এবারের ফেডারেশন কাপ যেনো অদ্ভুত এক ‘নাট্যমঞ্চ‘। যেখানে প্রতিদিনই মঞ্চস্থ হচ্ছে যেনো নতুন নতুন এক একটি নাটক। সোমবার ছিলো গ্রুপ ‘এ‘ এর মোহামেডান বনাম স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের ম্যাচ। এই গ্রুপের আরেকদল বসুন্ধরা কিংস ইতিমধ্যেই টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই দুই দলের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে আগেই। দুইদলই ওয়াক ওভার পেয়ে ৩-০ গোলের জয় পেয়েছে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে।

আজকের ম্যাচ ছিলো একপ্রকার আনুষ্ঠানিকতার। তবে এই ম্যাচ দিয়ে নির্ধারিত হতো কে হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। এখানে বাঁধলো আরেক বিপত্তি। স্বাধীনতা-মোহামেডান ম্যাচ হয়ে গেলো ১-১ গোলে ড্র। দুইদলের কার্ড ব্যবধানও সমান। বাফুফে ম্যাচ পরিচালনা কমিটি যেনো একপ্রকার নির্বিকার, কিভাবে নির্ধারিত হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ততক্ষণে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে গেছেন দুই দলের ফুটবলাররা। স্টেডিয়ামের বাতিও নিভে গেছে পুরোপুরি। ড্রেসিং রুমে জার্সি বদলিয়ে বাসেও উঠে গিয়েছে মোহামেডানের ফুটবলাররা। ঠিক তখনই পেছন থেকে ডাক এলো, টাইব্রেকারে নির্ধারণ হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। এরকমই এক ‘নাটক‘ আজ মঞ্চস্থ হয়েছে কমলাপুরের টার্ফে। টাইব্রেকারে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ আট নিশ্চিত করে মোহামেডান স্পোর্টিং। স্বাধীনতার হয়ে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন সেলিম রেজা ও সজল ইসলাম এবং মোহামেডানের হয়ে ব্যর্থ হয়েছেন এরন রিয়ারডন। এর ফলে রানার্সাপ হিসেবে শেষ আটে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ।

এর আগে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমন পাল্টা আক্রমনে জমে ওঠে ম্যাচ। শুরুর মিনিটেই স্বাধীনতার রক্ষণভাগ কাপিয়ে দেয় মোহামেডান। দলগত আক্রমণে সতীর্থের থেকে পাওয়া বলে বক্সের কোনা থেকে মিডফিল্ডার সাহেদ মিয়ার শট ক্রস বারের উপর দিয়ে চলে যায়। ২৫ মিনিটে অল্পের জন্য গোলের দেখা পায়নি মোহামেডান। স্বাধীনতার বক্সে জটলার মধ্যে মিডফিল্ডার শাহরিয়ার ইমনের বা পায়ের ভলি ক্রস বার ঘেঁষে চলে যায়। ৩৬মিনিটে আবারো সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেন শাহরিয়ার ইমন। বা দিকে থ্রো ইন থেকে আসা বল দেখে শুনে কিছুটা সময় নিয়ে শট নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি এই মিডফিল্ডার। তবে ৩৯ মিনিটে আর হতাশ করেনি মোহামেডান। সাহেদ মিয়ার কর্নার বক্স থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন মালির ফরোয়ার্ড সোলেমান দিয়াবেতে। ম্যাচে ফিরতে এক মিনিটও সময় নেয়নি স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ। মোহামেডানের দুই ডিফেন্ডারের মাঝ খান দিয়ে ফরোয়ার্ড রাসেল আহমেদের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান বসনিয়ান ফরোয়ার্ড নেদো তুরকোভিচ। ১-১ সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

বিরতি থেকে ফিরে একপ্রকার নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে দুদলের ফরোয়ার্ডরা। ৪৯ মিনিটে সুযোগ এসেছিল স্বাধীনতার সামনে কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি দলটির ফরোয়ার্ড জিল্লুর রহমান। ডান থেকে সতীর্থের দেওয়া ক্রস বক্সের মধ্যে দারুণ ভাবে নিয়ন্ত্রণে নেন জিল্লুর রহমান, মোহামেডানের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বা দিকে খানিকটা সরে এসে বা পায়ের জোরাল শট নিলেও তা জাল খুঁজে পায়নি। এরপর কিছু বিচ্ছিন্ন আক্রমন হলেও গোলের দেখা পায়নি কেউ। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচ।

দুই দলের গোল ব্যবধান ও কার্ড সংখ্যা সমান হওয়ায় শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারের মাধ্যমে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় সাদা-কালোরা। কোয়ার্টার ফাইনালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব মুখোমুখি হবে গ্রুপ সি’র রানার্সাপের সঙ্গে এবং স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ লড়বে গ্রুপ ‘সি’র চ্যাম্পিয়নের সাথে। অপর ম্যাচে শেখ রাসেলের বিপক্ষে মাঠে নামার কথা ছিলো উত্তর বারিধারার। তবে উত্তর বারিধারা টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করায় বায়লজ অনুযায়ী ৩-০ গোলে জয় পেয়েছে শেখ রাসেল।

Previous articleশাস্তি পেল বসুন্ধরা কিংস ও উত্তর বারিধারা ক্লাব
Next articleকিংস-বারিধারার মতোই শাস্তি পেল মুক্তিযোদ্ধা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here