আরেফিন জিসান : মালদ্বীপের চ্যাম্পিয়ন মাজিয়ার বিপক্ষে জিতে এএফসি কাপের নক আউট ও ২০২৩ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বাংলাদেশের জন্য স্লট দখলের পথে আরও খানিকটা এগিয়ে গেল বসুন্ধরা কিংস। ব্যাঙ্গালুরু এফসি ও এটিকে মোহন বাগানের বিপক্ষে পরবর্তী ২ ম্যাচ জিতলে নক আউটের সাথে এসিএল স্লটও নিশ্চিত করবে তারা। তবে আপাত লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যাওয়া এবং আগামীকালকের ব্যাঙ্গালুরু ম্যাচে জয় তুলে নেয়া যা খুবই সম্ভব। রাইভাল ওয়াচে প্রতিপক্ষগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও সেই সাপেক্ষে তাদের সম্ভাব্য ট্যাকটিক্স আলোচনা করবো, যার দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে ব্যাঙ্গালুরু এফসি।
ব্যাঙ্গালুরু এফসি
- কোচ – মার্কো পেজ্জাইউলি (জার্মানি) ব্যাঙ্গালুরু ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের লীগে ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন। গতবারের আইএসএল তথা ২০২০-২১ মৌসুমে ৭ম হয়েছে। এএফসি কাপে সুযোগ হয়েছে ২০১৯-২০ এর লীগে ৩য় হবার সুবাদে। এশিয়াতে খেলছে তারা ৬ষ্ঠ বারের মত। কাতারে বিশ্বকাপে বাছাই এর সময় ভারতীয় জাতীয় দলে ব্যাঙ্গালুরুর খেলোয়াড় ছিল ৫ জন- গুরপ্রীত সিং সান্ধু, সুরেশ সিং ওয়াংজাম, আশিক কুরুনিয়া, উদান্তা সিং ও সুনীল চেত্রী। ব্যাঙ্গালুরুর ৩ জন বিদেশি ফুটবলারঃ
- এলান কস্তা (ডিফেন্ডার, ব্রাজিল)
- মুসাভু কিং (ডিফেন্ডার, গ্যাবন)
- ক্লেইটন সিলভা (ফরোয়ার্ড, ব্রাজিল)
ক্লেইটন ১৪১ গোল নিয়ে থাই টপ টায়ারের সর্বকালের সেরা গোলদাতা। অন্য দিকে ছেত্রী ৪৭ গোল নিয়ে এখন পর্যন্ত আইএসএল এর ২য় সেরা গোলদাতা।
ব্যাঙ্গালুরুর ইতালিয়ান জার্মান কোচ মার্কো ডিপ ডিফেন্ডিং করে খেলতে পছন্দ করে। তবে সে যথেষ্ট ভারসাটাইল কোচ। নিজের দল ও প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা বিবেচনায় খেলিয়ে থাকে সে। ম্যান ম্যানেজমেন্টে দক্ষতার কারণে জার্মান বয়সভিত্তিক দলগুলোতে কোচ হিসেবে এক সময় নিয়মিত ছিল সে। চাইনিজ জায়ান্ট গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে তে ইয়ুথ ডেভলাপমেন্ট প্রোগ্রামে ট্যাকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিল সে প্রায় ৪ বছর। ২০১১ সালে বুন্দেসলীগার ১৮৯৯ হফেনহেইম দলে কিছু সময়ের জন্য কোচিং করিয়েছেন।
এএফসি কাপে এবারের প্লে অফে নেপাল আর্মি ক্লাব কে ৫-০ ও মালদ্বীপের ঈগলস ক্লাব কে ১-০ তে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠে এসেছে তার দল। বাংলাদেশি ক্লাবের বিপক্ষে এশিয়াতে ব্যাঙ্গালুরুর পূর্বের ফলগুলোঃ
- ২-০ ঢাকা আবাহনী (২০১৭)
- ০-২ ঢাকা আবাহনী (২০১৭)
- ১-০ ঢাকা আবাহনী (২০১৮)
- ৪-০ ঢাকা আবাহনী (২০১৮)
- ট্যাকটিকস, ফর্মেশন ও সম্ভাব্য একাদশ
মার্কোর নিজের মন্তব্য অনুযায়ী, ব্যাঙ্গালুরু খেলতে পারে হাই লাইন ডিফেন্সে কুইক বিল্ড আপ ও ট্রাঞ্জিশনে উইং ফুটবল। তবে অবস্থা বেগতিক হলে সে ডিপ ডিফেন্সের আশ্রয়ে যেতে দ্বিধা করবে না, তার দুই জায়ান্ট বিদেশি ডিফেন্ডারদের সাইনিং সেরকমই ইঙ্গিত দেয়। প্লে অফে বিদেশিবিহীন ঈগলসের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরুর খেলা দেখে মনে হয়নি তারা বসুন্ধরা কে হারাবার মত দল। তাদের মিডফিল্ডের অস্তিত্ব ছিল না। দীর্ঘ দিন সার্ভিস দেয়া অজি মিডফিল্ডার এরিক পারতালু কে ভীষণ মিস করেছে তারা। দলটিকে ডিফেন্স ও আপ ফ্রন্টের ডিরেক্ট লিঙ্ক আপে খেলতে দেখা গেছে প্রায়ই যখন কস্তা বা মুসাভু খানিক উঠে এসে লং বল ফেলেছে। এটিকে মোহন বাগানের বিপক্ষে পজেশন ধরে রেখে খেললেও মিডফিল্ডে ইন্টেনসিটি ও ক্রিয়েটিভিটির অভাব ছিল লক্ষ্যণীয়। বসুন্ধরার বিপক্ষেও তাদের মিডফিল্ডের ভালো করবার সম্ভাবনা খুব কমই। কস্তা ও মুসাভু কিছু লং বল খেলাতে পারে কিন্তু বসুন্ধরা ডিফেন্সে তা আতঙ্ক তৈরি করতে পারবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না যেখানে তপু, শাফী ও তারিকের মত এয়ারে খুব উন্নতমানের ফুটবলার আছে। ডিফেন্সে কস্তা ও মুসাভুর শারীরিকতা ও ট্যাকনিক ঈর্ষণীয়। কিন্তু রিফ্লেক্স ও রিকোভারি তে তাদের দুর্বলতাও দেখা গেছে। এটিকে মোহন বাগানের ২য় গোলে কস্তার ডিসিশন মেকিং এ ঘাটতি দেখেছি আমরা যা তার প্রোফাইলের মত ডিফেন্ডার থেকে অপ্রত্যাশিত। তাদের লম্বা স্টেপের সাথে মানিয়ে ওয়ান টু ওয়ান কিংবা পাসিং এ গেলে আক্রমণে বিশেষ সমস্যা হবে না। তবে, এশিয়াতে ভারতীয় কোন ক্লাব কে হেয় করা কখনও উচিত হবে না বিশেষ করে চেত্রীর ব্যাঙ্গালুরু কে। মাজিয়া ম্যাচের পর অস্কার যেমনটা বলেছিল যে, প্রতিপক্ষ কে তারা বল রেখে আক্রমণে আমন্ত্রণ জানিয়ে পরে কাউন্টার এটাকের সুযোগ নিয়েছে। ব্যাঙ্গালুরু কে এভাবে পজেশন রেখে খেলতে দিলে খুব খারাপ কিছু হবে না, রবিনহো-জনাথন-বেকেরা কাউন্টারে ঝড় বইয়ে দিতে পারবে।
ব্যাঙ্গালুরু এফসি সম্ভাব্য ফর্মেশন: ৪-৪-২
সম্ভাব্য একাদশ : গুরপ্রীত, আশিক, কস্তা, মুসাভু, গোলুই, উদান্তা, রোহিত, ওয়াংজাম, জায়েশ, ক্লেইটন, ছেত্রী। প্রেডিকশনঃ বসুন্ধরা কিংস ২-১ ব্যাঙ্গালুরু এফসি