অবশেষে সোহাগকান্ডের পর্দা উন্মোচন করলো বিশেষ তদন্ত কমিটি। তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে দায়িত্বে অবহেলা করে কিভাবে নিজের কার্য হাসিল করেছেন বাফুফের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ও তার অনুচররা। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রক্তচোষার মতো করে অর্থের আত্মসাৎ করেছেন সুপারসনিক গতিতে। তবে সত্য কখনো চাপা থাকে না। এই চিরন্তন সত্যকে আবারো প্রমানিত করলো বাফুফের তদন্ত কমিটি। তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বড় রকমের শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে চেনামুখের আড়ালে থাকা অচেনা চরিত্রগুলো।
ফিফার তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আবু নাইম সোহাগ ও তার অনুচরদের বিরুদ্ধে ৫ টি বড় রকমের অভিযোগ প্রমাণসহ তুলে ধরেছেন কাজী নাবিল আহমেদের তদন্ত কমিটি। প্রথম অভিযোগ ছিলো ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় সংক্রান্ত। অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের উপর বাফুফে নানান কর্মকান্ডের দায়িত্ব অর্পণ করেন। কিন্তু অর্পিত দায়িত্বে অর্থের গোলযোগ তৈরী করেছেন ক্ষমতার শীর্ষে বসা থাকা সেই সকল লোকজন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ গুলো হলো ক্রীড়া সরঞ্জাম ক্রয়, ফুটবল ক্রয়, বিমানের টিকেট ক্রয়, নতুন পানির লাইন প্রতিস্থাপন এবং ঘাস কাটার মেশিন ক্রয়। প্রত্যেকটা অভিযোগের বিষয়ের সাথে অর্থের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিলো। সব কান্ডেই অর্থের কারচুপি করেছেন সোহাগ গং। কিন্তু যখন অভিযুক্ত সদস্যদের কাছে সেই অর্থের হিসাব চাওয়া হয় তখন তারা কোনোরূপ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি। তারা ছিলেন নির্বিকার। প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন।
ফিফার তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বাফুফের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে সর্বেসর্বা রূপ প্রতীয়মান করা হয়েছে। ফিফার মত অনুযায়ী বাফুফের সকল দায়দায়িত্ব তার উপর বর্তায় কারণ বাফুফের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাফুফের সকল প্রশাসন, হিসাবরক্ষণ এবং পরিচালনার সকল ভার ছিলো তার উপরই। ফিফার কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের রিপোর্টে বলা হয় যে সমস্ত অভিযোগ তদন্ত করা হয়েছে, যে সমস্ত ভুলভ্রান্তি রয়েছে, টেন্ডার প্রক্রিয়া যেসকল অনিয়ম করা হয়েছে সেসব কাজের প্রত্যক্ষ মদদদাতার চরিত্রে ছিলেন আবু নাইম সোহাগ। তার মাধ্যমেই এইসকল অনৈতিক কাজ পরিচালিত হতো। তিনি সকল কাজের হোতা ভূমিকায় থাকতেন। বাফুফের তদন্ত কমিটি দাবি করেন আবু নাইম সোহাগ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ জড়িত ছিলেন। যারা তার সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন। তদন্ত কমিটির মত অনুযায়ী তারা কোনোভাবে তাদের ব্যর্থতা থেকে রেহাই পেতে পারেন না।
এই কাজে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন অপারেশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান, এসিস্ট্যান্ট হেড অফ ফিন্যান্স অনুপম সরকার, চীফ ফিন্যান্স অফিসার আবু হোসেন। তারা নিজেদের কাজে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন এবং নিজেদের দায়ও স্বীকার করেছেন। বাফুফের তদন্ত কমিটি এই তিন ব্যক্তি বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান করার পাশাপাশি তাদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন। এছাড়া গ্রাসরুট ম্যানেজার হাসান মাহমুদ এবং কম্পিটিশন ম্যানেজার জাবের বিন তাহেরও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বে পালন ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আহবান জানান।
অর্থ আত্মসাৎ এর এই কর্মকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি বাফুফের ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু সুপারিশ করেছেন। সুপারিশসমূহ হলো পণ্যসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে তার একটি প্রক্কালন তৈরি করতে হবে। প্রক্কালন তৈরি করে তা উর্ধ্বর্তন কর্মকর্তাকে এই প্রসঙ্গে অবগত করে অনুমোদন নিতে হবে। প্রক্কালন অনুমোদনের পর তা কোটেশন ও উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
কোটেশন বা দরপত্রের কম্পারেটিভ স্টেটমেন্ট তৈরি করে দরপত্রের সাথে আর্নেস্ট মানি নিতে হবে। কম্পারেটিভ স্টেটমেন্টে উর্ধ্বর্তন কর্মকর্তার অনুমোদন নিয়ে লিখিত ওয়ার্ক অর্ডার দিতে হবে। পাশাপাশি মালামাল গ্রহণের সময় সঠিকভাবে মালামাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে। বিল অনুযায়ী সকল মালামাল গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিতে হবে। পরিশেষে হিসাব রক্ষণ বিভাগ কর্তৃক সকল টেন্ডার প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।