ঘরোয়া ফুটবলে অভিষেকেই চমক দেখিয়েছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে নাম লিখিয়েই উঠে গিয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আসার পথে ছিল অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও। এইতো সেদিন, ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের। এক বছরেই বাংলাদেশের ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে সাইফ। বাংলাদেশ ফুটবলে এখন বাকি ক্লাবগুলোর কাছে সমীহ জাগানিয়া নাম সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।

বাংলাদেশের ফুটবলে আগমনের পর থেকে বেশ কিছু ‘প্রথমের‘ জন্ম দিয়েছে সাইফ। প্রথম ও একমাত্র ক্লাব হিসেবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। সার্বিয়ান কোচ নিকোলা কাভাজোভিচ প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রথম কোনো বাংলাদেশী ক্লাব হিসেবে প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি নিতে দেশের বাইরে যায় সাইফ। কলকাতায় গিয়ে প্রাক মৌসুম ক্যাম্প করার পাশাপাশি আই লিগের দল সাউদার্ন সমিতি ও ইস্ট বেঙ্গল যুবদলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে সাইফ।

তবে সেই ক্যাম্প চলাকালীন সময়ে বরখাস্ত হন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে সাইফকে প্রিমিয়ার লিগে তোলা সার্বিয়ান কোচ নিকোলা কাভাজোভিচ। সেই থেকেই কোচ বদলের ধারা শুরু হয় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশী বিদেশি মিলিয়ে মোট ১০ জন কোচ দায়িত্ত্ব পালন করেছেন সাইফের। নিকোলা কাভাজোভিচকে দিয়ে শুরু, এরপর একের পর এক সাইফের কোচের হট সিটে বসেছেন আবার হট সিট হারিয়েছেন কিম গ্র্যান্ট, রায়ান নর্থমোর, স্টুয়ার্ট হল, জনি ম্যাকেনস্ট্রি, মোহাম্মদ নিজাম, দ্রাগো মামিচ, পল পুট, জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের কোচের আসনে এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক আর্জেন্টাইন কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি।

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বর্তমান স্কোয়াডে রয়েছে জাতীয় দলের বেশ কিছু তারকা ফুটবলার। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া সাইফেরও নেতৃত্বের দায়িত্বে। এছাড়াও রিয়াদুল হাসান রাফি, ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা জাতীয় দলের স্কোয়াডের নিয়মিত মুখ। এছাড়াও সাজ্জাদ, রহিম, সাদ্দাম অ্যানি, মারাজ, জমির, উচ্ছাসদের মতো তরুণরাও নিয়মিতই আলো ছড়াচ্ছেন সাইফের জার্সিতে। এদের পাশাপাশি বিদেশি কোটায় রুয়ান্ডা জাতীয় দলের ডিফেন্ডার এমেরি বাইসেঙ্গের সঙ্গে দুই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমফন সানডে এবং এমেকা উগবুগ ও এশিয়ান কোটায় উজবেক মিডফিল্ডার আসরর গাফুরভ এই মৌসুমে সাইফের জার্সিতে মাঠ মাতাবেন। ইতোমধ্যেই অবশ্য স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপে মাঠে নেমেছেও আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানির সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।

দেশের ফুটবলে বিগ বাজেটের দল হিসেবে পরিচিতি পেলেও সেই অর্থে সাফল্য কুড়াতে পারেনি সাইফ। ঘরোয়া ফুটবলে সাইফের একমাত্র অর্জন ২০২০ সালের ফেডারেশন কাপের রানার্স আপ হওয়া। এছাড়া ২০১৮ সালে ভারতে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট বদৌসা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরে সাইফ। একবার এএফসি কাপের প্রিলিমিনারী রাউন্ডে খেললেও গ্রুপ পর্বে পৌঁছানো হয়নি সাইফের। বিগ বাজেটের দল নিয়েও বারবার কেনো ব্যার্থ হচ্ছে সাইফ? ঘনঘন কোচ পরিবর্তনই কি এর মূল কারণ? তাহলে এখানে আরো একটি প্রশ্ন জাগতে পারে, এতো ঘনঘন কোচ পরিবর্তনই বা কেনো করা হয়। এটা কি সাইফের সাংগঠনিক দুর্বলতা? নাকি কোচের কাছ থেকে প্রত্যাশামাফিক সাফল্য না পাওয়া। আর একজন কোচের কাছ থেকে সাফল্য পেতে তাকে কি কাজ করার পর্যাপ্ত সময় দিয়েছে সাইফ?

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সাফল্য না পাওয়ার আরো একটি বড় কারণ তাদের বিদেশি ফুটবলারদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স না পাওয়া। তবে আশার বাণী হলো সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে তরুণরা দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। মৌসুমের প্রথম দুই টুর্নামেন্টে ফাহিম, মারাজ, রহিম উদ্দিনদের পারফরম্যান্স ছিলো চোখে পড়ার মতো। আসন্ন প্রিমিয়ার লিগে এদের পাশাপাশি বিদেশি ফুটবলারদের জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় থাকবেন সাইফ কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি। গত মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ৪র্থ হওয়া সাইফ এবার কেমন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। বসুন্ধরা-আবাহনীর মতো দলগুলোর সাথে লড়াই করে শিরোপার রেসে থাকবে তো সাইফ? প্রশ্নটা না হয় তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্য।

Previous articleআগামীকাল তপু বর্মনের অস্ত্রোপচার হবে ভারতে
Next articleপাইওনিয়ার লিগে বয়স চুরি ঠেকাতে কঠোর বাফুফে; ক্লাবগুলোর সাধুবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here