নাটকীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পুলিশ এফসিকে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে পৌঁছে গেলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। এখন পর্যন্ত স্বাধীনতা কাপের অন্যতম সেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে বাংলাদেশ পুলিশ এফসির বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় তুলে নিয়েছে অস্কার ব্রুজনের দল।
মঙ্গলবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশ পুলিশ এফসির বিপক্ষে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে গোল করেন দুই দেশীয় ফুটবলার মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও ইয়াসিন আরাফাত। অবশ্য এর আগে পুলিশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানিলো কুইপাপা। এই জয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মত স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস।
ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই অধিনায়ক দানিলোর দারুণ হেডে এগিয়ে যায় পুলিশ এফসি। ডান দিক থেকে মরোক্কান ফরোয়ার্ড আদিল কৌসকৌসের ফ্রি কিকে দুর্দান্ত হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে একটি ফ্রি কিকের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুদলের ফুটবলারদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। তবে রেফারি পরিস্থিতি সামাল দেন। ম্যাচের মাত্র ত্রয়োদশ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ। ২৫তম মিনিটে ভার্নজেসের ফ্রি কিক পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। এর মিনিট পাঁচেক পরই স্বস্তি ফিরে কিংস শিবিরে। বাইলাইনের একটু উপর থেকে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাট ব্যাকে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি ভার্নজেস। বল ফের চলে যায় ইব্রাহিমের পায়ে। ডান প্রান্ত থেকে ডান পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই মিডফিল্ডার। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আলমগীর কবির রানা থেকে বিপলু আহমেদের পা ঘুরে ফিরতি বল পেয়ে রবসন রবিনহোর শট লক্ষ্যে থাকেনি। ফলে ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
বিরতি থেকে ফিরে ৫২তম মিনিটে গোল লাইন থেকে আচমকা সেইভ করে পুলিশ এফসিকে রক্ষা করেন ডিফেন্ডার মোহাম্মদ রকি। ৭৬তম মিনিটে ইয়াসিন আরাফাতের ভুলে অল্পের জন্য গোল হজম থেকে রক্ষা পায় বসুন্ধরা কিংস। নিজেদের অর্ধ থেকে আনিসুর রহমান জিকোর উদ্দেশ্যে ব্যাক পাস দিলে তা যথেষ্ঠ ছিল না, বলের পিছনে ছুটছিলেন ব্রাজিলিয়ান ড্যানিলসন রদ্রিগেজ। জিকো বক্স থেকে দ্রুত বের হয়ে এলেও ড্যানিলসন স্লাইড শট বল বাড়িয়ে দেন আমিরুদ্দিন শারিফির উদ্দেশ্যে। তবে তড়িৎ সিদ্ধান্তের অভাবে গোলের সুযোগ হারান আফগান ফরোয়ার্ড।
নির্ধারিত নব্বই মিনিট ১-১ গোলে সমতায় থাকা খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। তিন পরিবর্তন করেন অস্কার ব্রুজন। স্টোজেন ভার্নজেস, মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও আতিকুর রহমান ফাহাদের পরিবর্তে মাঠে নামেন এলিটা কিংসলে, মাহাবুবুর রহমান সুফিল ও বিশ্বনাথ ঘোষ। ১০৮তম মিনিটে রবসন রবিনহোর দূর পাল্লার জোরাল শট ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন পুলিশ গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। ১১২তম মিনিটে গোলরক্ষক জিকোকে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি পুলিশের ফরোয়ার্ড আল আমিন। তবে ১১৮ মিনিটে পুলিশকে স্তব্ধ করে দেয় বসুন্ধরা কিংস। রবসন রবিনহোর কর্নার থেকে সুফিলের হেডে পা ছুঁইয়ে জালে জড়ান ইয়াসিন আরাফাত।
ফলে ২-১ গোলে জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বসুন্ধরা কিংস। তবে পুরো ম্যাচেই বসুন্ধরা কিংসের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে পুলিশ এফসি। ফাইনালে যেতে না পারলেও দুর্দান্ত খেলে জয় করে নিয়েছে সমর্থকদের মন। এ ম্যাচে প্রচুর দর্শক উপস্থিতি দেশের ফুটবলের নতুন করে জেগে ওঠারই ইঙ্গিত দেয়। পাশাপাশি দর্শকদের কাছ থেকে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে, যা ফুটবলে কখনোই কাম্য নয়। তবে দিনশেষে যে দারুন একটা সেমি ফাইনাল উপভোগ করতে পেরেছেন দর্শকরা সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এর আগে প্রথম সেমি ফাইনালে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। আগামী ১৮ই ডিসেম্বর ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের প্রতিপক্ষ ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।