গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মানিক আগামী চার বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইশতিহার ঘোষণার সময় শফিকুল ইসলাম মানিকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির।
বাফুফে নির্বাচন-২০২০ সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মানিকের ২১ দফা ইশতেহার
১. ফুটবল ফেডারেশনের ২১ জন সদস্যকেই একই মন নিয়ে অর্থাৎ ফুটবল উন্নয়নে আমরা একই কথা ও কাজ করার মধ্যে কোনও দ্বিমত থাকবে না। ওয়ান টিম নীতিতে কাজ করার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
২. জেলা ফুটবল ও পাইওনিয়ার থেকে প্রথম বিভাগ পর্যন্ত লিগ/টুর্নামেন্টকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব কর্মকাণ্ড করা হবে। এবং মনিটরিং করার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলকে আরও জনপ্রিয় (পাবলিক ও প্রাইভেট) করার লক্ষ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হবে। করপোরেট টিম, সার্ভিসেস টিম. সাংবাদিকদের সংস্থাগুলোকে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনে উৎসাহিত এবং সহযোগিতা করা হবে।
৪. আন্তঃ-স্কুল, আন্তঃ-কলেজ ফুটবল যথাযথভাবে হচ্ছে কি না তা বাফুফের নজরদারীতে থাকবে এবং আন্তঃ-শিক্ষা বোর্ড ফুটবল আয়োজন করার জন্য শিক্ষা বোর্ড সমূহকে উৎসাহিত করা হবে।
৫.প্রতিটি ক্লাবের অনুশীলন মাঠ সিনিয়র থেকে পাইওনিয়ার পর্যন্ত সিটি জেলার মেয়র, রেলওয়ে, জেলা প্রশাসক সবার সঙ্গে আলোচনার সুবিধার্থে একটি কমিটি থাকবে।
৬. জাতীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বঙ্গবন্ধু কাপ প্রতি বছর আয়োজন করা হবে। অনূর্ধ্ব ২১ জাতীয় ফুটবল যার নামকরণ লেফট্যানেন্ট শেখ জামাল অনূর্ধ্ব ২১ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা এবং যথারীতি অনূর্ধ্ব ১৯ সোহরাওয়ার্দী কাপ জাতীয় ফুটবল ও আন্তঃ জেলা শেরে বাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
৭. বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে প্রতি দু্ই বছর পর পর আয়োজন করা হবে। প্রতিবছর আয়োজন করা হবে শেখ জামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ। বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে দু্টি টুর্নামেন্টই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৮. প্রতি বছর একটি গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়ন যোগ্য ক্যালেন্ডার থাকবে যা আগেই প্রকাশিত হবে। যথা সময়ে প্রতি বছর ফেডারেশনের সাধারণ সভা বসবে।
৯. সাধারণ সভায় জেলা ও বিভাগীয় ফুটবলকে উৎসাহিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে। ১টি বিভাগ ও চারটি জেলাকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
১০. বাফুফের আর্থিক অনিয়ম এবং পাতানো ম্যাচের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা তৈরি ও এক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে।
১১. বাফুফের নির্বাচিত সব সদস্য যাতে ভবনে এসে কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি ও সহায়তার জন্য প্রত্যেক সদস্যের চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার থাকবে। বাফুফের সব ডেলিগেটদের জন্য বাংলাদেশের যেকোনও স্টেডিয়ামে ভিআইপি মর্যাদা সম্পন্ন একটি কার্ড প্রদান করা হবে যাতে সম্মানিত ডেলিগেটরা ফুটবল খেলা উপভোগ করতে পারে। তাছাড়াও ফেডারেশনে প্রবেশের জন্য একটি ছবি যুক্ত কার্ড প্রদান করা হবে। জেলা ও ক্লাব প্রতিনিধিরা ফুটবলের কাজে ফেডারেশন ভবনে আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
১২. সভাপতি প্রথম বছর অন্তত একবার পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় ঘুরে আসবে। যেখানে জেলা অবকাঠামো উন্নয়নসহ জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা নিয়ে কীভাবে ফুটবলকে আরও গতিময় করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।
১৩. সভাপতির আমন্ত্রণে প্রফেশনাল দলগুলোর সভাপতিদের সঙ্গে প্রতি ছয় মাস অন্তর আলোচনা সভা করবে। ঢাকাসহ দেশের ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে ফুটবলকে কেন্দ্র বিন্দু করে ঢাকার সব ক্লাব ও জেলার ফুটবলকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা সাজানো হবে।
১৪. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সাবেক জাতীয় ফুটবলার, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড় ও সাবেক দায়িত্ববান গ্রহণযোগ্য সংঘটকদের প্রতি জেলায় এবং ঢাকায় ফুটবল কর্মকাণ্ডে ভিআইপি মর্যাদা দেয়া হবে।
১৫. বর্তমান জাতীয় দলের (পুরুষ-নারী) বেতন কাঠামো ও ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে খেলোয়াড়রা খেলার প্রতি মনোযোগী হয় তাদের পরিবারও ফুটবলার তৈরিকে উৎসাহ অনুভব করে। দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের মধ্যেই আধুনিক জিমনেসিয়াম নির্মাণ প্রকল্পে হাত দেয়া হবে।
১৬. আপাতত প্রফেশনাল ফুটবল বছরে সাত-আট মাস মাঠে থাকবে। বাকি চার-পাঁচ মাস জেলা ফুটবল, জাতীয় লিগ/টুর্নামেন্ট, বয়স ভিত্তিক লিগ, নারী লিগ চালু থাকবে। বাফুফের ফুটবল অ্যাকাডেমি ছাড়াও প্রাইভেট ফুটবল অ্যাকাডেমিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
১৭. কোচেচ অ্যাডুকেশন বর্তমান ফুটবলে একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। এ ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। সার্টিফিকেটধারী কোচরা যাতে কাজের সংস্থান পায় সে ব্যাপারে নীতিমালা নির্ণয় করা হবে।
১৮. রেফারি একটি খেলার প্রাণ, তার বিচারক প্রক্রিয়া যাতে মাঠে মাঠে সুষ্ঠভাবে প্রয়োগ করতে পারে তার জন্য তাদের সম্মানীর জায়গাগুলো যেন মর্যাদাশীল হয় এবং দায়িত্বপালনে যেন আরও মনযোগী হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও যোগ্যতা সম্পন্ন কমিটি করা হবে।
১৯. প্রফেশনাল (সক্ষমতা সম্পন্ন) প্রতিটি ক্লাবের অন্তত দুইটি গ্রাসরুট/এজ গ্রুপ দল থাকে তার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু/বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে থেকে বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা সাজানো হবে। এই বাছাইকৃত খেলোয়াড়রা যাতে প্রাতিষ্ঠানিক ফুটবল শিক্ষা পায় সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এই লক্ষ্যে ২০৩৩ সালে একটি অলিম্পিক টিম গড়া হবে। সেই টিম অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাতে খেলতে পারে সে চেষ্টা থাকবে। সেই খেলোয়াড়দের নাম হবে ‘প্রজন্মের শেখ রাসেল’ ভিশন ২০৩৩।
২০. বাংলাদেশের পুরুষ র্যাংকিং বর্তমানে-১৮৭। ইনশাল্লাহ ১২ বছর আগে র্যাংকিং যেখানে ছিল সেখানে ফিরে যাওয়া বা তার চেয়েও উন্নতি করার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নারী ফুটবলে জাতীয় দলের পারফরমেন্স (বয়সভিত্তিক দল ছাড়া) খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। জাতীয় দলের পারফরমেন্স উন্নতির প্রয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করা হবে। এই ব্যাপারে নারী সংগঠকদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা হবে।
২১. উপরের ইশতেহার সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আমার একার বা কমিটির একার পক্ষে পুরোপুরি করা সম্ভব না। তাই আমি আমার ১১ সদস্যের বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি থাকবে। ফুটবলের উন্নয়নে গ্রাসরুট লেভেলে উন্নতি ঘটাতে একটি সাত সদস্যের রিসার্চ সেল থাকবে যেখানে জাতীয় কোচ, ডাক্তার, সাইকোলোজিস্ট, পুষ্টিবিদ, বায়োকেমিস্ট, ফিজিওলজিস্ট ও আইটি বিশেষজ্ঞগণ থাকবেন
আগামী মাসের ৩ অক্টোবর ঢাকার প্যান প্যাসেফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।