দলবদলে হাই প্রোফাইল বিদেশিদের পাশাপাশি জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলার নিয়ে নতুন মৌসুমে ভালো করার আভাস দিয়েছিল ২০১২-১৩ মৌসুমের ট্রেবল জেতা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। তবে স্বাধীনতা কাপে শেখ রাসেলের দৌড় থেমেছিল শেষ আটেই। অপরদিকে গত কয়েক বছরের শিরোপা খরা ঘুচাতে নতুন মৌসুমের দলবদলে কোস্টারিকান বিশ্বকাপার দানিয়েল কলিন্ড্রেসকে দলে ভেড়ানোর পাশাপাশি ডরিয়েলটন, মিলাদ শেখ, রাকিব হোসেন, সুশান্ত ত্রিপুরা, ইমন বাবু, নুরুল নাঈম ফয়সাল, রেজাউল করিমদের দলে ভেড়ায় ঢাকা আবাহনী। দলে পরিবর্তন এনে ফলাফলও হাতেনাতেই পায় মারিও লেমোস শিষ্যরা। স্বাধীনতা কাপে দাপট দেখিয়ে শিরোপা জিতেই মৌসুম শুরু করে ধানমন্ডির জায়ান্টরা। স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জয়ের পর আবাহনীর পরবর্তী মিশন ছিলো ফেডারেশন কাপ। গত মৌসুমে ফেডারেশন কাপে ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে হেরে ফেড কাপের শিরোপা হাতছাড়া করা আবাহনী তাই ফেডারেশন কাপ নিয়ে ছিলো একটু বাড়তি মনোযোগী।
ঢাকা আবাহনীর গ্রুপে থাকা উত্তর বারিধারা ফেডারেশন কাপ থেকে নাম প্রত্যাহার করায় কোয়ার্টার ফাইনাল আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আকাশী-নীল জার্সিধারীদের। আবাহনীর সাথে শেষ আট নিশ্চিত ছিলো শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রেরও। তাইতো গ্রুপ ‘বি’ এর আবাহনী বনাম শেখ রাসেল ম্যাচটি ছিলো শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। অবশ্য ম্যাচের জয়ী দল হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এমনটাই ছিলো সমীকরণ। আর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের ম্যাচটাই হয়ে উঠলো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন। আর এই এক ম্যাচেই ২৯টি গোল দেখেছেন দর্শকরা! তবে ২৯ গোলের ২৫ টি গোলই হয়েছে টাইব্রেকারে। হোক না টাইব্রেকারে, তবু ফুটবলে এক ম্যাচে ২৯ গোল দেখার সৌভাগ্য কজনেরই বা হয়?
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের খেলা ছিলো ২-২ গোলের সমতায়। ম্যাচের ৮ মিনিটেই আবাহনীকে এগিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডরিয়েলটন। অবশ্য ম্যাচের ২০ মিনিটেই মান্নাফ রাব্বীর গোলে সমতায় ফেরে সাইফুল বারী টিটুর দল। এরপর ৬১ মিনিটেই ডরিয়েলটনের দ্বিতীয় গোলে আবারো এগিয়ে জয় আবাহনী। তবে ম্যাচের শেষ দিকে ৮৪তম মিনিটে শেখ রাসেলকে সমতায় ফেরান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এইলটন ম্যাকাদো। এরপর ২-২ গোলের সমতায় ম্যাচ শেষ হলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের জন্য ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
এমনিতেই এবারের ফেডারেশন কাপ জন্ম দিচ্ছে নতুন এবং উদ্ভট সব ঘটনার। তিন দলের না খেলা, খেলা শেষ হওয়ার পর ক্লাবে ফিরতে রওয়ানা দেওয়া দলকে এনে টাইব্রেকার করা-এমন অনেক কিছুই হচ্ছে।
তবে আগের ঘটনাগুলোর জন্য বাফুফের দিকে আঙুল তোলার সুযোগ থাকলেও বুধবার কমলাপুরে আবাহনী ও শেখ রাসেলের ম্যাচে যা হলো, তা নতুন এক বিনোদন। এখানে বাফুফে বা রেফারির কোনো দায় নেই। দিনশেষে মাঠের ফুটবলের রোমাঞ্চটা উপভোগ করতে পেরেছেন কেবল দর্শকরাই।
নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে ড্র থাকার পর টাইব্রেকারেও প্রথম ৫ শটে ৪-৪ এ সমতা। ফলে ম্যাচ গড়ায় ‘সাডেন ডেথে’। সেখানেও একের পর এক গোল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১২-১২ হওয়ার পর রাসেলের নাসির উদ্দিন চৌধুরী গোল করতে পারলেও পারেননি আবাহনীর ইমন মাহমুদ বাবু।রাসেল ১৩ গোল করলে আবাহনী থামে ১২টিতে। শেখ রাসেল টাইব্রেকারে ১৩-১২ গোলে জিতে হয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। তাইতো কোয়ার্টার ফাইনালে দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ডার্বি। গ্রুপ ‘এ’-এর চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ আটে পৌঁছানো ঢাকা মোহামেডানের বিপক্ষে লড়বে ঢাকা আবাহনী। আর স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে শেষ চারে যাওয়ার মিশন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের।