উত্তেজনা, রোমাঞ্চ, নাটক – কি ছিলনা ফেডারেশন কাপের ফাইনালে? বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচটি নিশ্চয়ই অনেকদিন মনে রাখবে ময়মনসিংহে মাঠে উপস্থিত হওয়া সমর্থকরা। তবে সব কিছুর পর শেষ হাসি হাসলো বসুন্ধরা কিংস। একই সঙ্গে জিতে নিল এই মৌসুমের তৃতীয় শিরোপা অর্থাৎ ঘরোয়া ট্রেবল!
ম্যাচের শুরু থেকে বসুন্ধরা কিংস বেশ গুছানো খেলা খেলেছে। বল পজিশন ধরে রেখে মোহামেডানের রক্ষণে বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে কিংসের খেলোয়াড়রা। অন্যদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব একেবারে ছন্নছাড়া খেলা দেখিয়েছে। কিংসের রক্ষণে তেমনভাবে আক্রমণের সুযোগই পায় নি সাদা-কালোরা। ২৭তম মিনিটে ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে বসুন্ধরা কিংসের কাছে। রাকিব হোসেনের থ্রু পাসে আসা সুযোগ থেকে বক্সের ঢুকে বলে শট করেন দলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডরিয়েল্টন গোমেজ। তবে মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন এগিয়ে এসে বলকে নিজের দখলে নিয়ে দলকে গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন।
৪১তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলের সুযোগ পেয়ে যায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ইমানুয়েল সানডের বাড়ানো বল থেকে অন টার্গেট শট করে মোহামেডানের গোলমেশিন সোলেমান দিয়াবাতে। তবে সেখানে থাকা কিংসের ডিফেন্ডার তপু বর্মন স্লাইড করলে তার পায়ে লেগে বল সীমানা অতিক্রম করে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে মাঠের ডান দিক থেকে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়ে কিংসের রাকিব হোসেন। তবে রাকিব বল রিলিজ করার আগেই মোহামেডানরে মিনহাজুল আবেদীন রাকিব স্লাইড ট্যাকেল করে আক্রমণকে রুখে দেন। ফলে গোলশূন্যতে শেষ হয় ম্যাচের প্রথমার্ধের খেলা।
প্রথমার্ধের পরও দ্বিতীয়ার্ধের খেলাও সমতায় শেষ হয়। তবে এবার ফলাফল ১-১। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল করার সুযোগ পায় বসুন্ধরা কিংস। তপু বর্মনের ক্রস থেকে ওভারহেড কিকের চেষ্টা চালায় ডরিয়েল্টন গোমেজ। চেষ্টা করলে বলের সাথে পায়ের পুরোপুরি কানেক্ট করতে না পারায় গোলের সহজ সুযোগ হারায় বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচের ৬১ এবং ৬২ মিনিটে দুইবার গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ দুইবারই দলকে বাঁচিয়ে দেন।
পরের মিনিটে আবারো কিংসের গোলপোস্টে আবারো চার্জ করে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এবার আবার বলকে রুখতে পারে নি কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। বক্সের বাইরে থেকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার ইমানুয়েল সানডের বাম পায়ের শটে বল জাল খুঁজে পায়। পোস্টের নিচে থাকা মেহেদী হাসান শ্রাবণ বা’দিকে ঝাপিয়ে পড়লেও শেষ রক্ষা হয় নি। ৭৭ মিনিটে সমতা ফেরার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন বসুন্ধরা কিংসের ডরিয়েল্টন গোমেজ। রবসনের পাস থেকে একেবারে গোলমুখে বল পেয়ে যান তিনি, বামপায়ের শটও নেন। কিন্তু মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন বসে পড়ে বলকে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেন।
৮১ মিনিটের মাথায় রবসনের বুলেট গতির শট বারে লেগে ফিরে এলে আবারো সমতা পেতে ব্যর্থ হয় কিংস। পরের মুহুর্তে সেখান থেকে প্রতি আক্রমণ সাজান মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতে। বল নিয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে পড়ে বলকে জালে পাঠাতে চাইলে কিংসে গোলরক্ষক শ্রাবণ বলকে ফিরিয়ে দেন। অনেক চেষ্টার পর ৮৭ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফিরে পায় বসুন্ধরা কিংস। মিডফিল্ড থেকে রান মেইক করে মোহামেডানের তিনজনকে বোকা বানিয়ে বাম পায়ে অসাধারণ এক শটে গোল আদায় করে নেন এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। এরপর ম্যাচের বাকি সময় আর স্কোরলাইনে পরিবর্তন না এলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটের শেষ মিনিটে গিয়ে নাটকীয় পরিবর্তন আসে খেলায়। মিগেলের কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি মোহামেডান গোলরক্ষক হোসেন সুজন, আর সেই সুযোগে আলতো টোকায় জালে জড়িয়ে দেন কিংসের বদলি ডিফেন্ডার জাহিদ হোসেন। রেফারি গোলের সংকেত দেওয়ার পরই বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে বসুন্ধরা কিংস। কিন্তু গোলের আগে ফাউল হয়েছে জানিয়ে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে মোহামেডান। এক পর্যায়ে ডাগআউটের নির্দেশে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যায় তারা।
এরপর বেশ খানিকটা সময় বন্ধ থাকে ম্যাচ। ফলে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের ইতি টানেন রেফারি। এই সময় মোহামেডানের সমর্থকরাও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। গ্যালারি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র মাঠের ভেতর ছুঁড়ে মারতে থাকেন। অবশেষে কিছুক্ষণ পর আবারো মাঠে ফিরে আসে মোহামেডান এবং শুরু হয় অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা। এক গোলের লিড ধরে রেখে ধীরেসুস্থে খেলতে থাকে কিংস। অপরদিকে গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠে মোহামেডান। ম্যাচের ১২০ তম মিনিটে শাহরিয়ার ইমনের শট অল্পের জন্য জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি।
এর মিনিট খানেক পরই শেষ বাঁশি বাজিয়ে খেলার ইতি টানেন রেফারি আর উৎসবে মেতে উঠে বসুন্ধরা কিংস। এই নিয়ে এই মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ, লিগ ও ফেডারেশন কাপের শিরোপা ঘরে তুললো অস্কার ব্রুজন শিষ্যরা। একইসঙ্গে প্রথমবারের মত জিতলো ঘরোয়া ট্রেবল।