চলছে বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ (বিসিএল)। ঈদের বিরতিতে যাওয়ার আগে শেষ হয়েছে ১১তম রাউন্ড। আর এখন পর্যন্ত ১০ গোল নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের স্ট্রাইকার রাফায়েল টুডু। বিসিএলে ফকিরেরপুল দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও দলটির স্ট্রাইকার রাফায়েল গোলের ফুলকি ছুটিয়ে রয়েছেন সবার উপরে। কিন্তু কে এই রাফায়েল টুডু? কিভাবে উঠে এলেন বিসিএলে? তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যই বা কি? সবকিছুর উত্তর দিয়েছেন অফসাইড এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায়।
রাফায়েল টুডুর সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়টি হলো, গোলের খেলা ফুটবলে গোল ঠেকানো ছিল তার মূল দায়িত্ব। কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে গোলকিপার থেকে নিজেকে স্ট্রাইকার পজিশনে নিয়ে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন তিনি। ২০২০-২১ মৌসুমে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে গোলকিপার হিসেবে বিসিএল খেলেন তিনি। তবে এবার স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে করেছেন ১০ গোল। উত্তরা এফসির বিপক্ষে ম্যাচে করেছেন হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল। ২২ বছর বয়সী রাফায়েল টুডু সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠী থেকে উঠে এসেছেন।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের আমতলী পাড়া গ্রামে বেড়ে উঠা টুডুর ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আলাদা ঝোঁক ছিল। ৪ ভাই ও ২ বোনের বড় পরিবার থেকে শুরুতে খুব একটা সমর্থন পাননি তিনি। তারপরও নিজের অদম্য ইচ্ছায় পাশের গ্রামে গিয়ে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যান তিনি। এরপর অনুশীলনে থাকা অবস্থায় তার অসুস্থ বাবা মারা যান। তারপর থেকে বড় ভাইদের সমর্থনে ফুটবল চালিয়ে যান। পরিবারে অর্থনৈতিক দৈন্যতা থাকলেও সেটাকে টুডুর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে বাঁধা হতে দেননি তার বড় তিন ভাই।
রাজশাহীর কিশোর ফুটবল একাডেমি থেকে পেশাদার ফুটবলার হওয়ার যাত্রা শুরু রাফায়েল টুডুর। সেখানে শুরুতে গোলকিপার হিসেবে শুরু করলেও স্থানীয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন তিনি। তারপর গোলকিপিং পজিশন ছেড়ে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার আগ্রহের কথা জানালেও রাজি হননি কোচ। নিজেকে স্ট্রাইকার হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি বলেন,
‘আমি শুরুতে গোলকিপার হিসেবে খেলা শুরু করলেও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলি। এরপর আমার কোচকে বলি আমি গোলকিপার হিসেবে তেমন উন্নতি করতে পারবো না, আমি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে চাই। কিন্তু তখন কোচ আমাকে গোলকিপার হিসেবেই খেলতে বলে। কোচের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি একাডেমিতে গোলকিপার হিসেবেই খেলি। এরপর স্থানীয় এক টুর্নামেন্টে আমি অন্য দলের হয়ে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে আমার একাডেমির বিপক্ষেই গোল করি। পরে আমার কোচ আমাকে একাডেমিতে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার সুযোগ দেন। সেখান থেকেই শুরু।’
চলতি বিসিএলে ইতোমধ্যেই ১১ ম্যাচে ১০ গোল করেছেন রাফায়েল টুডু। তার দল ফকিরেরপুল ইয়ং মেন্স ক্লাব ১১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। চলতি লিগে দলগুলোর আরো ৩ করে ম্যাচ বাকি রয়েছে। এই ম্যাচগুলোতে নিজের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সঙ্গে দলকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ করতে চান তিনি। এ বিষয়ে টুডু বলেন,
‘এখনো ৩ টা ম্যাচ আছে। আমি যেহেতু ১০ গোল নিয়ে শীর্ষে রয়েছি, বাকি ম্যাচগুলোতে গোল করে নিজের দলকে আরো ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো এবং বিসিএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার চেষ্টা করবো।’
এরপর এক প্রশ্নের জবাবে লিগে দেশি স্ট্রাইকার না খেলানোর প্রভাবটা জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে পড়ছে বলেও অভিমত দেন রাফায়েল টুডু। একইসঙ্গে নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখে ভবিষ্যতে লাল সবুজের জার্সিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুপ্ত বাসনার কথাও জানান তিনি। লিগে দেশি স্ট্রাইকার না খেলানো এবং নিজের জাতীয় দলে খেলার লক্ষ্যের বিষয়ে টুডু বলেন,
‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রত্যেকটা ক্লাবে স্ট্রাইকার হিসেবে বিদেশিরা খেলে। দেশি স্ট্রাইকারদের সেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়না। এর প্রভাবটা বাংলাদেশ দলে পড়ছে। আমার বিশ্বাস আমি যদি ঈশ্বরের আশীর্বাদে ওই পর্যায়ে যেতে পারি, তাহলে আমি আমার পজিশনটা ধরে রাখবো এবং লাল সবুজের জার্সি গায়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’
এরপর কাকে দেখে ফুটবলে আসা কিংবা কোন ফুটবলারকে নিজের আদর্শ মানেন এমন একটা প্রশ্নের জবাবে টুডু বলেন,
‘বিশ্বের মধ্যে আর্জেন্টাইন লিওনেল মেসি আমার আদর্শ। মেসিকে আমি খুব পছন্দ করি। বাংলাদেশের মধ্যে রাকিব হোসেন ভাই আমার আদর্শ।’