সারাবিশ্বের হট টপিক এখন ‘ফাইনালিজিমা‘। ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিগ ম্যাচ এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু এই বিগ ম্যাচের দিন মাঠে নামছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলও। ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরের সি জালাক হারুপাত স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হবে ম্যাচ। এই ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর আবারো ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
ফিফা রেংকিংয়ে বাংলাদেশের চাইতে বেশ এগিয়ে ইন্দোনেশিয়া। সবশেষ প্রকাশিত ফিফা রেংকিংয়ে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ১৫৯তম স্থানে এবং বাংলাদেশের বর্তমান ফিফা রেংকিং ১৮৮। রেংকিংয়ের মতো পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশের চাইতে এগিয়ে ইন্দোনেশিয়া। এখন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ৬ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৪ টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। আর বাকি দুই ম্যাচের একটি হয়েছে ড্র আর অপর ম্যাচে ইন্দোনেশিয়াকে ওই একবারই হারানোর সুখস্মৃতি বাংলাদেশের।
ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটি মূলত বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের জন্য প্রস্তুতির অংশ। এবারের এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ স্কোয়াডে হানা দিয়েছে একের পর এক সমস্যা। ইনজুরিতে গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল এবং শৃংখলাভঙ্গের দায়ে ক্যাম্পে যোগ দিতে পারেননি নাবিব নেওয়াজ জীবন। এছাড়া ইনজুরিতে সাদ উদ্দিন, তারিক কাজী, মতিন মিয়া, সুমন রেজা ,মাসুক মিয়া জনি ও হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস ক্যাম্প থেকেই বিদায় নিয়েছেন। আর পাসপোর্ট সমস্যায় শেষ মুহূর্তে দল থেকে বাদ পড়েছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মিডফিল্ডার সোহেল রানা।
তবে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন গোলকিপার মোহাম্মদ নাঈম, মিডফিল্ডার পাপন সিং ও ফরোয়ার্ড সাজ্জাদ হোসেন। এছাড়া জামাল ভুঁইয়া, আনিসুর রহমান জিকো, ইয়াসিন আরাফাত, রাকিব হোসেন, সোহেল রানা, আতিকুর রহমান ফাহাদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিমদের মত জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্যরা দলে আছেন। তাদের নিয়েই এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাভিয়ের ক্যাবরেরার। তবে শেষ মুহূর্তে ইন্দোনেশিয়ায় দলের সঙ্গে অনুশীলনে চোটে পরে দলের চিন্তা বাড়িয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের মিডফিল্ডার সোহেল রানা। এছাড়া দলের সঙ্গে সরাসরি মালয়েশিয়ায় যুক্ত হওয়ায় ইন্দোনেশিয়া ম্যাচে মাহবুবুর রহমান সুফিলের সার্ভিসও পাচ্ছেন না ক্যাবরেরা।
অপরদিকে ইন্দোনেশীয়ার ডাগআউটে নজর দিলেই দেখা মিলবে একজন অভিজ্ঞ কোচের। ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলে নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন এই ৫১ বছর বয়সী হাই-প্রোফাইল এবং প্রফেশনাল কোচ যিনি ফুটবলার এবং কোচ উভয় ভূমিকাতেই জিতেছেন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব। খেলোয়াড়ি জীবনে ১৯৯২-১৯৯৭ এ সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয় দলের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।
দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ ক্লাব সিয়ংনাম চুনমার লিজেন্ডে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ক্লাবটির হয়ে প্রায় ৩০০টি ম্যাচ খেলার পাশাপাশি ক্লাবের হয়ে জিতেছেন ৬টি কে-লীগ টাইটেল এবং ২ বার জিতেছেন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব। ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ করে ২০০৮-১২ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন নিজের সাবেক ক্লাবের। ক্লাবের হেড কোচের দায়িত্ব নিয়ে ২০১০ সালে ক্লাবকে এনে দিয়েছিলেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা।
২০১৫ সাল থেকে দায়িত্ব পান দক্ষিণ কোরিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ অর্থাৎ অলিম্পিক দলের। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের রানারআপ হলে ২০১৬ সালে দায়িত্ব পান সন হিউং মিন দের জাতীয় দলের। এশিয়ান জায়ান্টদের জাতীয় দলের দায়িত্বে ১ বছর মেয়াদের মধ্যেই জয়ী হন ইস্ট-এশিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে। তার কোচিংয়েই ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ২০১৪ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারায় দক্ষিণ কোরিয়া। এরপর ২০১৯ সালে শিন তাই ইয়ং দায়িত্ব নেন ইন্দোনেশিয়া জাতীয় দল এবং অলিম্পিক দলের। ২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়া জাতীয় দলকে আশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রানারআপ করেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়া জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন কোচিং স্টাফকেও তিনি নিজের সাথে নিয়ে আসেন। ফলে নতুন ভাবে গতি পায় ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল।
অভিজ্ঞ এই কোচের অধীনেই এলকান বাগোট, প্রাতামা আরহান, মার্সেলিনহো ফেরদিনান, ইলহাম রিও, সাদিল রামদানিরা বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরার জন্য হতে পারেন দুশ্চিন্তার বড় কারণ। অপরদিকে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হাভিয়ের ক্যাবরেরা শিষ্যদের পায়ে এখনো দেখেননি গোল। তার অধীনে খেলা দুই ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে হার এবং মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছে বাংলাদেশ। তবে ফলাফল ছাপিয়ে বাংলাদেশের চিরায়ত গোল স্কোরিং সমস্যা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাইতো এই সমস্যা সমাধান করার বড় চ্যালেঞ্জ ক্যাবরেরার সামনে। দেখা যাক ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে নিজের ট্যাকটিক্সের কতোটা বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেন বাংলাদেশ কোচ।