বাংলাদেশের ফুটবলে প্রবাসীদের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও ডিফেন্ডার তারিক কাজীর পর এখন ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হওয়ায় প্রবাসী ফুটবলারদের প্রতি আরও আগ্রহ বেড়েছে। তবে জাতীয় দলে সরাসরি খেলার মতো বড় নামের অভাব থাকলেও, বয়সভিত্তিক পর্যায়ে প্রতিশ্রুতিশীল বেশ কয়েকজন ফুটবলার রয়েছেন, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ফুটবলে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের এখনই বয়সভিত্তিক দলে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ভবিষ্যতে জাতীয় দলের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী তানিল শালিক। স্টিভিনেজ এফসির অনূর্ধ্ব-১৮ দলে খেলা এই ফরোয়ার্ড চলতি মৌসুমে ১৫ ম্যাচে ৮ গোল ও ৮ অ্যাসিস্ট করেছেন। তার পারফরম্যান্স তাকে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্লাব ওয়েস্টার্ন ইউনাইটেডের অনূর্ধ্ব-১৮ দলে খেলা আরহাম ইসলাম গত বছর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলে নজর কেড়েছেন। তার সঙ্গে থাকার কথা থাকলেও পাসপোর্ট সমস্যার কারণে আসতে পারেননি মাহাদ আমান। মিডফিল্ড ও রক্ষণ সামলানোর দক্ষতা থাকায় মাহাদ জাতীয় দলের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হতে পারেন। তাই বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
ইংল্যান্ডের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব ফুলহামের যুবদলে খেলছেন ১৮ বছর বয়সী ফারহান আলী ওয়ালিদ। ভবিষ্যতে তাকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও দেখা যেতে পারে। এখনই তাকে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ বা অনূর্ধ্ব-২৩ দলে আনার কাজ শুরু করা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস নেক্সট লিগে খেলা রোনান সুলিভান ও ডেকলান সুলিভানের দিকে নজর দেওয়া দরকার। তাদের বড় দুই ভাই কুইন ও কাভান সুলিভান ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের রাডারে থাকলেও, ছোট দুই ভাইকে এখনই বাংলাদেশ ফুটবলে যুক্ত করা গেলে ভবিষ্যতে তারা জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারেন।
জন্মসূত্রে ইংল্যান্ডের নাগরিক কিউবা মিচেলের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সম্ভবনা কমই। কিউবার মা একজন বাংলাদেশি আর বাবা জ্যামাইকান। তার বেড়ে উঠা জ্যামাইকান সংস্কৃতিতে। কিউবা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হলেও খেলতে পারেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও। ১৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টায়ারের দল সান্ডারল্যান্ড এএফসির মূল দলে প্রি সিজনে সুযোগ পেয়েছেন। কিউবাকে দলে নিতে জ্যামাইকা চেষ্টা চালাচ্ছে। জ্যামাইকান সংস্কৃতিতে তার বড় হওয়া এক্ষেত্রে বড় বাঁধা, যেমনটা হামজার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী সংস্কৃতিতে বড় হওয়া লাল সবুজের প্রতিনিধি হিসেবে পেতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো।
এছাড়া ফাহমেদুল ইসলাম, জ্যাক ডুরান্ট, ইউসুফ আহমেদ, ক্যামেরন আলী, জয় উদ্দিন, নিলয় ভন ডার প্লয়েগের মতো ফুটবলাররাও বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পাওয়ার উপযুক্ত। তাদের ট্রায়ালে এনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রবাসী ফুটবলারদের এখন থেকেই বাংলাদেশ দলের কন্ডিশন ও ফুটবল সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পেলে তারা নিজেদের সামর্থ্য তুলে ধরতে পারবে এবং ভবিষ্যতে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত হবে। তাই এখনই এসব প্রতিভাবান ফুটবলারদের স্কাউটিং ও ট্রায়ালের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও, তবে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে দ্বৈত নাগরিকত্ব সহ ফুটবলে এখনও পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের ফুটবল সংস্কৃতি।