বসুন্ধরা কিংসের সাথে ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেসের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গেলো ৩১ মে। নতুন করে চুক্তি করতে ক্লাব ও খেলোয়াড় দুই পক্ষই রাজি ছিলো তবে সেক্ষেত্রে দুই পক্ষের চাহিদার জায়গা ছিলো ভিন্ন। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়াতে শেষ হলো কলিন্ড্রেসের বসুন্ধরা কিংস অধ্যায়।
দেশের প্রথম সারির ফুটবলে ২০১৮ সালে নবাগত হিসেবে যাত্রা শুরু করা বসুন্ধরা কিংস তাদের বিদেশি খেলোয়াড়ের তালিকায় বেশ বড়সড় চমক হিসেবে ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেসের নাম লিখান। সে বছর রাশিয়া বিশ্বকাপে কোস্টারিকার হয়ে অংশ নিয়েছিলেন কলিন্ড্রেস। এইরকম প্লেয়ারকে নিজেদের দলে যুক্ত করে দেশের ঘরোয়া ফুটবলেও বেশ চমকপ্রদ অবস্থা তৈরি করেছিলো কিংস। প্রথমে কলিন্ড্রেসের সাথে এক বছরের চুক্তি করেছিলো বসুন্ধরা। কিংস পায় তাদের প্রথম তারকা।
রাশিয়া বিশ্বকাপের পর কলিন্ড্রেস তার সাবেক ক্লাব সাপ্রিস্সাকে বিদায় জানিয়ে বসুন্ধরার সঙ্গে চুক্তি করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম ঢাকায় আসেন। সেই বছরের ফেডারেশন কাপে অংশ নিয়ে টিম বিজেএমসির বিপক্ষে মাত্র ১৫ মিনিটে হ্যাট্রিক করেছিলেন কলিন্ড্রেস। যেটি দেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে এখনো সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে হ্যাট্রিকের রেকর্ড। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস একে একে স্বাধীনতা কাপ, বাংলাদেশ লীগ এবং ফেডারেশন কাপ জিতেছেন। এই শিরোপা গুলো জিততে কিংসের জার্সি গায়ে কলিন্ড্রেসের ভুমিকাও ছিলো বেশ অনবদ্য। বসুন্ধরার জার্সি গায়ে ৪৮ ম্যাচে মোট ২৬ টি গোল করেছেন কলিন্ড্রেস। যেখানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ১৫টি, ফেডারেশন কাপে ৮টি এবং স্বাধীনতা কাপ, শেখ কামাল ক্লাব ও এএফসি ক্লাবে রয়েছে ১টি করে গোল রয়েছে তার।
বসুন্ধরা কিংসে যোগ দেয়ার পর কোচ অস্কার ব্রুজোন তাকে পুরোপুরি নাম্বার নাইনে না খেলিয়ে খেলিয়েছিলেন লেফট উইংয়ে। নাম্বার নাইনের পাশাপাশি উইংয়ে খেলতেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। সেখানে খেলে দিয়েছেন কোচের আস্থার প্রতিদানও। প্রথম মৌসুমে ব্রাজিলিয়ান মার্কোস ভিনিসিয়াস ও বাংলাদেশের মতিন মিয়াকে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়ে কলিন্ড্রেসকে একটি ভালো জুটি গড়ে দেন। এবারের মৌসুমে লিওনেল মেসির সতীর্থ আর্জেন্টাইন হার্নান বার্কোসকে এনে আরো শক্তিশালী আক্রমণভাগ গড়ে ফেলে কিংস। এই শক্তিশালী আক্রমনভাগের ঝলক এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচেই দেখতে পায় সমর্থকরা। অসাধারণ এই জুটি এএফসি কাপে আরো ঝলক দেখাবে এমন প্রত্যাশাই ছিলো সকলের। কিন্তু কলিন্ডেসের বিদায়ে আর এই আলোড়ন তোলা জুটিকে দেখতে পাবে না দেশের ফুটবল সমর্থকরা।
করোনা ভাইরাসের জন্য এই মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বাতিল হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি এএফসি কাপও স্থগিত রয়েছে। সম্ভাব্য অক্টোবরে অনুষ্ঠিত শুরু হতে পারে এএফসি কাপ। সেক্ষেত্রে ৩১ মে চুক্তি শেষ হওয়া কলিন্ড্রেসের সঙ্গে বসুন্ধরা পুনরায় ফুটবল চালু হওয়ার সময়ে চুক্তি করতে আগ্রহী থাকলেও কলিন্ড্রেস চেয়েছিলেন এখনই নতুন চুক্তি করতে। কিন্তু মাঝের সময়টাতে শুধু শুধু প্লেয়ারকে টাকা কেন দিবে এমন অবস্থা বিবেচনায় আর চুক্তি করেনি বসুন্ধরা কিংস। এছাড়া বাড়তি অর্থই দাবি করছিলো কলিন্ড্রেসের এজেন্সি পক্ষ। শেষ অবদি দুই পক্ষের সমোঝোতাতেই সমাপ্তি ঘটলো কলিন্ড্রেসের বসুন্ধরা কিংস অধ্যায়ের।
বিদায় বেলা বাংলাদেশের কথা সবসময় মনে থাকবে বলে কলিন্ড্রেসের বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতিতে কাজ করেছি। শুধু আমি নই, সবাই মিলে। বসুন্ধরা ভালো ক্লাব। আমি ভাগ্যবান যে এখানে খেলতে পেরেছি। এই ক্লাবের হয়ে আমার বেশ ভালো সময় কেটেছে। এখানকার মানুষ খুব ভালো। এই দলটির হয়ে আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অনেক সুন্দর স্মৃতি রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের কথা সবসময় মনে থাকবে।’
তবে কলিন্ড্রেসের এই বিদায়ে কিংস সমর্থকদের মাঝে রয়েছে কিছুটা চাপা ক্ষোভ, তারা যে নিজের করে নিয়েছিলেন এই কোস্টারিকানকে। তারা আর দেখতে পাবে না লাল জার্সিতে দুই হাত প্রসারিত করে সেই গোলের উদযাপন। কবির ভাষায় হয়তো তারাও বলতে চান, ‘বিদায় বেলায় সাজ-টাজ আমি মানি না, আমি চাই ফিরে এসো তুমি স্মৃতি-বিস্মৃতির প্রান্তর পেরিয়ে’। কিংস ফ্যানরা চায় ফিরে আসুক তাদের প্রথম তারকা।