ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত সোমবার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই প্রস্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের দেশ শাসনের অবসান ঘটেছে। একইদিনে টানা ৪ মেয়াদে বাফুফে সভাপতি পদে থাকা কাজী সালাউদ্দিনকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেয় দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় ফ্যান গ্রুপ বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাস। তবে সে সময় পার হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিনের বিস্ফোরক মন্তব্য এই ঘটনাকে আরো উস্কে দিয়েছে। এবার আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাস!
গত সোমবার রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাফুফে সভাপতিকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার দাবি জানায় আল্ট্রাস। এরপর বাফুফে ভবনে গিয়ে লিখিতভাবেও তাদের দাবি জানিয়ে আসে তারা। এরপর তাদের আলটিমেটামের বিষয়ে একটি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আল্ট্রাস কে? আমি তো ওদের চিনি না। ফুটবলে ওদের কি অবদান আছে?’ এই বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।
এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ফ্যান গ্রুপটি। কারণ দেশের মাটিতে এমনকি দেশের বাইরেও বাংলাদেশ ফুটবল দলের ম্যাচে নিয়মিত গ্যালারিতে উপস্থিত থাকে তারা। স্লোগানে স্লোগানে উজ্জীবিত করে খেলোয়াড়দের। কোচ, অফিসিয়াল এবং খেলোয়াড়রাও তাদের এই কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু বাফুফে সভাপতি তাদের চেনেন না এমন মন্তব্য করে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। বাফুফে সভাপতির দিকেও পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে তারা। ফেসবুক লাইভে এসে তাদের প্রশ্ন, “আপনি কে? দেশের ফুটবলে আপনার অবদান কি?”
এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাস। সেখানে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তারা লিখেছে, “দেশের ফুটবল এর সর্বোচ্চ আসনে থাকা ব্যাক্তি যে কথাটি আজ বললো তাকে দুই ভাবে ব্যাখা করা যায়, হয় সে পুতুল হিসাবে আসনে বসে আছে ফুটবল মাঠের খোজ রাখে না অথবা বয়সের ভারে তার দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেয়েছে, স্মৃতি শক্তি হ্রাস পেয়েছে, কানে শোনার ক্ষমতা কমেছে। এই দুটির যেটাই হোক প্রমাণ করে এই মুহুর্তে তাকে দায়িত্ব রাখা মানে ফুটবল কে পুরোপুরি ধ্বংস করা।”
এরসঙ্গে পদত্যাগের জন্য আগামী শনিবার রাত পর্যন্ত নতুন করে আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী ও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকেও পদত্যাগের দাবি জানায় তারা। এই দাবিতে আগামী রবিবার বাফুফে ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, “আমরা রবিবার আমাদের অবস্থান কর্মসূচি নিবো এবং তখন তাদের তিন জনকে (সালাউদ্দিন, কিরণ, সালাম মুর্শেদী) কে পদত্যাগ করতে হবে অন্য কোন দাবী আমরা মানবো না। তখন কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশী ফুটবল আল্ট্রাস তার দায় ভার বহন করবে না। সকল দায় তাদের বহন করতে হবে।”
এদিকে আজ থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবন এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল অবস্থান নিয়েছে। এবার দেখার বিষয় বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাসের দেওয়া আলটিমেটামের জবাবে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে কোন ধরনের উত্তর আসে এবং ফ্যান গ্রুপটির পরবর্তী পদক্ষেপ কি হয়।