ফুটবল প্রেমীদের কাছে ফুটবলাদের এজেন্ট বিষয়টি অপরিচিত নয়। কোনো ফুটবলারের এজেন্ট কোন ক্লাবে যোগাযোগ করছে তা দিয়েই সেই ফুটবলারের পরবর্তী গন্তব্যের ধারণা পেয়ে যায় ফুটবল সমর্থকরা। বাংলাদেশী কয়েকজন ফুটবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করলেও তারা ফিফা কর্তৃক স্বীকৃত ছিলো না, তবে প্রথমবারের মতো ফরিদপুরের নিলয় বিশ্বাস অর্জন করেছে ফিফা কর্তৃক এজেন্ট লাইসেন্স। বাংলাদেশে প্রথম এবং বর্তমানে একমাত্র ফিফা স্বীকৃত ফুটবল খেলোয়াড়দের এজেন্ট তিনি। এই অর্জন নিয়ে অফসাইডের সাথে নিলয়ের আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল-
অফসাইড : খেলোয়াড়দের দলবদলে ফিফা ফুটবল এজেন্টদের কাজ কি তা অনেকেই জানেন না, এজেন্টদের কাজ নিয়ে সংক্ষেপে বলুন?
নিলয় : এজেন্টরা মূলত একটি খেলোয়াড়ের সমস্ত দলবদলের প্রক্রিয়াটি দেখাশোনা করে। দলবদলের সময় অনেক নিয়ম কানুন মাথায় রেখে কাগজপত্র তৈরি করতে হয়, যাতে পরবর্তীতে ক্লাব কর্তৃক খেলোয়াড়রা কোনভাবে প্রতারিত না হয়। খেলোয়াড়রা যাতে খেলা মনযোগ দিতে পারে, এই জন্য এইসব জটিল বিষয়গুলো দেখা শোনা করতে এজেন্টদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।
অফসাইড : ফুটবলে এজেন্ট হওয়ার বিষয়টি কিভাবে শুরু হলো?
নিলয় : ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি একটা টান ছিলো। সেটা থেকে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছাও ছিলো। বিকেএসপি’তে ছিলাম, কিন্তু ইঞ্জুরির কারনে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। এর পর থেকে ফুটবল বিষয়ক বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছি ২০১৮ সাল থেকে। পরে দেখতে পাই ফুটবলের এজেন্ট বিষয়টিতে বাংলাদেশে তেমন কোন লোকজন নেই। তাই এদিকে চেষ্টা করতে শুরু করি।
অফসাইড : এজেন্ট লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি কি ছিলো?
নিলয় : লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ফিফাতে সরাসরি আবেদন করতে হয়। এরপর ফিফা সব কাগজ-পত্র যাচাই বাচাই করে একটি পরীক্ষার আয়োজন করে। পরীক্ষায় পাস করলেই ফিফাকে লাইসেন্স ফি দিয়ে এজেন্ট লাইসেন্সিং সম্পন্ন করা যায়। এবার প্রায় ৪০০০ লোক বিভিন্ন দেশ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ১৯০০ লোক পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আমিই একমাত্র পরীক্ষায় দিয়েছি এবং পাশ করেছি।
অফসাইড : বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃত এজেন্ট আপনি, তবে অনেক বাংলাদেশীকেই এর পূর্বে খেলোয়াড়দের দলবদলে এজেন্টের ভূমিকা পালনে দেখা গিয়েছে। এই লাইসেন্সের ফলে আপনি কি সুবিধা পাবেন এবং লাইসেন্স বিহীন এজেন্টদের মাধ্যমে দলবদলে কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে খেলোয়াড়রা?
নিলয় : ফিফা স্বীকৃত হওয়ায় বর্তমানে আমি ফিফার যে কোন সদস্য দেশে লীগে কাজ করতে পারবো৷ এছাড়া আগামী ১ অক্টোম্বর থেকে লাইসেন্স ব্যতীত কেউ কাজ করতে পারবে না। আর যাদের লাইসেন্স নেই, ফিফা তাদের সাথে খেলোয়াড়দের কাজ করতে নিষেধ করে, কেননা এতে চুক্তিতে কোন আইনী সমস্যা হলে ফিফা সহায়তা করতে পারবে না।
অফসাইড : বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রায় ক্লাব থেকে পূর্ণ টাকা না পাওয়ার অভিযোগ শোনা যায়। এরপরও এজেন্টের মাধ্যমে কেন চুক্তি করে না বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা?
নিলয় : আমাদের দেশটা ছোট এবং ফুটবলের কাঠামোও শক্তিশালী নয়। ফলে খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলো সরাসরিই যোগাযোগ করে চুক্তি করে নেয়। পরবর্তীতে তারা অনেকেই সমস্যা সম্মুখিন হয় এবং আইনী সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
অফসাইড : এরপরের লক্ষ্য কি আপনার?
নিলয় : বিদেশী খেলোয়াড়দের নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ করেছি। এখন আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করা, যাতে বাংলাদেশের ফুটবলের কাঠামোগত উন্নতি হয়।