সাম্প্রতিক সময়ে আবার বাংলাদেশের ফুটবলে সামনে এসেছে ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি! কয়েকদিন আগে অ-১৭ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আরহাম ইসলামকে উপেক্ষা করে খেলা সমর্থকদের নজরে এসেছে। আর এরপরই প্রবাসী খেলোয়াড়দের বিপক্ষে স্থানীয় খেলোয়াড়দের আলাদা ‘সিন্ডিকেট’ এর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এবার নতুন ভাবে এলো নারী দলের ‘সিনিয়র সিন্ডিকেট’ এর বিষয়টি !
নারী সাফের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নেপালে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে ইনজুরি সময়ের গোলে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। অথচ বছর দুয়েক আগে এই পাকিস্তানকেই ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা। তবে ম্যাচের পর দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় মনিকা চাকমার কিছু বক্তব্য নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে! তার দাবি কোচ পিটার বাটলার দলের সিনিয়রদের পছন্দ করেন না। তাই তাদের যথাসম্ভব একাদশের বাইরে রাখার চেষ্টা করেন তিনি!
সব কোচেরই নিজস্বতা থাকে। নিজ নিজ পরিকল্পনায় সফল হতে চান তিনি। ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের প্রোফাইল বেশ সমৃদ্ধ। খেলোয়াড়ী জীবন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কোচিং ক্যারিয়ারেও বতসোয়ানা ও লিবিয়া জাতীয় দলের সঙ্গে বহু ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। শুরুতে বাফুফে এলিট একাডেমির দায়িত্ব দিলেও পরে তাকে নারী দলের কোচের দায়িত্ব দেয় বাফুফে। তখনই বলেছিলেন সিনিয়র-জুনিয়র নয়, দলে পারফর্ম করা খেলোয়াড়রাই সুযোগ পাবে।
সাফের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলেও নারী দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের বর্তমান পারফরম্যান্স এবং মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ড নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন দেশের নারী ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি হলেও সাম্প্রতিক সময় তার খেলার ধার অনেকটাই কমেছে। এছাড়া দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বেশি সময় পার করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সরব উপস্থিতি দর্শকদের মনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এছাড়া বসুন্ধরা কিংস যখন নারী লীগ থেকে নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় তখন প্রথমবারের মতো সিনিয়র সিন্ডিকেট সকলের নজরে আসে। সিনিয়র খেলোয়াড়েরা যে পারিশ্রমিকের দাবি করে তা বসুন্ধরা কিংস মেনে নিতে পারে নি। এর ফলশ্রুতিতে নারী লীগ থেকে সরে দাঁড়ায় বসুন্ধরা কিংস।
গত ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিনিয়র ও জুনিয়রদের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে সেই ম্যাচে মাসুরা পারভীনের জায়গায় সুযোগ পান কোয়াতি কিসকু। পূর্বের ম্যাচগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় মাসুরা পারভীনের তার জায়গায় ছিলেন স্থবির। তার এই স্থবিরতার জন্য প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা রক্ষণের চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ পেতো যার ফলে বাংলাদেশ দলকে বহুবার গোলও হজম করতে হয়েছে। কিন্তু গত ম্যাচে সুযোগ পাওয়া কিসকু খেলোয়াড়দের টাইড মার্কিংয়ের পাশাপাশি বল রিকোভারিতেও নিজের নৈপুণ্য দেখিয়েছে। দল গোল হজম করলেও দুই সেন্টারব্যাকের হাইপ্রেসের ফলে বাংলাদেশ দল আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি আক্রমণ তৈরি করতে পেরেছে।
এছাড়া মিডফিল্ডেও সিনিয়রদের চেয়েও জুনিয়রদের অবদান ছিলো বেশী। সানজিদা অনেক দিন ধরেই ফর্মে না থাকায় তার জায়গায় আসেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। এমনকি শামসুন্নাহার জুনিয়রের সমতাসূচক গোলেই হারের লজ্জা থেকে পরিত্রাণ পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এছাড়া গত ম্যাচে শামসুন্নাহার জুনিয়রের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ম্যাচে কয়েকবার পাকিস্তানের রক্ষণে ভীতি ধরানোতে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। অন্যদিকে গতবারের সাফে মারিয়ার মান্ডা ভালো করলেও বর্তমানে তার সেই ধার নেই, এতে করে দলে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আসেন স্বপ্না রাণী। একটা দলের ভালো খেলার পেছনে মধ্যমাঠের দখলদারির বড় পার্থক্য তৈরি করে। স্বপ্না রাণী দলের হয়ে সেই কাজটাই করেছেন। পাসিং একুরেসির পাশাপাশি আক্রমণ সাজাতেও কাজ করেছেন স্বপ্না। মারিয়া আগের মতো পারফরম্যান্স না করতে পারার কারণে তার জায়গায় স্বপ্নাকে এনেছেন এবং তাতে বেশ ভালো ফলাফলও এসেছে।
পিটার বাটলার তার দলের আক্রমণভাগেও পরিবর্তন এনেছেন। ইঞ্জুরি থেকে ফিরে আসার কারণে কৃষ্ণাকে সরাসরি মূল একাদশে না রেখে রেখেছেন তাহুরা খাতুনকে। যেহেতু অনেকদিন ধরে কৃষ্ণা দলের বাহিরে ছিলেন সেহেতু স্বভাবতই দলে তাহুরার জায়গা পাওয়াটা স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। এছাড়া তাহুরা খাতুন বয়সভিত্তিক পর্যায়ে পারফরম্যান্সও করে এসেছেন। ফলে কৃষ্ণার জায়গায় তাহুরার জায়গা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোচকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই।