সময়টা ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২। তুমুল উত্তেজনা ঢাকা শহরে। উত্তেজনা তো হবেই, ডার্বি বলে কথা। মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।
মাঠের খেলার পাশাপাশি উত্তেজনাটা দর্শক সারিতেও ছিলো। ঐ ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার ১০ মিনিটি আগে বিতর্কিত গোল নিয়ে শুরু হয় মূল ঘটনার। রেফারি গোল না দেয়াতে খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মাঝে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
১৯৮২ সালের মার্চ মাসেই ক্ষমতায় আসেন তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। ম্যাচের দিন রাতেই অনেক খেলোয়ার ও সমর্থকদের আটক করা হয়। খেলায় যে গণ্ডগোল হয়েছে তার একটা বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানায়। ক্লাব থেকে নিয়ে এসে তিন শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়কেও আটক করে তারা। পরদিন ভোরের সময় রমনা থানায় নিয়ে ওসির রুমে তালাবদ্ধ করা হয় ১২ জন ফুটবলারকে।
সকাল হওয়ার পর খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পরে। সমর্থকরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের প্রিয় তারকাদের খোঁজ নিতে । অন্যদিকে রমনা থানা থেকে খেলোয়াড়দের নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোলরুমে। সেখানে অনেক সমর্থকও আটক ছিলো।
লংঙ্কান খেলোয়াড়দের তাদের এম্বাসি থেকে লোক এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। মিন্টো রোডের মার্শাল কোর্টে বাকিরা একটা কাঠগড়ায় দাড়ায়। ঠিক বিপরীতের কাঠগড়ায় দাড়ানো রেফারি আজিজ এবং দুই লাইন্স ম্যান। রেফারি আজিজ বললেন, ‘স্যার ওরা আমাকে মেরেছে, ওরা সাপোর্টারদের উসকে দিয়েছে গণ্ডগোল করার জন্য।’ যদিও খেলোয়াড়রা এই বক্তব্য ভুল বলে জানায়। রেফারি আজিজ দেখিয়ে দেয় কাজী মো. সালাউদ্দিন, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, কাজী আনোয়ার এবং গোলম রাব্বানী হেলালকে, তার দাবি এরাই গণ্ডগোল বাঁধিয়েছে। আনোয়ারকে এক বছর, হেলালকে ছয় মাস এবং সালাউদ্দিন ও চুন্নুকে একমাস করে জেল দেয় কোর্ট। খেলোয়াড়রা ভেঙ্গে পড়ে কাঁদতে শুরু করে।
সেদিন রাত দেড়টার দিকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানেই দুই রাত কাটানোর পর তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়। সেদিন তাদের জানানো হয় নিরাপত্তার জন্য তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। চুন্নু এবং সালাউদ্দিনকে যশোর এবং আনোয়ার ও হেলালকে রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তর করা হবে।
সেদিন রাত ১০টায় ট্রেন, রিক্সায় করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কমলাপুর স্টেশনে। সেই সময় প্রায় পনের হাজার লোক জড়ো হয়ে গেছে কমলাপুর স্টেশনে। সেখানেই ফটো সাংবাদিক আলম তুলেন চারজনের হাতকড়া পরা সেই ছবি। পরদিন ছবিটি ইত্তেফাক পত্রিকায় ছাপা হলে। ঐ ছবি প্রকাশের পর আরো সাংঘাতিক হয়ে উঠে পরিস্থিতি।
১৭ দিন পর আন্দোলনের মুখে চার খেলোয়াড়কেই ছাড়তে বাধ্য হয় তৎকালীন সামরিক সরকার। যশোর থেকে চুন্নু ও সালাউদ্দিনকে নিয়ে রাজশাহী গিয়ে আনোয়ার ও হেলালকে নিয়ে পরদিন ঢাকা ফেরেন আবাহনী কর্তারা।