ঘরের মাঠে যেনো জয়রথ থামছেই না বসুন্ধরা কিংসের। চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে নবাগত স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে অনাকাঙ্ক্ষিত হারে লিগ মিশন শুরু করা বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এরপর থেকে টানা ৮ ম্যাচে অপরাজিত। ইনজুরি জর্জরিত স্কোয়াড নিয়েও জয়ের পথেই রয়েছে অস্কার ব্রুজনের দল। বুধবার লিগের নবম রাউন্ডে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ৪-৩ গোলের দারুন জয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান আরো সুসংহত করেছে বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান তারকা রবসন রবিনহোর পাশাপাশি ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেই জোড়া গোল করেছেন মতিন মিয়া। বাকি গোলটি এসেছে ইরানিয়ান ডিফেন্ডার খালেদ শাফেঈয়ের পা থেকে। অপরদিকে সাইফের হয়ে গোল করেছেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমফন সানডে, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম এবং রিয়াদুল হাসান রাফি।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় কিছু কেই বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়ান রবসন। সোহেল রানার পাস থেকে সাইফের ডিফেন্ডারদের দর্শক বানিয়ে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের আচমকা নিচু শটে দুরের পোস্টে লক্ষ্যভেদ করে এবারের লিগে নিজের নবম গোলটি করেন রবসন। তবে ম্যাচের ১৮তম মিনিটেই কিংস রক্ষণের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমতায় ফেরে সাইফ স্পোর্টিং। সাইফের উজবেক মিডফিল্ডার আসরোর গফুরভের বাড়ানো থ্রু বলে অফ সাইড ফাঁদ ভেঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে ফেলে দেন কিংস গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো। পড়ে গিয়ে যখন পেনাল্টির আবেদনে মত্ত ফাহিম ও সাইফের দর্শকরা সেখানে হঠাৎই বল পেয়ে আলতো টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমফন সানডে। কিন্তু বেশিক্ষণ সমতায় থাকতে পারেনি সাইফ। ২৬তম মিনিটে মতিন মিয়ার গোলে আবারও ব্যবধান বাড়ায় বসুন্ধরা কিংস। সাইফের মিডফিল্ডার মারাজের ব্যাক পাস ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারা নাসিরুলের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে সাইফের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন মতিন মিয়া। এরপর প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের প্রচেষ্টা অল্পের জন্য জাল খুঁজে পায়নি। ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় কিংস।
বিরতি থেকে ফিরে আরও আক্রমণাত্মক বসুন্ধরা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দু’দফা আক্রমণে যায় কিংস। ৪৮তম মিনিটে সহজতম সুযোগ নষ্ট করেন বিপলু আহমেদ। গোলরক্ষক শান্তকে বোকা বানিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিলেও রিয়াদুল হাসান রাফিকে পরাস্ত করতে পারেননি এই মিডফিল্ডার। বিপলুর নেওয়া দুর্বল সহজ গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন রাফি। এর দুই মিনিট পরেই রবসনের নিচু ক্রসে দুরের পোস্টে টোকা দিতে পারেন নি মতিন মিয়া ও ইয়াসিন আরাফাত। তবে ম্যাচের ৫৫তম মিনিটে অমার্জনীয় এক ভুল করে বসেন সাইফের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। ডি বক্সে জামালের পাস সতীর্থের বদলে খুঁজে নেয় মতিন মিয়াকে। আর বক্সের ভেতরে পাওয়া এমন লোভনীয় সুযোগ নষ্ট করেননি মতিনও। ডান পায়ের প্লেসিং শটে নিজের জোড়া পূরনের সাথে দলকে ৩-১ গোলের লিড এনে দেন এই ফরোয়ার্ড।
তবে সাত মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফিরে আসে সাইফ। ৫৯ মিনিটে এমফন সানডের পাসে দুরের পোস্টে অরক্ষিত থাকা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম সহজেই বল জালে জড়ান। এরপর ৬৭তম মিনিটে এমফন সানডের নেওয়া কর্নার কিকে জটলায় বল পেয়ে ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করে সাইফকে সমতায় ফেরান রাফি। কিন্তু ১০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি সাইফের সমতায় থাকা। রবসন রবিনহোর কর্নার থেকে ইরানিয়ান ডিফেন্ডার খালেদ শাফেঈর হেড এমেরি বাইসেঙ্গের গায়ে লেগে বল জালে জড়ায়। ফলে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস। শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত স্কোরলাইনে কোনো পরিবর্তন না আসলে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে অস্কার ব্রুজনের দল। এই জয়ে ৯ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকল বসুন্ধরা কিংস। সমান ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে নেমে গেছে সাইফ স্পোর্টিং।
দিনের আরেক ম্যাচে মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ড্র হয়েছে আবাহনী-শেখ জামাল বিগ ম্যাচ। গোলশূন্য ড্রয়ের ম্যাচে খলনায়ক বনে গিয়েছেন আবাহনীর কোস্টারিকান তারকা দানিয়েল কলিন্ড্রেস। পেনাল্টি মিস করে শেখ জামালের বিপক্ষে আবাহনীর জয়টাও হাতছাড়া করেছেন তিনি। এছাড়াও রাফায়েল অগাস্ত, ইমন বাবু, ডরিয়েলটন, রাকিবরা যেমন গোল করে নিজের দলকে এগিয়ে নিতে ব্যার্থ হয়েছেন তেমনি সলোমন কিং, সলোমন সিল্লাহ, চিনেদু ম্যাথিউরাও ব্যার্থ হয়েছেন আবাহনীর জালে বল জড়াতে। ফলে গোলশূন্য ড্র করে ১ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে দুদলকে। এই ড্রতে সমান ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস থেকে ৬ পয়েন্ট ব্যাবধানে আবাহনী ও ৭ পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লো শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। উল্লেখ্য প্রথম লেগে বসুন্ধরা কিংসের বাকি দুই ম্যাচ আবাহনী ও শেখ জামালের বিপক্ষেই।