বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বর্তমানে সবচেয়ে বড় লড়াইয়ের নাম আবাহনী-কিংস। দুইদল মুখোমুখি হলে যেন শিরোপা নির্ধারণী বিষয়টা চলে আসে। কারণ এই দুই জায়ান্টের লড়াইয়ের উপরই অনেক বেশি নির্ভর করে কাদের হবে আরেকটি শিরোপা।
যদিও লিগ একটা লম্বা রেস, তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যান্য সকল দল থেকে শক্তিমত্তায় এগিয়ে এই দুই দলই। তাই আবাহনী ও কিংসের মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ী দলই যে শিরোপা ছুঁবে তা অনেকেই মেনে নেয়। যেমন এই মৌসুমের শুরুর টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে দুদল শেষবার মুখোমুখি হয়। ফাইনালের আগে ফাইনাল খ্যাত হওয়া ম্যাচটিতে বসুন্ধরা কিংস জয় লাভ করে এবং পরবর্তীতে শিরোপাও তাদের ঘরেই আসে।
গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচকে ঘিরে লিগ টেবিলে নজর দিলে এখন পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংসের আধিপত্যের দেখা মিলবে। চলতি লিগে তারা একটি মাত্র ম্যাচ ড্র করেছে, সেটি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে। এছাড়া বাকি সব ম্যাচ জিতেছে। পয়েন্ট টেবিলে বসুন্ধরা সবার ওপরে। ১১ খেলায় ১০ জয়, ১ ড্রয়ে ৩১ পয়েন্ট বসুন্ধরার। গোল করেছে ২৮টি, হজম করেছে মাত্র ৪টি। অন্যদিকে আবাহনী লিমিটেড ১০ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ৬ ম্যাচে। ড্র করেছে বাকি চার ম্যাচে। আবাহনী গত ১০ ম্যাচে ২০ গোল করেছে। বিপরীতে গোল হজম করেছে ৭টি। ফলে লিগে টিকে থাকতে জয়ের বিকল্প কিছু ভাবার সুযোগ নেই মারিও লেমসের শিষ্যদের।
মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে কিংস। পাঁচবারের দেখায় চারবারই জিতেছে অস্কার ব্রুজনের দল। শুধুমাত্র প্রথমবারের দেখায় জিতেছিলো আকাশী-নীল’রা। তবে এইসব পরিসংখ্যান ছাপিয়ে দুদলের স্নায়ুর লড়াই হতে চলেছে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা স্নায়ু চাপকে জয় করবে, তাদের পক্ষেই ফলাফল আসবে।
রবসন রবিনহো ও রাউল ব্যাসেরা গোলের মধ্যে থাকায় অনেকটা চিন্তামুক্ত কিংস। আবাহনীর ফ্রান্সিসকো তোরেস গোল পেলেও কার্ভেন্স বেলফোর্ট ও রাফায়েল আগুস্ত পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারছে না দলকে। অন্যদিকে এক ম্যাচ বিরতি দিয়েই আজই আবার দলে ফিরতে পারেন কিংসের আরেক ব্রাজিলিয়ান জোনাথন ফার্নান্ডেজ। এছাড়া দুই দলের দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার খালিদ শাফি ও মাসিই সাইঘানির উপরও নির্ভর করছে জয়ের হিসাব।
বিদেশীদের ছাপিয়ে দেশের খেলোয়াড়দের লড়াইটাও চোখে পড়ার মতো। আবাহনীর হয়ে জুয়েল রানা রয়েছে ভালো ফর্মে। মধ্যমাঠ থেকে দুইজন সোহেল রানা দলকে বল বানিয়ে দেয়ার কাজটা করবে। এছাড়া রাইট উইং ব্যাক সাদ উদ্দিন উপরে উঠে এসে বক্সে ক্রস করলে তা বড় বিপদের ডাক দিবে কিংসের জন্য। পিছিয়ে নেই কিংসের খেলোয়াড়রাও। ইব্রাহীম, সুফিল, মতিন হতে পারেন ম্যাচের ট্রামকার্ডদের একজন। এছাড়া গোল পাচ্ছেন স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলম সবুজ। দুই উইং ব্যাক রিমন ও বিশ্বনাথ দলকে একাধিক আক্রমনে সহায়তা করে আসছে।
ম্যাচকে ঘিরে দুইদলের সমর্থকদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উত্তেজনা তুঙ্গে। কেউ কাউকে একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নয়। দেশের ফুটবলের জাগরনে হয়তো নতুন জোয়ার দিয়েছে আবাহনী-কিংস দ্বৈরথ।