গতকাল(৭ জানুয়ারি) সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনের উত্তাপ মাঠ ঘাট ছাড়িয়ে প্রবেশ করেছিল দেশের ফুটবল অঙ্গনেও। এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন ফুটবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও লড়াইয়ে নামেন, যার মধ্যে কারো প্রতীকী চিহ্ন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা আবার কেউ বা লড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার পর ফুটবল অঙ্গনের বেশিরভাগ প্রার্থীই হেসেছেন জয়ের হাসি। তবে কারো কারো সঙ্গী হয়েছে পরাজয়ের গ্লানিও।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে (দোহার-নবাবগঞ্জ) বেসরকারিভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ঠ ব্যাবসায়ী সালমান এফ রহমান। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের সালমা ইসলাম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৯৩০ ভোট।
এদিকে খুলনা-৪ (রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া) আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সালাম মুর্শেদী পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৬৪৭ ভোট। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা (কেটলি প্রতীক) পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৩৯ ভোট।
যশোর-৩ (সদর) আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। এই আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া কাজী নাবিল পেয়েছেন মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৮৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) মোহিত কুমার নাথ পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৭১০ ভোট।
তবে ফুটবল অঙ্গনের বাকি ৫ প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক, আরিফ খান জয়, হাসানুল হক ইনু, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল ও শামসুল হক চৌধুরী পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছেন।
বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নোয়াখালী-২ আসন (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোরশেদ আলম তৃতীয় বারের মতো বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা হলো ৫৬ হাজার ১৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৬৩ ভোট।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্রা) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। তবে হারের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ১ লাখ ৫ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরিফ খান জয় পেয়েছেন ৮৬ হাজার ২৮৭ ভোট।
এদিকে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন সাবেক ফুটবলার ও মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ভেড়ামারা এবং মিরপুরের ১৬১ কেন্দ্রের সব কয়টির ফলাফলে তিনি পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৪৭৯ ভোট। আর এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আরেফিন ট্রাক প্রতীকে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। কিন্তু নির্বাচনে বড় ধরনের ভরাডুবির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। নিজ আসনের ১৯৩টি কেন্দ্রের চূড়ান্ত ভোটগণনা শেষে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৮ ভোট। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট।
এদিকে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বর্তমান সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব সামশুল হক চৌধুরী। তবে এই আসন তাকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ ভোট। আর ঈগল প্রতীকে সামশুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৩৫ হাজার ২৪০ ভোট।