বল তুলে দেন লিষ্টনের পায়ে। আর গোল মুখে পাওয়া এমন সহজ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এটিকে মোহনবাগানকে এগিয়ে নেন এই উইঙ্গার। ৩৪তম মিনিটে আবারো পিছিয়ে পড়ে কিংস। আবারও গোল করেন লিষ্টন। নিজেদের অর্ধ থেকে জনি কাউকোর থ্রু বল অফসাইড ফাঁদ ভেঙ্গে কিংসের বক্সে ঢুকে জিকোকে কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে বল জালে পাঠান লিষ্টন। ফলে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বসুন্ধরা কিংস।
বিরতির পর ৫১তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ইয়াসিন আরাফাতের ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলকিপার আর্শ আনওয়ার। ৫৩তম মিনিটে আবারো রক্ষণের ভুলে গোল হজম করে বসুন্ধরা। এবার ভুল করেন রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী ইরানিয়ান ডিফেন্ডার খালেদ শাফেঈ। তার ভুলেই বল নিয়ে ফাঁকায় থাকা লিষ্টনকে বাড়ান মানবীর সিং। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তরুণ এই উইঙ্গার। ৫৬তম মিনিটে রবসন রবিনহোর ফ্রি কিকে ইয়াসিন আরাফাতের হেড চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৭৭তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে বড় হার নিশ্চিত হয়ে কিংসের। তবে শেষ ১০ মিনিটে মতিন মিয়া ২ বার এবং এলিটা কিংসলে ১ বার এটিকে মোহনবাগান গোলরক্ষককে একা পেয়েও ব্যাবধান কমাতে পারেননি। ফলে ৪-০ গোলের হারেই ম্যাচ শেষ করে অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। ডি গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আগামী ২৪ জুন গোকুলাম কেরালার মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংস।