‘কলিন্ড্রেসের জাদু’ শব্দ বাংলাদেশের ফুটবলে একেবারে নতুন নয়। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে অনেকবারই সংবাদের শিরোনামে এসেছে এই শব্দটি। নতুন মৌসুমে দল বদল করে বাংলাদেশের নিজের প্রত্যাবর্তনে সেই দুটি শব্দই আবারো নিয়ে এসেছেন কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা ডেনিয়েল কলিন্ড্রেস। স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনালে আবারো বাংলাদেশের দর্শকরা দেখলো কলিন্ড্রেসের জাদু, আর তাতেই সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকে নতুন এক ট্যাকটিকসে আবাহনীকে প্রেস করতে শুরু করে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। আবাহনীর ডিফেন্ডারদের পায়ে বল থাকলে সাইফের দুই ফরোয়ার্ড মারাজ ও এমফন উদো দুই উইংয়ে সরে যান এবং ফরোয়ার্ডদের পজিশনে এসে প্রেস করতে শুরু করেন মধ্যমাঠের জামাল ও গাফুরভ। এই পদ্ধতিতে আবাহনীকে ভালো পরীক্ষার মুখে ফেলে তারা। ম্যাচের ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো সাইফ। তবে এমফন উদো ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকেন এবং একপর্যায়ে শটও নেন, কিন্তু তা ক্রস বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
কিন্তু এরপরই ম্যাচে ফেরে আবাহনী। খেলার ২৫ মিনিটে ঠিকই লিড নিয়ে নেয় তারা। ডি বক্সের কিছুটা বাহিরে রাকিবকে ফাউল করেন সাইফ এসসি’র এ্যানি। সেখানে প্রাপ্ত ফ্রি কিক থেকে ডান পায়ের শটে তা জালে জড়িয়ে দেন আকাশী নীলদের কোস্টারিকান তারকা ডেনিয়েল কলিন্ড্রেস। এরপর পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আবাহনীর খেলোয়াড়রা।
খেলার ৩৮ মিনিটে আবারো কলিন্ড্রেসের ফ্রি কিক থেকে সুযোগ পায় আবাহনী। কিন্তু জীবনের নেয়া হেড গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ভালো একটি সুযোগ পান রাকিব। তিনি একাই বল নিয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ছুটতে থাকে। বাঁ প্রান্তে ফাঁকায় থাকা কলিন্ড্রেসকে পাস না দিয়ে নিজে শট নিয়ে গোল করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন এই উইঙ্গার। এতে ঐ এক গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় মারিও লেমসের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু কিছুটা ধীর গতিতে করে দুই দল। ৬৮ মিনিটে এমফন উদোর লং থ্রো থেকে বক্সের ভিতর সমতা ফেরানোর ভালো একটি সুযোগ পান মারাজ। তবে তার শট লুফে নেন আবাহনী গোলরক্ষক প্রিতম। এছাড়া বল নিজেদের পায়ে রেখই খেলতে থাকে আবাহনী।ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ঘটতে পারতো সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। খেলা চলাকালীন ব্যাথা পেয়ে আবাহনীর সুশান্ত মাঠে পড়ে থাকলে বলের নিয়ন্ত্রণে থাকা আবাহনীর অধিনায়ক রাফায়েল বল ছেড়ে দেন এবং খেলা বন্ধের অনুরোধ করেন। কিন্তু ফেয়ার প্লের কথা চিন্তা না করে সেই সুযোগে বরং গোল করতে চলে যান সাইফ এসসি’র মিডফিল্ডার গফুরভ। যদিও তার আক্রমণ কর্নারের মাধ্যমে রুখেদেন বাদশা। এরপর দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বাকবিতন্ডায় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
খেলার ৮২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করে আবাহনী। বক্সের সামান্য বাইরে থেকে কলিন্ড্রেসের নেয়া ফ্রি কিকে পা ছুঁইয়ে তা জালের ঠিকানায় পৌঁছে দেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে আরো একটি গোল করার সুযোগ পান জীবন। একটি প্রতি আক্রমন থেকে কলিন্ড্রেসের কাট ব্যাক গোল মুখেই পান এই ফরোয়ার্ড, কিন্তু তার বলে প্রথম ছোঁয়া কিছুটা জোড়ে হওয়ায় সেই সুযোগ আর কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে রাফায়েল একাই বল নিয়ে বক্সে ডুকে পড়েন, কিন্তু তার শট সহজেই প্রতিহত করেন সাইফের গোলরক্ষক মিতুল। এরপরই রেফারি ম্যাচ শেষের লম্বা বাঁশি বাজালে ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে পা রাখা নিশ্চিত হয় মারিও লেমসের শিষ্যদের।