বাংলাদেশ ফুটবল দল কামব্যাক করতেও জানে! হঠাৎ করেই এই কথাটা শুনলে আপনার কাছে হাস্যকর মনে হতেই পারে। নামতে নামতে ফিফা র্যাংকিংয়ে ১৯২ তে নামা দলটার কাছে কামব্যাক শব্দটাই হয়তো বিলাসিতা। তারপরও বাংলাদেশ সেটা করে দেখিয়েছে পরপর দুই ম্যাচে। আর এই দুর্দান্ত কামব্যাক দীর্ঘ ১৪ বছর পর লাল সবুজের প্রতিনিধিদের পৌঁছে দিয়েছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি ফাইনালে। বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ভুটানের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। আর এই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বি গ্রুপের রানার্স আপ হয়ে সাফের সেমিতে পৌঁছালো হাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা।
ভুটানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই অবশ্য সুসংবাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। দিনের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে লেবাননের ১-০ গোলের জয়ে সেমির স্বপ্ন আরো কাছে চলে এসেছিল। ভুটানের বিপক্ষে ড্র করলেই ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো সাফের শেষ চারে খেলার টিকেট পাবে বাংলাদেশ। এমনকি ন্যূনতম ১ গোলের ব্যবধানে হারলেও সুযোগ থাকতো জামালদের। এমন সমীকরণ নিয়ে ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মিনিটে শেখ মোরসালিনের কাট ব্যাকে সোহেল রানার কাছের পোস্টের নেওয়া শট আটকান গোলরক্ষক। টানা দুই ম্যাচ হেরে আসা ভুটানের সামনে জয়ের বিকল্প ছিল না, দলটি প্রথম আক্রমণে ওঠে নবম মিনিটে। তবে শেরুব দর্জির শট ফেরান আনিসুর রহমান জিকে। দ্বাদশ মিনিটে পারেননি ঝাঁপিয়েও পারেননি। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিসেন্দা দর্জি। এরপর ১৬তম মিনিটে ভালো সুযোগ তৈরি হয় বাংলাদেশের সামনে। মোহাম্মদ সোহেল রানার ক্রস গোলরক্ষকের গ্লাভস হয়ে বক্সেই পেয়ে যান রাকিব। কিন্তু কোনাকুনি পজিশন থেকে নিজে শট না নিয়ে তিনি বাড়ান মোরসালিনকে। কিন্তু বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটেই বড় বাঁচা বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ৩০ গজ দূর থেকে নিমা ওয়াংদির বুলেট গতির শট জিকোকে ফাঁকি দিলেও ক্রসবার কাঁপিয়ে ফিরে।
হঠাৎ খেই হারানো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ্য পেয়ে যায় ২১তম মিনিটে। ভুটানের থ্রোয়ের পর মোহাম্মদ সোহেল চার্জ করে বল কেড়ে নিয়ে বাড়ান রাকিবের উদ্দেশে। তিনি পাস দেন মোরসালিনকে। শুরুর দিকে এই ফরোয়ার্ড বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি, তবে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের পা হয়ে বল ফের তার পায়ে ফেরে। এবার আর ভুল করেননি। বাঁম পায়ের জোরালো শটে সমতার স্বস্তি এনে দেন ১৭ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডার। মোরসালিনের গোলের পরই জড়তা কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৩০তম মিনিটে আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। মোরসালিনের বাড়ানো বলে ভালো পজিশনে থাকা রাকিবের সামনে শট নেওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু তিনি সাইড ভলিতে বল বাড়াতে চেয়েছিলেন বক্সে ফাঁকায় থাকা জামালকে। তবে ভাগ্য ভালো যে, সামনে থাকা ফুঙ্কতসো জিগমের গায়ে লেগে জালে জড়ায়। এরপর ৩৬তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ম্যাচ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন রাকিব। বক্সের বাইরে থেকে বল পেয়ে দারুন দক্ষতায় বক্সে ঢুকে বাইলাইনের কাছ থেকে প্রায় শূন্য ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল। রাকিব বক্সে ফাঁকায় থাকা জামালকে পাস না দিলে নষ্ট হয় প্রথমটি। এরপর মোরসালির শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে।
৩-১ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ বিরতির পর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। আর লিড নিয়ে সেমি ফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় খুব একটা তেরেফুরে আক্রমনে যায়নি দল। ৬১তম মিনিটে তিসেন্দার শট যায় বাইরে। ৭২তম মিনিটে মোরসালিনকে তুলে আমিনুর রহমান সজীব এবং ৮৬তম মিনিটে সোহেল রানার জায়গায় রবিউল হাসানকে নামান কোচ। এই অর্ধে রক্ষণ জমাট রেখে খেলতে থাকে দল। ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা ছিল না ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ মুঠোয় থাকায়। অপেক্ষা ছিল কেবল শেষের বাঁশির। তা বাজতেই বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে ওঠে দল। এই জয়ে ১৪ বছরের না পারার ব্যর্থতা ঘুচিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। আর ঈদুল আযহার আগের দিন দেশবাসীকে দল দারুন এক ঈদ উপহার।