নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন। তবে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে আশানুরূপ পারফরম্যান্স না হলেও, ভারতের বিপক্ষে তারা ঘুরে দাঁড়িয়ে চমৎকার পারফর্ম করেছে। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
তবে মাঠের বাইরে কিছু বিতর্কও সামনে এসেছে। বর্তমান কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠেছে। এমন পরিস্থিতি খেলোয়াড়দের মনোযোগ ও পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মাঠের খেলা মাঠেই থাকা উচিত। কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং বোঝাপড়া নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
- অব্যবস্থাপনা ও খেলোয়াড়দের অধিকার
নারী ফুটবলে অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো নজরে এসেছে। যেমন, খেলোয়াড়দের তিন মাসের বেতন বকেয়া রাখা বা তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা না করা। এমনকি অলিম্পিক বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে দল পাঠানো হয়নি, যা দুঃখজনক। এমন সিদ্ধান্ত নারী ফুটবলের অগ্রগতিতে বড় বাধা। খেলোয়াড়দের জন্য স্বাস্থ্যবিমা, নিয়মিত বেতন এবং ক্যারিয়ার শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
- একাডেমি ও কাঠামোগত উন্নয়ন
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় নারী ফুটবল একাডেমি স্থাপন এবং একাডেমি কাপ বা লিগ আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিভা অন্বেষণের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। ক্লাবগুলোতে বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র নারী দলের ব্যবস্থা থাকা উচিত। এ ধরণের কাঠামোগত উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
- পুরোনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধ
নারী ফুটবলের শুরু থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বর্তমানে, বাফুফের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি গোপন প্ল্যাটফর্ম চালু করা যেতে পারে, যা অন্যায় আচরণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
- ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্ব
বাংলাদেশের নারী ফুটবল এখন একটি সম্ভাবনাময় জায়গায় দাঁড়িয়ে। সাফল্য ধরে রাখতে এবং বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতা করার জন্য সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। দেশব্যাপী ফুটবলের বিস্তৃত কাঠামো তৈরি এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের মেয়েরা একদিন বিশ্বকাপে লাল-সবুজের পতাকা উড়াবে।
এখন সময় মেয়েদের ফুটবলের প্রতি আরও সংবেদনশীল ও সুসংগঠিত দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার। এজন্য শুধু স্বপ্ন নয়, সুপরিকল্পিত কার্যক্রম প্রয়োজন।