লড়াইটা দুই বাংলার সেরা দুই ক্লাবের, লড়াইটা সম্মানের, লড়াইটা আবার টুর্নামেন্টে টিকে থাকার। সবকিছু ছাপিয়ে লড়াইটা পুরোনো গুরুর বিপক্ষে নতুন গুরুর অধীনে। তাইতো বসুন্ধরা কিংস বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা শুধু একটা খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এই ম্যাচের বহুল তাৎপর্য রয়েছে।
আজ ভুটানের থিম্পুতে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস এবং ভারতের ইস্টবেঙ্গল। প্রথম ম্যাচে দুই দলই প্রত্যাশিত ফলাফল পায়নি। ইস্টবেঙ্গল ড্র করে শুরু করলেও বসুন্ধরা কিংস পেয়েছে হারের স্বাদ। তাই ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য দুই দলেরই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কিংস-ইস্টবেঙ্গল লড়াইটা বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। আর সেটা যে সবসময় বাড়তি উত্তেজনা ছড়ায় সে তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই।
পেশাদার ফুটবলে আগমনের পর থেকেই কিংসের কোচের দায়িত্বে ছিলেন অস্কার ব্রুজন। তার হাত ধরেই ঘরোয়া ফুটবলে রাজত্ব করেছে কিংস। টানা ৫ টি লিগ শিরোপার সঙ্গে ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপেও নিজেদের আধিপত্য দেখিয়েছে অস্কারের শিষ্যরা। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রত্যাশিত সাফল্য পাননি তিনি। এএফসি কাপে একবারও গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরিয়ে নকআউট পর্বে খেলতে পারেননি। এছাড়া দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় খলনায়ক ছিলেন তিনি। তাইতো এই মৌসুমে তাকে সরিয়ে ভ্যালেরিউ তিতার কাছে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস।
কিংসের দায়িত্ব ছাড়ার পর বেশিদিন বেকার থাকেনি অস্কার। নিজেদের বাজে সময় কাটাতে তার উপর আস্থা রেখেছে ইস্টবেঙ্গল। যদিও দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনো জয়ের দেখা পাননি তিনি। তাই নিজের সাবেক ক্লাবকে হারিয়ে নতুন ক্লাবে জয়ের সূচনা করতে চান অস্কার।
নিজের পুরোনো দলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা চাপে আছেন তিনি। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন,
“মাঠের বাইরে আবেগ থাকতে পারে। সমর্থকদের মধ্যে আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু ফুটবল মাঠে আবেগের কোনও জায়গা নেই। আপাতত আমাদের ফোকাস শুধু ম্যাচেই। কাল কী করতে হবে সেটা সবাই জানি। ম্যাচের পর আবেগ দেখানোর জায়গা রয়েছে।”
এদিকে অস্কার ব্রুজন বসুন্ধরা কিংসের নাড়ি নক্ষত্র সবই জানেন, তাই তার জন্য কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে – এমন ভাবনায় থাকা সমর্থকদের কিংস অধিনায়ক তপু বর্মন বাস্তবতা উপলব্ধি করতে বলছেন। তার মতে অস্কার যেমন তাদের সম্পর্কে বিস্তর ধারণা রাখেন তেমনি কিংসের ফুটবলাররাও অস্কারের কৌশলের বিষয়ে বিস্তারিত জানে। সংবাদ সম্মেলনে তপু বলেছেন,
“অস্কার ব্রুজন যেমন আমাদের দলের প্লেয়ারদের সম্পর্কে জানে তেমনি আমরাও তার ট্যাকটিস সম্পর্কে জানি, তিনি কোন স্টাইলে ফুটবল খেলে।”
ভারতীয় ক্লাবের অধীনে অবশ্য কিংসের রেকর্ড খুব একটা মন্দ নয়। অস্কার ব্রুজনের অধীনেই মোহনবাগান, উড়িষ্যা ও গোকুলামকে হারানোর সুখস্মৃতি রয়েছে কিংসের। সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্লাবের বিপক্ষে ৮ ম্যাচ খেলে সমান ৩টি করে জয় ও ড্রয়ের সঙ্গে ২ ম্যাচে হারের স্বাদ পেয়েছে কিংস। অবশ্য এর আগে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নেই তাদের।
দুইদলের ডাগ আউটে দুই মাস্টারমাইন্ড তিতা এবং অস্কারের মধ্যে একটা নীরব লড়াই চলবে। একদিকে অস্কার যেমন কিংসের নাড়ি নক্ষত্র জানেন, তেমনি কিংসের ফুটবলাররাও অস্কারের কৌশলের বিষয়ে অবগত আছেন। তাই সবকিছু মিলিয়ে বেশ জমজমাট একটা ম্যাচের অপেক্ষায় দুই দেশের ফুটবল প্রেমীরা। এবার দেখার বিষয় দিনশেষে কে হাসে শেষ হাসি।