ঘরোয়া ফুটবলে সফলতম দল ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের হাত ধরে ১৯৭২ সালে আবাহনী ক্রীড়া চক্র নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করা ক্লাবটি এবছর পা দিয়েছে গৌরবের ৫০তম বছরে। ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সামনে দাড়িয়ে এবারের মৌসুমটাও দারুণভাবে শুরু করেছে আকাশী-নীল জার্সিধারিরা। মৌসুমের প্রথম দুই টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতে এখন ‘ট্রেবল‘ জয়ের হাতছানি আবাহনীর সামনে।
ট্রফির বিচারে বাংলাদেশের সফলতম ক্লাব ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির ট্রফি ক্যাবিনেটে রয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ৬টি, ঢাকা লিগের (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পূর্বে বাংলাদেশের শীর্ষ ফুটবল লিগ) ১১টি, ফেডারেশন কাপের ১২টি, স্বাধীনতা কাপের ২টি এবং সমান একটি করে লিবারেশন কাপ, ডিএমএফএ কাপ, জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, সুপার কাপ ও বিটিসি ক্লাব কাপের শিরোপা। দেশের বাইরেও ভারত থেকে সাইত নাগজী ট্রফি (১৯৮৯), চার্মস কাপ (১৯৯৪) ও বরদলোই ট্রফি (২০১০) জিতে দেশে ফেরে আবাহনী। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে আধিপত্য বিস্তার করা আবাহনী ২০১৮ সাল থেকে হঠাৎ করেই কেমন যেনো নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। বসুন্ধরা কিংসের হঠাৎ করে দেশের ফুটবলে রাজকীয় উত্থানে কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে আবাহনী। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কোনো শিরোপার মুখই দেখেনি আবাহনী। তবে ২০১৯ সালের এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমি ফাইনালে খেলে (বাংলাদেশী ক্লাব হিসেবে এশিয়ার মঞ্চে সেরা অর্জন) সবাইকে চমকে দেয় মারিও লেমোসের শিষ্যরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পেলেও ঘরোয়া আসরগুলোতে নিজেদের হারিয়ে খোঁজা আবাহনী এবারের মৌসুমে যেনো নতুন উদ্যমে জেগে ওঠেছে। মৌসুমের প্রথম দুই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স সেই ইঙ্গিতই দেয়।
গেলো কয়েক মৌসুমের ব্যার্থতা ঘুচাতে দলবদলে বেশ মনোযোগী ছিল আবাহনী কর্তৃপক্ষ। গত মৌসুমে আবাহনীতে খেলা চার বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে শুধু মাত্র ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগোস্ত ছাড়া বাকি তিন বিদেশি সানডে চিজোবা, কার্ভেনস বেলফোর্ট ও মাসিহ সাইঘানিকে ছেড়ে দেয় আবাহনী। তাদের জায়গায় কোস্টারিকার হয়ে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসের সাথে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডরিয়েলটন এবং ইরানিয়ান ডিফেন্ডার মিলাদ শেখকে দলে যুক্ত করে আকাশী নীলরা। এছাড়াও স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে মামুনুল ইসলাম, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, ওয়ালি ফয়সালদের মতো ত্রিশোর্ধ ফুটবলারদের ছেড়ে দিয়ে ইমন বাবু, নুরুল নাঈম ফয়সাল, সুশান্ত ত্রিপুরা, রাকিব হোসেনদের, মাহফুজ হাসান প্রীতমদের মতো তরুণ তুর্কিদের দলে ভেড়ায় আবাহনী। আর মাঠে এই তারুণ্যের জয়গান গেয়ে নতুন মৌসুমের প্রথম দুই শিরোপাই জয় করে নেয় আবাহনী। এবার আবাহনীর লক্ষ্য লিগ শিরোপা জয় করে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পর দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে এক মৌসুমে তিনটি শিরোপা অর্থাৎ ‘ট্রেবল‘ জয় করা।
‘ট্রেবল‘ জয়ের পথে আবাহনীর বড় দুশ্চিন্তার কারণ ‘ইনজুরি’। দুই ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগোস্ত ও ডরিয়েলটন ভুগছেন ইনজুরিতে। যদিও লিগের শুরু থেকেই এই দুজনকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আবাহনী কর্তৃপক্ষ। আর ফেডারেশন কাপের শিরোপা জয়ের পর অসুস্থ মাকে দেখতে কোস্টারিকায় যাওয়া ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস এখনো দেশে ফেরেননি। তবে লিগ শুরুর আগেই আবাহনীর ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার। ইনজুরি সমস্যা আছে দেশের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ইমন বাবুরও। লিগের প্রথম দিকের ২-৩ ম্যাচে তাকে পাবেন না লেমোস। এছাড়া সম্ভামনাময় তরুণ মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয় উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরাও ফেডারেশন কাপে পাওয়া চোট থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি। তারপরও ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বছরটায় ট্রেবল জিতে মাইলফলকের বছরটি স্মরণীয় করে রাখতে বদ্ধ পরিকর আবাহনী লিমিটেড। পাশাপাশি এএফসি কাপের প্লে অফ উতরে গ্রুপ পর্বে যেতেও আশাবাদী আবাহনী। দেখা যাক এবারের মৌসুমে ‘ট্রেবল’ জয়ের পাশাপাশি এএফসি কাপে ভালো ফলাফল করে নিজেদের গৌরবের ৫০তম বছরটা স্মরণীয় করে রাখতে পারে কিনা বাংলাদেশের সফলতম ক্লাব ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।