বাংলাদেশের ফুটবলে মেয়েটা যখন দলকে একের পর এক সাফল্যের পরশ এনে দিচ্ছে। সেখানে পরিবারের বড় ছেলেটাই যেনো টালমাটাল অবস্থায় বিরাজমান। ফুটবলের যেই রণাঙ্গনে দেশের ঝান্ডা মেয়েরা ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে, সেই একই রণাঙ্গনে প্রতিপক্ষে একজনের কাছে কচুকাটা হয়েছে ছেলেদের দল। গতানুগতিক ফুটবলে মত্ত হয়ে ভক্তদের আশাকে নিয়ে ভরাডুবি হওয়াই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তবে দায়িত্বে থাকা ফুটবলার,কোচিং স্টাফ কিংবা ফেডারেশনের টনক নড়বে কবে?কবেই বা ভক্তরা তাদের ফুটবলারদের কাছে আশানুরূপ ফলাফলের দেখা পাবে?

গোলের খেলা ফুটবলে দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচানোই ডিফেন্ডারদের মূল দায়িত্ব। একটা দলের ডিফেন্স যতটা নিখুঁত থাকে ওই দলের সাফল্য পাওয়াও ততটাই সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় যেন এসব কোনো কিছুই মেলে না। বাংলাদেশের ডিফেন্স মানে যেন প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের সঙ্গী। অন্তত নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের পারফরম্যান্স সেটাই বলে। ডিফেন্ডারদের গা ছাড়া ভাব বলে দেয় যেন তারা রক্ষণ সামলাতে নয়, নেমেছে নেপালের আক্রমণে সহায়তা করতে। ক্লাব ফুটবলে বাংলাদেশের ফুটবল বোদ্ধাদের ট্রলের পাত্র হন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডিফেন্ডার হ্যারি মাগুয়ের। কিন্তু এইসকল ফুটবল বোদ্ধারাই যদি বাংলাদেশের ফুটবলের দিকে সামান্যতম নজর রাখতেন তাহলে হয়তো ভিনদেশী হ্যারি মাগুয়েরকে নিজেদের মন থেকে মুছে ফেলে বিশ্বনাথ ঘোষ, টুটুল হোসেন বাদশা, রিমন হোসেন নামের বাংলাদেশ দলের বাঘা ডিফেন্ডারদের ট্রলেই মত্ত থাকতেন।

চলমান ফিফা উইন্ডোতে ভাগ্যগুণে জয় পেয়ে কম্বোডিয়ার বাধা পেরিয়ে এলেও ৫ দিনের ব্যবধানে নেপালের কাছেই হেরে বসেছে বাংলাদেশ দল। সেপ্টেম্বরের ফিফা উইন্ডোতে নিজেদের দ্বিতীয় আন্তজার্তিক প্রীতি ম্যাচে অঞ্জন বিস্তার হ্যাট্রিকে নেপালের কাছে তারা হয়েছে ৩-১ গোলে। ১৬ মিনিটে এগিয়ে সুযোগ তৈরি হয়েছিলো বাংলাদেশের কাছে, কিন্তু বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিক শট বারে লেগে ফিরে এলে সব আশাই মাটি হয়ে যায়। বাংলাদেশের ফি-কিক যেখানে ব্যর্থ নেপালের ভাগ্য খুলেছে সেই ফ্রি-কিক থেকেই। ১৮ মিনিটের সময় বিমল ঘারতির বাম পায়ের বাঁকানো ফ্রি-কিক থেকে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের জড়তার সুযোগ নিয়ে গোল করে নেপালকে ম্যাচে এগিয়ে দেন মিডফিল্ডার অঞ্জন বিস্তা।

২৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি হজম করে বাংলাদেশ। বিমল রাইয়ের লম্বা করে বাড়ানো পাস থেকে বিমল ঘারতি হয়ে বল পায় তেজ তামাং। বল পেয়ে সোজাসুজি গোলে শট করে তেজ তামাং। বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো তেজ তামাংয়ের শটটি ঠেকিয়ে দিলেও অঞ্জন বিস্তার নেওয়া ফিরতি শট চেষ্টা করেও গোল লাইন ক্রস করা থামাতে পারে নি। ম্যাচের সময় চল্লিশ মিনিট পেরনোর আগেই তৃতীয় গোলটিও হজম করে বসে বাংলাদেশ। ৩৮ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে বিমল রাইয়ের চমৎকার ক্রসিং থেকে হেডে গোল করে হ্যাট্রিক পূরণ করে অঞ্জন বিস্তা। বক্সের ভেতরে অঞ্জন বিস্তার চোখে চোখে রাখার দায়িত্ব ছিলো বাংলাদেশ দলের ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশার কাছে। কিন্তু বাদশা ভাবলেশহীন রক্ষণাত্মক বাধার ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়ে সুন্দর সেই গোলটি আদায় করে নেয়। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোও ছিলেন কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে। এতে করে নিজের মাঠে ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে গোর্খা যোদ্ধরা।

ম্যাচের ৫৫ মিনিটে কাউন্টার এটাকে বিপলু আহমেদের পাস থেকে বল পেয়ে মাঠের ডানপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে একাই বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়ে রহিত চাদকে টপকে গিয়ে রাকিব হোসেন বক্সের ভেতরে ক্রস করলে নেপালের মাঝমাঠের খেলোয়াড় সেসাং আঙদেম্বের পায়ে লেগে বল ডিফ্লেক্টেড হয়ে উপরে উঠে যায়, সেখানে সাজ্জাদ হোসেন এগিয়ে এসে হেড করে গোল করলে বাংলাদেশ ম্যাচে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পায়। ৬৯ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে সাজ্জাদ হোসেন। ডানপ্রান্ত থেকে রাকিব হোসেনের বাম পায়ের ক্রস ক্রসিংয়ে হেডে হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস গোলের সুযোগ মিস করলে তার থাকা সাজ্জাদ হোসেনের জন্য গোলের একটি দারুণ সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু সাজ্জাদও হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসের মতো হেডে বলের যোগসূত্র খুঁজে পেতে গিয়ে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেললে গোল শোধ করার সুযোগ মাঠেই মারা পড়ে। পরবর্তীতে আর কোনো গোল না হলে ৩-১ গোলে জয় পায় নেপাল।

Previous articleজামালদের নেপাল পরীক্ষা আজ!
Next articleসেনাবাহিনীর বিশাল আকারের সংবর্ধনায় সিক্ত সাবিনারা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here