নতুন আঙ্গিকে আয়োজিত হওয়া চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনালে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। তবে ম্যাচের একটি ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাঠের মধ্যে ছুঁড়ে মারা হয়েছে ফ্লেয়ার। যার জন্য খেলা বন্ধ ছিল বেশ অনেকক্ষণ! একই ঘটনার দেখা মিলেছিল এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে। তাই ক্রীড়াঙ্গনে এসব ঘটনা একেবারেই নতুন নয়।
এবছর অনুষ্ঠিত হওয়া টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। ফাইনাল ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য ২৪ বলে ২৬ রান দরকার ছিল। যা মোটেও কঠিন কিছু ছিল না। সেই সময়ে হঠাৎ করেই ভারতীয় উইকেট কিপার ঋষভ পন্ত মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। সকলেই চিন্তায় পড়ে যায়। এরপর ঋষভ পন্তের জন্য ম্যাচ বন্ধ রাখতে হয় এবং ফিজিওকেও মাঠে ডাকতে হয়। সেই সময়ে বেশ অনেক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে।
এই ব্রেকের পরে ১৭ তম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম বলেই আউট হয়ে যান ক্লাসেন। সেই ওভারে মাত্র ৪ রান আসে। ১৮ তম ওভার করেন বুমরাহ, তিনি ২ রান দিয়ে আউট করেন মার্কো জানসেনকে। ১৯ তম ওভার করেন আর্শদীপ সিং, তিনি মাত্র ৫ রান দেন। এরপর শেষ ওভার করতে আসেন হার্দিক। প্রথম বলেই তুলে মারেন ডেভিড মিলার। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে অসাধারণ ক্যাচ ধরেন সূর্যকুমার যাদব। ৭ রানে ম্যাচ জিতে টি-২০ বিশ্বকাপ নিজেদের নামে করে নেয় ভারত।
পরবর্তীতে একটি অনুষ্ঠানে ঋষভ পন্ত জানান, তিনি তখন কোন ইনজুরিতে পরেননি। শুধুমাত্র খেলার মোমেন্টাম পরিবর্তনের জন্য অভিনয় করেছিলেন। এবং তার অভিনয় সফলভাবে কাজ করেছে। মোমেন্টাম হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ভারত।
অনুরূপ একই ঘটনার দেখা মিলেছে বাংলাদেশেও। শুক্রবার চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনালে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে বসুন্ধরা কিংস। তবে ম্যাচের মধ্যে ছুঁড়ে মারা হয়েছে ফ্লেয়ারের জন্য খেলা বন্ধ ছিল বেশ অনেকক্ষণ! আর তাতেই মোমেন্টাম হারায় মোহামেডান। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয় তুলে নেয় কিংস।
খেলার ৭ম মিনিটেই দিয়াবাতের গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান। তারপর ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলতে থাকে তারা। পক্ষান্তরে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছিল না বসুন্ধরা কিংস। এরপর ম্যাচের ৬১তম মিনিটে মাঠে ঢুকে পড়ে কিছু ফ্লেয়ার। গ্যালারি থেকে মোহামেডানের অর্ধে ছুঁড়ে মারা হয় সেগুলো। অবশ্য বসুন্ধরা কিংস তখন আক্রমণে উঠছিল। পরে জানা যায় বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকগোষ্ঠীর দুই সদস্য এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে এই ঘটনায় ম্যাচ বন্ধ থাকে বেশ অনেকক্ষণ।এরপর খেলা শুরু হলে মোমেন্টাম হারায় মোহামেডান। নতুন করে খেলা শুরুর কিছুক্ষণ পরেই তপু বর্মনের গোলে সমতায় ফেরে কিংস। এরপর ফাহিম ও মিগুয়েল গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
ফ্লেয়ার মারায় খেলা বন্ধ হওয়াকে টার্নিং পয়েন্ট বলছেন মোহামেডান দলের কোচ আলফাজ। তিনি ম্যাচ শেষে বলেন, ‘খেলা ওই সময় স্থগিত হওয়ায় আমার দলের ছন্দপতন হয়েছে। এরপর আর ফিরতে পারিনি। পরিস্থিতি কিংসের পক্ষে যায় এবং তারা ভালো খেলে ম্যাচটি নিজেদের করে নেয়।’
মোহামেডান সমর্থকরাও এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি ম্যাচের পরিস্থিতি পরিবর্তনে এই ঘটনাই দায়ী। তবে ক্রীড়াঙ্গনে এসব ঘটনা কিন্তু খুব একটা অপরিচিত নয়। মোমেন্টাম নিজেদের পক্ষে নিতে খেলোয়াড় ও সমর্থকরা নানান উপায় অবলম্বন করে থাকেন।
ক্রীড়াঙ্গনে এই বিষয়গুলো অপরিচিত নয়। ইউরোপিয়ান ফুটবলে এসব দৃশ্য নিয়মিতই দেখা যায়। তবে এই ঘটনাগুলো সমীচীন নয়। কারণ ফ্লেয়ারের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট কিংবা চোখের সমস্যা হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা থাকে। তাই খেলোয়াড়দের শারীরিক সমস্যা হতে পারতো। তবে অনেকে এই বিষয়গুলো দেশের ফুটবলের জেগে উঠার আভাস হিসেবে দেখছেন। দেশের ঘরোয়া ফুটবলে দর্শকদের এমন পাগলামীকে হারানো জৌলুস ফিরে পাওয়ার লক্ষণ হিসেবেও দেখছেন অনেকে।
তবে যে যেভাবেই দেখুক, এই ঘটনা ম্যাচ রিপোর্টে তুলবেন ম্যাচ কমিশনার। এরপর ঘটনা বিবেচনায় শাস্তির মুখে পড়তে পারে আয়োজকরা। যেহেতু কিংস অ্যারেনায় ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে তাই এর দায় তাদের উপরই বর্তাবে। এবার দেখার পালা ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টের ভিত্তিতে কেমন সিদ্ধান্ত আসে।