কিংস অ্যারেনাতে আজ অনন্য এক বাংলাদেশকে দেখেছে ফুটবল ভক্তরা। লড়াইটা যেখানে একপেশে হওয়ার কথা ছিলো, সেখানে মোটেও একপেশে লড়াই হয়নি। গত দুইদিন আগে মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার সামনে তপু বর্মণ নিজেদের লড়াকু পারফরম্যান্স দেওয়ার কথা দিয়েছিলো, তিনি তার কথা রেখেছেন, বাংলাদেশ দল তাদের কথা রেখেছে। ফিফা র্যাংকিংয়ের প্রথম সারির দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলো ঠিকই,তবে লড়াই করে হেরেছে তপু বর্মণের দল।
ম্যাচের শুরু থেকে স্বভাবসুলভভাবে স্বাগতিক বাংলাদেশের রক্ষণে আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখে অস্ট্রেলিয়া। তবে বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা তাদের আক্রমণ আটকে দিয়ে রক্ষণ সামলে যাচ্ছিলো। ফলে কাঙ্খিত গোলের দেখা পাচ্ছিলোনা গ্রাহাম আনোর্ল্ডের শিষ্যরা।
হারটা প্রায় অনুমেয় ছিলো সবার কাছে। তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে থেকেও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে,সেটি ছিলো এক কথায় অনবদ্য। অস্ট্রেলিয়া প্রায় পুরো মাঠে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখলেও বাংলাদেশের গোল এরিয়াতে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের জন্য গোল করার সুযোগ হারাচ্ছিলো তারা। ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ‘গরম’ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তবে অত্যাধিক গরমেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কাহিল হয়ে পড়লেও,নিজেদের উদ্যম হারায়নি বেঙ্গল টাইগাররা।
বাংলাদেশ দলের ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষক মিতুল এক কথায় ছিলেন মহাপ্রাচীর রূপে। বাংলাদেশের রক্ষণে কোনোভাবে আধিপত্য তৈরি করতে পারছিলো না জ্যাকসন আরভিনের দল। ম্যাচ হারলেও নিজেদের সেরাটা দিয়েছে হ্যাভিয়ার ক্যাবররার শিষ্যরা।
গোল পেতে অস্ট্রেলিয়া বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। গোল আসে ম্যাচের ২৮ তম মিনিটে,নিজেদের দুর্ভাগ্য গোল হজম করে বাংলাদেশ। ইরানকুন্ডার পাস থেকে আজডিন হ্রোটিক শট করলে বাংলাদেশের দলের ডিফেন্ডার মেহেদী মিঠু বল আটকানোর চেষ্টা করলে তাতে হিতে বিপরীত হয়। মেহেদী মিঠুর পায়ে লেগে বলটি ডিফ্লেকটেড হয়ে গোলরক্ষক মিতুল মারমার নাগালের বাইরে দিয়ে বল জালে প্রবেশ করে; তাতে করে ১-০ তে এগিয়ে যায় সকারুজরা।
গোল হজমের পর নিজেদের খোলস ছেড়ে বের হওয়ার কিছুটা চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ দল। তবে মধ্যমাঠ পেরিয়ে আক্রমণের খেই হারিয়েছেন রাকিব-মুরসালিনরা। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়াও ব্যবধান বাড়ানোর জন্য আক্রমণের ধার বাড়াতে থাকে তবে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের নেওয়া শট গুলো অন-টার্গেটে না থাকার কারণে তেমন বড় বিপদে পড়েনি মিতুল। প্রথমার্ধে আর গোল না হওয়ায় ১-০ তে শেষ হয় বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার প্রথমার্ধের লড়াই।
দ্বিতীয়ার্ধেও অস্ট্রেলিয়া আক্রমণ চালাতে থাকে,অন্যদিকে বাংলাদেশ নিজেদের সর্বোচ্চাটা দিয়ে একের পর এক আক্রমণ রুখতে থাকে। ৬২ মিনিটে লিড দ্বিগুণ করে অস্ট্রেলিয়া। মাঠের বামপ্রান্ত থেকে সতীর্থ খেলোয়াড়ের ক্রস থেকে ফাঁকায় কুসিনি ইয়াঙ্গি হেড করে গোলটি করেন।
ম্যাচের পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণ ভাগের সাথে বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগ সমান তালে লড়াই চালিয়ে যায়। ফলে গোলের দেখা পেতে বেশ অনেকটাই বেগ হতে হচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়াকে। এছাড়া বাংলাদেশের আক্রমণ ভাগ মিডফিল্ডের উপরে এসে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা চালায়, তবে সেখানে মোটেও সফলতা পায়নি তারা। এতে করে শেষ পর্যন্ত উড়তে থাকা অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ২-০ গোলে পরাজিত হয় লড়াকু বাংলাদেশ।