গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশে খেলতে আসা অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার হিসেবে বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজের নাম ওপরের দিকেই থাকবে। ২০২০ সালে প্রথমবার বাংলাদেশে এসে জিতেছেন একটি করে প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপের শিরোপা। তবে চলতি মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপে ডান পায়ের হাঁটুর লিগামেন্টের চোট মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত পহেলা মার্চ বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলের বিমান ধরছেন কিংসের জার্সিতে ৩৪ ম্যাচ খেলে ১৩ গোল করা জোনাথন। সোমবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় পায় কিংস। এই ম্যাচ শেষেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় দেওয়া হয় জোনাথন ফার্নান্দেজকে। সতীর্থদের দেওয়া ‘গার্ড অব অনার’ ও নিশ্চয়ই অনেকদিন মনে থাকবে এই মিডফিল্ডারের। বাংলাদেশের কোনো ক্লাব থেকে এমন বিদায় দেওয়ার ঘটনা শেষ কবে দেখেছেন দর্শকরা সেটা খুঁজতেও নিশ্চিতভাবে অনেক ঘাটাঘাটির প্রয়োজন।
এমন অনাড়ম্বর বিদায় জোনাথন নিজেও আশা করেননি। বিদায় বেলায় জোনাথন বলেন, “ক্লাব এরকম একটা আয়োজন করবে ভাবনায় ছিলো না। দারুন একটা মুহূর্ত ছিল আমার জন্য। ক্লাবের সকল ফুটবলার, স্টাফ ও সভাপতি আর ফ্যানদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
এর আগে ব্রাজিল ছাড়া অন্য কোনো দেশের ক্লাবে না খেলা জোনাথন ফার্নান্দেজের কাছে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসই ছিল প্রথম কোনো বিদেশি ক্লাব। সেই প্রথম দিন থেকে শুরু বিদায়ের আগ মুহূর্তে পর্যন্ত কেমন লাগলো বাংলাদেশ? বাংলাদেশ ও বসুন্ধরা কিংস সম্পর্কে জোনাথনের মূল্যায়ন, “প্রথম দিন থেকেই বসুন্ধরা কিংস আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ন ছিল। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে বাংলাদেশে খেলতে পেরে আমি আনন্দিত। সবকিছুর জন্য বসুন্ধরা কিংস সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।” বসুন্ধরা কিংসের হয়ে ১৩ গোল করা জোনাথন ফার্নান্দেজের কাছে ২০২০ সালের ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে করা গোলটিই সেরা বলে মনে করেন এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার, “আমি ক্লাবের হয়ে ২টি শিরোপা জিতেছি। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে গোলটিই আমার কাছে সেরা, সে ম্যাচে জয়টা আমাদের জন্য খুব জরুরি ছিল।”
ইনজুরি কাটিয়ে আবারো বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী জোনাথন ফার্নান্দেজ। জোনাথন ফার্নান্দেজ বলেন, “আমি আবার বাংলাদেশে আসতে চাই। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে আবারো খেলতে পারলে দারুন খুশি হবো। তবে আমার এখন সব মনোযোগ অস্ত্রোপচার করিয়ে কীভাবে পুনর্বাসন শেষে মাঠে ফিরব, তা নিয়ে।”
সবশেষে বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে জোনাথন ফার্নান্দেজের পর্যবেক্ষণ, “বসুন্ধরা কিংস এবং বাংলাদেশে ভালো মানের ফুটবলার আছে। দিন দিন ওরা ভালো করলে বাংলাদেশও ভালো ভালো ফুটবলার পাবে। তবে এখানে (বাংলাদেশে) মূল সমস্যাটা হলো মাঠ। ভালো ফুটবল খেলার জন্য ভালো মাঠের কোনো বিকল্প নেই। ভালো খেলা না হলে দর্শকেরাও আগ্রহী হবেন না। এই জায়গাটিতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।”
বসুন্ধরা কিংসের সাথে নভেম্বর পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে অস্ত্রোপচার করাতে বাংলাদেশ ছাড়তে হচ্ছে জোনাথন ফার্নান্দেজকে। তবে ব্রাজিলে থাকলেও মন পরে থাকবে বাংলাদেশে বলে জানান জোনাথন। বসুন্ধরা কিংসের সবগুলো ম্যাচ ব্রাজিল থেকে দেখার পাশাপাশি সেখান থেকেই দলকে সমর্থন যোগাবেন তিনি। মধ্যবর্তী দলবদলে জোনাথন ফার্নান্দেজের বিকল্প খুঁজে নেবে বসুন্ধরা কিংস।