বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সফলতম ক্লাবের নাম বলতে বলা হলে সবার মাথায় যেই নামটা প্রথমেই চলে আসবে তা হলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই নিজেদের এই জায়গা তৈরি করে নিয়েছে ধানমন্ডির জায়ান্টরা। মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপের পর এবার ফেডারেশন কাপেরও শিরোপা নিজেদের ঘরে তুললো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩৩তম ফেডারেশন কাপের পুরান ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইকে ২-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের ১২তম ফেডারেশন কাপের শিরোপা জয় করলো মারিও লেমোসের শিষ্যরা। ২০১৮ সালে বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে সবশেষ ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী। এরপরের দুই আসরে ফাইনালেই উঠতে পারেনি আকাশী-নীল শিবির। অবশেষে আজ চ্যাম্পিয়ন হয়ে তিন বছর আগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে আবাহনী লিমিটেড। অপরদিকে ফেডারেশন কাপের ফাইনালটি ছিল রহমতগঞ্জের ইতিহাস রচনার মঞ্চ। দেশের ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ এসেছিল রহমতগঞ্জের সামনে। সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে আবার। বছর দুই আগে বসুন্ধরা কিংসের কাছে স্বপ্নভঙের পর এবার আবাহনীর কাছে আবারো স্বপ্নভঙ্গ হলো পুরান ঢাকার জায়ান্টদের।

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আবাহনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে খেলার চেষ্টা চালায় রহমতগঞ্জ। অপরদিকে ইনজুরির কারণে আবাহনীর তিন গুরুত্বপূর্ন ফুটবলার রাফায়েল অগোস্তো, সুশান্ত ত্রিপুরা ও ডরিয়েলটন গোমেজ না থাকায় শুরু থেকে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে আবাহনী। সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমন চালায় পুরান ঢাকার ক্লাবটি। ম্যাচের ১২তম মিনিটে খন্দকার আশরাফুলের বাড়ানো বলে সানডে চিজোবার দূরপাল্লার শট গোলবারের পাশ দিয়ে যায়। ১৪তম মিনিটে সানডে চিজোবার থ্রু পাস থেকে বল পান ফিলিপ আদজাহ ,বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে শট নিলেও তার শট ঠেকিয়ে ঢাকা আবাহনীকে বিপদমুক্ত রাখেন গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল।

২৯তম মিনিটে গোল করার সুবর্ন সুযোগ নষ্ট করেন আবাহনীর অধিনায়ক নাবিব নেওয়াজ জীবন। জুয়েল রানার হেড থেকে পাওয়া বলে গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন এই ফরোয়ার্ড। তার নেওয়া শট চলে যায় বার পোস্টের অনেকটা উপর দিয়ে। এরপর ৩৬তম মিনিটে রহমতগঞ্জের অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান কিরনের কর্নার থেকে নেয়া এনামুল ইসলামের হেড চলে যায় ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে যায়। ৪৪তম মিনিটে রাকিব হোসেনের দূর পাল্লার শট ঠেকিয়ে দেন রহমতগঞ্জ গোলকিপার রাকিবুল হাসান তুষার। এরপর প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে আবাহনীকে লিড এনে দেন কোস্টারিকান বিশ্বকাপার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে রাকিব হোসেনের পাস থেকে বল পেয়ে বা পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড। ফলে ১-০ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আবাহনী লিমিটেড।

বিরতি থেকে ফিরে ৪৯তম মিনিটে রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডার সানোয়ার হোসেনের ভুলে বল পেয়ে যান গোলদাতা ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। তবে তার নেয়া শট লক্ষ্যে থাকেনি। ৬৪তম মিনিটে রহমতগঞ্জ গোলকিপার রাকিবুল হাসান তুষারের হাত ফসকে বল পেয়ে যান আবাহনীর উইঙ্গার রাকিব হোসেন। বল পাওয়ার সাথে সাথেই কাল বিলম্ব না করে জালে জড়ান রাকিব। ফলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আকাশী নীল জার্সিধারিরা। ২ গোল হজম করে যেন আহত সিংহের মতো জেগে ওঠে সৈয়দ গোলাম জিলানী শিষ্যরা। ৭০তম মিনিটে ১ গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে ফেরার আভাস দেয় রহমতগঞ্জ।মিডফিল্ডার শাহরিয়ার বাপ্পীর পাস থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে গোলকিপার শহীদুল আলমকে কাটিয়ে চমৎকার গোল করেন ঘানার ফরোয়ার্ড ফিলিপ আদজাহ। তবে ১ গোল ফেরত দিয়ে আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত আর ২য় গোলটি শোধ দেওয়া হয়নি রহমতগঞ্জের।

ফলে ২-১ গোলের জয়ে ১২ বারের মতো ফেডারেশন কাপের শিরোপা নিজেদের ট্রফি ক্যাবিনেটে তুলে নিলো বাংলাদেশের সফলতম ক্লাব ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। অপরদিকে দ্বিতীয়বার ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলেও রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির।

Previous articleবালিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া
Next articleফেডারেশন কাপের সেরা খেলোয়াড় কলিন্ড্রেস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here