গত জুনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমি ফাইনালে খেলে সবার প্রশংসা কুড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরার অধীনে মাঠে নামা একঝাঁক সাহসী যোদ্ধা স্বপ্নবাজ করে দেশের ফুটবল প্রেমীদের। সাফের সেমি ফাইনালে কুয়েতের কাছে অতিরিক্ত সময়ে গোল হজম করে বিদায় নিলেও বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণের আগ মুহূর্তে আনিসুর রহমান জিকো, তপু বর্মন, শেখ মোরসালিন, রিমন হোসেন ও তৌহিদুল আলম সবুজের মদ নিয়ে বিমানবন্দরে ধরা পড়ার ঘটনায় কলঙ্কিত হয় দেশের ফুটবল অঙ্গন।

চূড়ান্ত শাস্তি না এলেও সাময়িক ভাবে দল ঠিক নির্বাসিত করায় জিকো, তপু ও মোরসালিনের মত নির্ভরযোগ্য ফুটবলারদের ছাড়াই মালদ্বীপে যায় বাংলাদেশ। তবে মালদ্বীপ থেকে খালি হাতে ফেরেনি হাভিয়ের ক্যাবরেরা বাহিনী। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে দেশের ফুটবল প্রেমীদের হতাশ করার আভাস দিলেও ইনজুরি সময়ে মান বাঁচান সাদ উদ্দিন। বদলি হিসেবে নেমে গোল করে দলকে মহামূল্যবান এক পয়েন্ট এনে দেন সিলেটের এই ফুটবলার। ফলে ১-১ গোলের সমতায় প্রথম লেগ শেষ করে বাংলাদেশ। এবার আগামী ১৭ অক্টোবর ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগে মালদ্বীপের মোকাবেলা করার পালা।

মালদ্বীপের ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকরাও অবশ্য ছেড়ে কথা বলেনি। ফলে শুরু থেকেই জমে ওঠে লড়াই। ম্যাচের ১৮ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল বক্সে ফাঁকায় পেয়ে যান মালদ্বীপ অধিনায়ক আলী ফাসির। তবে তার গতিময় শট গোলরক্ষক মিতুল মারমার হাত ছুঁয়ে পোস্টে আটকে যাওয়ায় রক্ষা পায় বাংলাদেশ। বল দখলে রেখে খেলার চেষ্টা করা বাংলাদেশ প্রথম আক্রমণে ওঠে ২৬তম মিনিটে। সোহেল রানার বাড়ানো বলে মালদ্বীপের তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের বাইরে থেকে মাটি কামড়ানো শট নেন রাকিব হোসেন। তবে রাকিবের সেই শট অল্পের জন্য খুঁজে পায়নি জাল। এরপর ৩৫তম মিনিটে রাকিবের আরেকটি চেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি। সোহেল রানার কর্নার থেকে রাকিবের হেডে বল এবারও পোস্টের বাইরে। প্রথমার্ধে বাংলাদেশের সেরা সুযোগটা নষ্ট হয়েছে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের ভুলে। পোস্টের মুখে মালদ্বীপ ডিফেন্ডার আনাফ রশীদের ভুলে পেয়ে যান ফাহিম। গোল করার সহজতম সুযোগ নষ্ট করে গোলে শট নেওয়ার পরিবর্তে ফাহিম শট নেন পোস্টের বাইরে। ফলে গোলশূন্য অবস্থায় থেকেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

বিরতির পর ৫৩তম মিনিটে রাকিব আবারও হতাশ করেন দলকে। সোহেল রানার দূরপাল্লার ক্রস থেকে বসুন্ধরা কিংস ফরোয়ার্ডের আড়াআড়ি শট এবারও জড়ায়নি জালে। এর তিন মিনিট পর আরেক ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমও শট নেন পোস্টের বাইরে। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত মালদ্বীপ ৬৫তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই বসেছিল। বাঁ প্রান্ত ধরে বিপজ্জনক এক ক্রস করেছিলেন হামজা মোহাম্মদ। লক্ষ্য ছিল আলী ফাসির। বল ফাসিরের পায়ে অবধি পৌঁছানোর আগেই বল বিপদমুক্ত করে দলকে বাঁচান অভিষিক্ত ডিফেন্ডার শাকিল হোসেন। পুরো ম্যাচে হালি খানেক সুযোগ নষ্ট করা ফাহিম ৭০ মিনিটে আবারও হতাশ করলেন বাংলাদেশকে। ডান প্রান্ত ধরে রাকিব হোসেনের ক্রস ধরে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেই গোল পেতেন ফাহিম, কিন্তু চলতি বলে শট নিতে গিয়ে বল বাইরে পাঠালেন ক্রসবারের ওপর দিয়ে। সুযোগ নষ্টের খেসারত হিসেবে ফাহিমকে পরের মিনিটেই তুলে নিয়ে মুজিবর রহমান জনিকে নামান বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তুলে নেওয়া জামাল ভূঁইয়াকেও। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রবিউল হাসান।

রবিউল মাঠে নেমেই তৈরি করেন ভালো একটা সুযোগ। ৭৪তম মিনিটে নেন দারুণ এক শট। তবে সেই শট ফিস্ট করে এবারও লাল-সবুজদের হতাশায় ডোবান মালদ্বীপ গোলরক্ষক হুসেইন শরীফ। এরপর ৭৭তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ওঠে মালদ্বীপ। এবারও বিপদ ঘটাতে পারতেন আলী ফাসির। বাংলাদেশের গোল মুখে ফাঁকায় বল পান মালদ্বীপ অধিনায়ক। তার শট মিতুল মারমার মাথায় লেগে দিক পাল্টে চলে যায় বাইরে। নিজেরা সুযোগ নষ্ট করে ৮৭তম মিনিটে মালদ্বীপকে উল্টো গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। বদলি ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম হুসেনের ক্রস ঠেকাতে গিয়ে নিজ সতীর্থ শাকিলের গায়ে হেড নেন ডিফেন্ডার তারিক কাজী। বল শাকিলের গায়ে প্রতিহত হয়ে পড়ে আরেক বদলি ফরোয়ার্ড হাসান নাজিমের পায়ে। এমন উপহার পাওয়া সুযোগ একদমই নষ্ট করেননি নাজিম। মিতুলকে পরাস্ত করে এগিয়ে দেন মালদ্বীপকে।

পিছিয়ে পড়ার পরই মরিয়া হয়ে উঠে বাংলাদেশ। অতিরিক্ত সময়ে বাঁ প্রান্ত থেকে রাকিবের ক্রস থেকে মালদ্বীপ গোলরক্ষকের পায়ের মাঝখান দিয়ে বল জালে জড়িয়ে বাংলাদেশের হার এড়ান বদলি ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে গোল করে নায়ক হয়েছিলেন সাদ উদ্দিন। সেই গোলের পর তার ভুলে সাফ, চার জাতি টুর্নামেন্টে হেরেছিল বাংলাদেশ। চার বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল পেয়ে সব পাপের প্রায়শ্চিত্তই যেন করলেন বসুন্ধরা কিংসের এই ডিফেন্ডার। মালেতে ড্র হওয়ায় বাছাইপর্বে যাওয়ার রাস্তাটা এখন উন্মুক্ত দুই দলের জন্যই। ১৭ অক্টোবর কিংস অ্যারেনায় প্রাক বাছাইয়ের দ্বিতীয় লেগে যে দল জিতবে, তারাই খেলবে আগামী বছর থেকে শুরু হওয়া ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। আর ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিশ্চয়ই সে সুযোগ অর্জনে নিজেদের সেরাটা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।

Previous articleমেসির পাশে বাংলাদেশী ফুটবলার!
Next articleসাময়িক নিষিদ্ধ হলেন তপু-জিকো-সবুজ; জরিমানা হলো মোরসালিন-রিমনের!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here