এই মৌসুমের শুরু থেকেই একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এবং হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দ্বারা। তবে সমন্বয়হীনভাবে টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামকে বিপিএলের ভেন্যু হিসেবে চিহ্নিত করে সবচেয়ে বড় ঝামেলাটা করেছে বাফুফে। কেননা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খেলা আর্চারির আর্চাররা এই মাঠেই নিয়মিত অনুশীলন করে আসছেন। তারপরও দেশের ফুটবলের বৃহৎ স্বার্থে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাথে সমন্বয় করে ম্যাচ আয়োজনের আহ্বান জানান ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। কিন্তু কিসের সমন্বয়, কিসের কি। প্রিমিয়ার লিগের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ফিকশ্চারে ৭৫ শতাংশ ম্যাচই টঙ্গীতে আয়োজন করবে বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই অনুশীলনে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে আর্চারদের। তাইতো আর্চাররা এখন যেনো, ‘নিজেদের ঘরেই পরবাসী’!
ফুটবল ফেডারেশনের এমন কাণ্ডে এবার সরব হয়েছেন দেশের খেলাধুলার সর্বোচ্চ অভিভাবক। টঙ্গীর মাঠে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রিমিয়ার আয়োজনের প্রক্রিয়াকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। পাশাপাশি বাফুফের টঙ্গী স্টেডিয়ামকে দখলের প্রক্রিয়াকে ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি, “ফুটবল ফেডারেশন ও আর্চারি ফেডারেশনের মধ্যে যে ঝামেলাটি তৈরি হয়েছে সেটি কিন্তু হওয়ার কথা নয়।গত বছর আমরা যখন ফুটবলকে অনুমোদন দিয়েছিলাম, তখন বলা হয়েছিল যে, আরচারি যেহেতু স্টেডিয়ামটি ব্যবহার করছে তাই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফুটবলকে ব্যবহার করতে হবে। আরচারি যদি মনে করে ফুটবল স্টেডিয়াম ব্যবহার করতে পারবে, তাহলে ব্যবহার করবে। না হলে অন্য জায়গায় যেতে হবে। এটা আমাদের লেখা ছিল।”
ভেন্যু নিয়ে ফুটবল ও আরচারির মধ্যে যে টানা-হ্যাঁচড়া চলছে তা নিয়ে বাফুফের ওপর বেশ ক্ষোভ ঝেড়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, “যেভাবে লেখা ছিল ফুটবল সেটা করেনি। গতবারও করেনি। এবার আমরা দেখলাম তার চেয়েও ভয়াবহ বিষয়। ৭টি ভেন্যুতে ফুটবল খেলার কথা ছিল। সেটা না করে চারটি করলো। পরে আবার কমে কমে দুটি হলো। আমার কথা হলো সারা বাংলাদেশে আমরা যে স্টেডিয়াম করছি সেগুলো তাহলে কাদের জন্য করছি? কারা ব্যবহার করবে? কে খেলবে স্টেডিয়ামগুলোতে?”
টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামটি বর্তমানে আর্চারি ছাড়া অন্য খেলা আয়োজনের জন্য উপযোগি নয় উল্লেখ করে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এই স্টেডিয়াম ফুটবলের মতো বড় ইভেন্ট বিশেষ করে জাতীয় লিগ করার মতো এবং সকল দলের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মতো অবস্থা এই স্টেডিয়ামের নেই। সে ধরনের ড্রেসিং রুম নেই, সাংবাদিকদের বসার স্থান নেই। স্টেডিয়ামটি আরচারি ব্যবহার করছে বলে এ নিয়ে নতুন করে ভাবিনি। ভবিষ্যতে আমরা অন্যান্য খেলার সুযোগ তৈরি করে দেবো। এখন এখানে আরচারিকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। না হলে আরচারিই স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে। ২০ ফেব্রুয়ারির পর এখানে সপ্তাহে একটি করে ফুটবল ম্যাচ হবে।”
তাইতো এবার প্রিমিয়ার লিগের ভেন্যু নিয়ে জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পেশাদার লিগ কমিটি। কেননা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগের রাতেই ভেন্যুর তালিকায় থাকে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের নাম বাদ দিয়েছে বাফুফে। এছাড়া বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামকেও ম্যাচ আয়োজনের জন্য পায়নি বাফুফে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ আয়োজনে ভেন্যু নিয়ে যে বড়সর জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। দেখা যাক কিভাবে এই পরিস্থিতির সামাল দেয় বাফুফে।